টিকার দ্বিতীয় ডোজ : অপেক্ষায় ১৫ লাখ মানুষ

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ টিকার মজুত দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। প্রথম ডোজ নেয়া সবাই এখনই দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারছেন না। প্রায় ১৫ লাখ মানুষের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি কোভিশিল্ড টিকা পেতে দেরি হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। টিকার মজুত এই সপ্তাহের পর শেষ হওয়ার কারণেই দেরি হবে বলে জানানো হয়। তবে ১২ থেকে ১৬ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ পেয়ে যাবে বলেও আশাবাদী অধিদপ্তর। এদিকে, গতকাল দেশে করোনার শনাক্ত বেড়েছে। কমেছে মৃত্যু। দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরো ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হলো ১২ হাজার ৩৭৬ জনের।
২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৩৫৪ জন। এখন পর্যন্ত শনাক্ত হলেন ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৮০ জন। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৮৯৯ জন এবং এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৭ জন। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনার নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৫ হাজার ১৮২টি। অ্যান্টিজেন টেস্টসহ নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৫ হাজার ২০৫টি। এখন পর্যন্ত ৫৮ লাখ ২০ হাজার ৬১২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৮ দশমিক ৯০ শতাংশ এবং এখন পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯২ দশমিক ৬০ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ২০ জন পুরুষ এবং নারী ৮ জন। এখন পর্যন্ত পুরুষ ৮ হাজার ৯৪৮ জন এবং নারী মৃত্যুবরণ করেছেন ৩ হাজার ৪২৮ জন। বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, মারা যাওয়াদের মধ্যে ৬০ বছরের উপরে রয়েছেন ১৪ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১০ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৩ জন এবং ৩১ থেকে ৪০ বছরের ১ জন। বিভাগ বিশ্লেষণে দেখা যায়, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ঢাকা বিভাগেই মারা গেছেন ১০ জন, চট্টগ্রামে ৭ জন, বরিশালে ৩ জন, সিলেটে ৫ জন, রংপুরে ২ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১ জন। ২৪ ঘণ্টায় সরকারি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন ২৪ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ৩ জন এবং বাসায় ১ জন। এই সপ্তাহের পর টিকার মজুত শেষ: প্রথম ডোজ নেয়া সবাই এখনই দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারছেন না। ১৫ লাখের কাছাকাছি মানুষের অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি কোভিশিল্ড টিকা পেতে দেরি হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। টিকার মজুত এই সপ্তাহের পর শেষ হওয়ার কারণেই দেরি হবে বলে জানানো হয়। তবে ১২ থেকে ১৬ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ পেয়ে যাবে বলেও আশাবাদী অধিদপ্তর। রোববার অনলাইন বুলেটিনে এ কথা বলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম। তবে ঠিক কবে নাগাদ টিকা শেষ হয়ে যাবে, এমন প্রশ্নে ডা. নাজমুল বলেন, এই সপ্তাহের পর টিকার মজুত একেবারেই শেষ হয়ে যাবে। তবে সরকার যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কাছে থাকা বাড়তি মজুত থেকে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রেজেনেকার এই টিকা আনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, আলোচনা চলছে। আমরা আশাবাদী, কোনো না কোনোভাবে এই উৎসগুলো থেকে দেশের চাহিদা অনুযায়ী এই টিকা সংগ্রহ করতে পারবো। তিনি বলেন, আমাদের কাছে আর খুব বেশি টিকা নেই। যেসব কেন্দ্রে টিকার জন্য কম মানুষ নিবন্ধন করেছে তারা হয়তো কয়েকদিন টিকা দেয়া চালিয়ে যেতে পারবে, কিন্তু যেসব কেন্দ্রে নিবন্ধন অনেক বেশি ছিল সেই কেন্দ্রগুলোতে কার্যক্রম চালানো সম্ভব হবে না। মিক্সড ভ্যাকসিন দেয়ার অর্থাৎ এক কোম্পানির প্রথম ডোজ দেয়ার পর আরেক কোম্পানির দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার সিদ্ধান্ত হচ্ছে কিনা, প্রশ্নে নাজমুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে উত্তর, না। এখন পর্যন্ত এ রকম কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, যদি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, এফডিএসহ অন্যদের থেকে যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায় তখন সেটি বিবেচনা করা হবে।
টিকা মজুত ৩ লাখ ৬৪ হাজার ডোজ: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪০ লাখ ১৫ হাজার ৫২২ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় মিলে টিকা দেয়া হয়েছে ৯৮ লাখ ৩৫ হাজার ৪৯৩ ডোজ। অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিতরণ করা টিকা বাদ দিলে হাতে মজুত আছে মাত্র ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৫০৭ ডোজ। ঘাটতি টিকার পরিমাণ ১৪ লাখ ৩৯ হাজার ৯৪২ ডোজ। অন্যদিকে কয়েকদিন বন্ধ থাকার পর গতকাল আবার প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫৯ জন। তারা সকলেই ঢাকা মহানগরের বিএনএস হাজী মহসীন কেন্দ্রে নিয়েছেন। এ পর্যন্ত দেশে মোট প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৯৭১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩৬ লাখ ৯ হাজার ২৯ জন এবং নারী ২২ লাখ ১০ হাজার ৯৪২ জন। অন্যদিকে অনলাইনে নিবন্ধনও ২রা মে’র পর থেকে বন্ধ রয়েছে। এ পর্যন্ত মোট নিবন্ধন করেছেন ৭২ লাখ ৪৮ হাজার ৮২৯ জন।
প্রসঙ্গত, গত ২৭শে জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে গণটিকাদান শুরু হয় ৭ই ফেব্রুয়ারি থেকে। আর দ্বিতীয় ডোজ শুরু হয় ৮ই এপ্রিল থেকে। দেশে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা এবং উপহার পাওয়া মিলে এ পর্যন্ত টিকা এসেছে এক কোটি দুই লাখ ডোজ। এ ছাড়া এ মাসের ১২ তারিখে চীনের কাছ থেকে উপহার পাওয়া টিকার পরিমাণ ৫ লাখ ডোজ। যা আগামী ২৫শে মে ঢাকায় ৪টি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হবে।