ধর্ষকদের বিচার নিশ্চিতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে

0

গণপরিবহনে আবারো নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। গত শুক্রবার রাতে ঢাকার কাছে সাভারের আশুলিয়ায় চলন্ত বাসে এক তরুণীকে দল বেঁধে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। অভিযুক্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তারের পর বাসটির চালক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। অন্য পাঁচজনকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। ভুক্তভোগী নারীর শারীরিক পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এ ঘটনায় প্রমাণ হয় দেশে নারী নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে। সমাজ যেন ক্রমেই বর্বরতার চরমে চলে যাচ্ছে। একই সঙ্গে দেশের সড়ক পরিবহনে নারীর নিরাপত্তার প্রশ্নটিও নতুন করে সামনে চলে আসছে।
দেশের গণপরিবহনে এর আগেও দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ২০১৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি মানিকগঞ্জে শুভেচ্ছা পরিবহনের চলন্ত একটি বাসে তরুণী ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ওই মামলায় বাসচালক ও চালকের সহযোগীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ২০১৫ সালের ১২ মে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে চলন্ত বাসে এক পোশাককর্মীকে ধর্ষণ করে ফেলে দেয় বাসচালক ও চালকের সহকারী। ঢাকায় এক গারো তরুণীকে চলন্ত মাইক্রোবাসে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ২০১৬ সালের ২৩ জানুয়ারি বরিশালে সেবা পরিবহনের একটি বাসে দুই বোনকে ধর্ষণ করে পাঁচ পরিবহনকর্মী। ওই বছরের ১ এপ্রিল টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী থেকে ঢাকাগামী বিনিময় পরিবহনের একটি বাসে ধর্ষণের শিকার হন এক পোশাককর্মী। পরে পুলিশ ওই বাসের তিন কর্মীকে গ্রেপ্তার করে। ২০১৭ সালের ৩ জানুয়ারি ময়মনসিংহের নান্দাইলে একটি বাসে এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে বাসচালকসহ তিন পরিবহনকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়। বাসচালককে ঘটনাস্থল থেকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করে জনগণ। ২০১৭ সালে টাঙ্গাইলের মধুপুর এলাকায় চলন্ত বাসে এক তরুণীকে দল বেঁধে ধর্ষণের পর তাঁকে ঘাড় মটকে হত্যা করে রাস্তার পাশে ফেলে দেওয়ার ঘটনা সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। দেশজুড়ে নারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বাসযাত্রী নারী এবং তার অভিভাবকরা শঙ্কিত হয়ে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে শুরুতেই প্রতিবাদী হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। তারা ব্যাপক জনমত সৃষ্টির পর বিভিন্ন সংগঠন রাস্তায় নামে। সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে প্রতিবাদ। দেশের বাইরেও এ খবরও প্রতিবাদ হয়। অতঃপর প্রশাসন সক্রিয় হলে ধর্ষকরা সতর্ক হয়। প্রায় বছর দেড়েক ধর্ষণ বন্ধ থাকার পর আবার ঘটলো সেই ঘটনা।
চলন্ত বাসে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা দেশের সড়ক পরিবহনে নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন শঙ্কা তৈরি করেছে। এসব ন্যাক্কারজনক ঘটনা পুরো পরিবহন খাত সম্পর্কে মানুষের মনে খুব নেতিবাচক ধারণার জন্ম দেবে। এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে বাসমালিকদেরও কঠোর ভূমিকা নিতে হবে। নিজেদের গাড়ির কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে তার অতীত ইতিহাস ও পূর্বপরিচয় নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কর্মীদের এসব ন্যাক্কারজনক কাজের জন্য মালিকও ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। শ্রমিক সংগঠনগুলোরও দায় রয়েছে। সেই সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে দ্রুত বিচার। এক্ষেত্রে নারীবাদী সংগঠনসহ রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুকে সোচ্চার হতে হবে। প্রয়োজনে ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি নিতে হবে।