আজ পবিত্র শবে বরাত

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আজ সোমবার দিবাগত রাতে পবিত্র শবে বরাত। যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় সারাদেশে দিনটি পালিত হবে। হিজরি বর্ষের শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটিকে মুসলমানরা সৌভাগ্যের রজনী হিসেবে পালন করে থাকেন। মহিমান্বিত এ রাতে মহান আল্লাহ তার বান্দাদের ভাগ্য নির্ধারণ করেন। মুসলমানরা এ রাত আল্লাহর রহমত ও নৈকট্যলাভের আশায় নফল নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, জিকিরসহ বিভিন্ন ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে অতিবাহিত করেন।
গত ১৪ মার্চ বাংলাদেশের আকাশে ১৪৪২ হিজরি সনের পবিত্র শাবান মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। ফলে ১৫ মার্চ পবিত্র রজব মাস ৩০ দিন পূর্ণ হয়। সে হিসেবে ১৬ মার্চ মঙ্গলবার থেকে পবিত্র শাবান মাস গণনা শুরু হয়। আর ১৪ শাবান হবে ২৯ মার্চ। করোনা মহামারির কারণে গত বছর ঘরে ইবাদত করার আহ্বান জানিয়েছিল ধর্ম মন্ত্রণালয়। তবে এবার এমন কোনও নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তবে ৩০ মার্চ মঙ্গলবার শবেবরাত উপলক্ষে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। শবে বরাত মুসলামানদের কাছে লাইলাতুল বারাত বা সৌভাগ্যের রজনী হিসেবে পরিচিত। আরবি শব্দ লাইলা অর্থ রাত। ফার্সি শব্দ শব অর্থও রাত। আর বরাত অর্থ মুক্তি বা নিষ্কৃতি। শাবান মাসের ১৪ তারিখের এ রাতকে মুক্তির রাত বা নাজাতের রাত হিসেবে অবহিত করা হয়। এ রাতে সৃষ্টিকর্তার কাছে পাপ থেকে মুক্তি কামনা করে প্রার্থনা করা হয়। এ রাতে অনেকেই নফল নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত ও দোয়া করে থাকেন। এছাড়া অনেকেই এ রাতে বাবা-মাসহ স্বজনদের কবর জিয়ারত ও দোয়া করেন। শাবান মাস আল্লাহর কাছে অধিক মর্যাদাপূর্ণ মাস। এ মাসকে রমজানের প্রস্তুতির মাস বলা হয়েছে। নবি করিম (স.) অন্য মাসের তুলনায় এ মাসে বেশি নফল রোজা পালন করতেন। শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ (স.)-এর সঙ্গে কোনো এক রাতে রাত্রিযাপন করছিলাম। এক সময় আমি তাকে বিছানায় না পেয়ে মনে করলাম তিনি হয়তো অন্য কোনো স্ত্রীর ঘরে গিয়েছেন। আমি তাকে খুঁজতে বের হলাম। গিয়ে দেখি তিনি জান্নাতুল বাকিতে কবরবাসীদের পাশে দাঁড়িয়ে অঝোর নয়নে কাঁদছেন। নবিজী আমাকে উদ্দেশ করে বললেন হে আয়েশা! তুমি কি মনে করো, আল্লাহর রসুল তোমার ওপর বেইনসাফি করেছেন?’ আমি বললাম ইয়া রসুলুল্লাহ! আপনাকে বিছানায় না পেয়ে ধারণা করেছিলাম আপনি হয়তো অন্য কোনো স্ত্রীর ঘরে গিয়েছেন। এরপর রসুল (স.) বললেন, হে আয়েশা! আজকের রাত সম্পর্কে তুমি জেনে রেখ, মহান আল্লাহ এই রাতে দুনিয়ার প্রথম আকাশে অবতীর্ণ হয়ে দুনিয়াবাসীর ওপর তাঁর খাস রহমত নাজিল করেন। কালো গোত্রের মেষের গায়ে যত পশম রয়েছে তার চেয়েও অধিক সংখ্যক বান্দাকে তিনি মা করেন। (সুনানে তিরমিযি ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ১৫৬)। ইবনে মাজাহ্ শরিফের হজরত আলী (রা) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন যখন শাবানের মধ্য রজনী আসবে তখন তোমরা সে রাতে কিয়াম তথা নামাজ পড়বে, রাত জেগে ইবাদত করবে এবং পরদিন রোজা রাখবে। কেননা সে দিন সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে এসে বান্দাকে এই বলে ডাকতে থাকেন আছো কি কেউ মা প্রার্থনাকারী, যাকে আমি মা করব। আছো কি কেউ রিজিক প্রার্থনাকারী, যাকে আমি রিজিক দিব। আছো কি কেউ বিপদগ্রস্ত, যাকে আমি বিপদ থেকে উদ্ধার করব। এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহ ঘোষণা দিতে থাকেন। (হাদিস নম্বর ১৩৮৪) শবে বরাতে যেমন পালনীয় বিষয় রয়েছে, তেমনি এ রাতে কিছু বর্জনীয় বিষয়ও রয়েছে। এ রাতে আতশবাজি, হইহুল্লোড়, অহেতুক কাজে লিপ্ত থাকা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অন্যের ব্যাঘাত সৃষ্টি করে নিজে কোনো ইবাদত করা যাবে না বলে হাদিসে বর্ণনা রয়েছে।