মোদির আগমন ঘিরে সাতক্ষীরায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়

0

সাতক্ষীরা সংবাদদাতা॥ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাতক্ষীরার শ্যামনগরে আগমন উপলক্ষে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বিদেশি অতিথির এ সফর সফল করতে ঘুম হারাম হয়ে গেছে জেলা প্রশাসনেরও। রাতদিন কাজ করছেন মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। মোদির সাতক্ষীরায় আগমন উপলক্ষে গড়ে তোলা হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাবেষ্টনী। ইতোমধ্যে শ্যামনগর উপজেলার যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরের পাঁচ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে বিপুলসংখ্যাক পোশাকধারী পুলিশসহ দৃশ্যমান তিন স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ব্যক্তি শনাক্তকরণে অত্যাধুনিক মেশিন ব্যবহৃত হচ্ছে। ইলেকট্রিক যন্ত্রের সাহায্যে মানুষের আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করে রাখছে র‍্যাব।
অন্যদিকে শ্যামনগর উপজেলাসহ জেলাজুড়ে সাদা পোশাকে পৃথক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্যদের সমন্বয়ে থাকছে বহুমুখী নিরাপত্তা ব্যবস্থা। থাকবেন পিজিআর (প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট), এসএসএফের (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) কর্মকর্তা/সদস্যরা। চিকিৎসকসহ ২৪ ঘণ্টা লাইফ সিকিউরিটি সিস্টেমসহ উন্নতমানের অ্যাম্বুলেন্স ও অস্থায়ী হাসপাতালও নির্মাণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে দুদিনের বাংলাদেশ সফরে আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এরই অংশ হিসেবে তিনি ২৭ মার্চ সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় অবস্থিত যশোরেশ্বরী কালীমন্দির পরিদর্শন করবেন। সেখানে তিনি পূজা ও প্রার্থনায় অংশ নেবেন। র‍্যাব-৬ সাতক্ষীরা ক্যাম্প সূত্রে জানা গেছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সাতক্ষীরা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করতে ব্যাপক নিরাপত্তা পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বিধানে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক, সাতক্ষীরা-মুন্সিগঞ্জ সড়ক, সমগ্র সাতক্ষীরা জেলা, শ্যামনগর উপজেলা এলাকা এবং যশোরেশ্বরী কালীমন্দির সংলগ্ন এলাকায় দিবা-রাত্রি র‍্যাবের চৌকস সদস্যদের মাধ্যমে মহড়া, টহল ও তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। যেকোনো ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড রোধে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে তথা ব্যক্তি শনাক্তকরণে অত্যাধুনিক মেশিন ব্যবহৃত হচ্ছে। এর পাশাপাশি প্রশিক্ষিত র‍্যাব, গোয়েন্দা সদস্যরা সাদা পোশাকে ডিউটির মাধ্যমে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধিসহ অগ্রিম গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করছেন।
নিরপত্তার বিষয়ে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় শ্যামনগরের যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরের পাঁচ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে ১৩০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে। জেলা সদরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানসহ গোটা শ্যামনগর উপজেলা সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের বিপুলসংখ্যাক সদস্য ও কর্মকর্তারা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দায়িত্বে নিয়োজিত আছে। তিনি বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কঠোর অবস্থান অব্যাহত থাকবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিঘ্নতা সৃষ্টিকারী যে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে কঠোর হস্তে দমন করা হবে। সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল জানান, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনকে ঘিরে ইতোমধ্যে সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। হ্যালিপ্যাড থেকে যশোরেশ্বরী কালীমন্দির পর্যন্ত সড়কের দুই ধারে নান্দনিকভাবে সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে। যা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর দেখে খুবই ভালো লাগবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরসহ সংস্কার করা হয়েছে কালীমন্দির সংলগ্ন সড়ক। নির্মাণ করা হয়েছে চারটি হ্যালিপ্যাড। তিনি আরও বলেন, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশ্রামের বিষয়টি মাথায় রেখে স্থানীয় ভূমি অফিসকেও সাজানো হচ্ছে নতুন আঙ্গিকে। নরেন্দ্র মোদি আগামী ২৭ মার্চ সকাল ৯টা ৪৫ মিনিট শ্যামনগর এ সোবাহান মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে নবনির্মিত হ্যালিপ্যাডে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার যোগে অবতরন করবেন। এরপর তিনি সকাল ৯টা ৫০ মিনিট যশোরেশ্বরী দেবীমন্দিরে পূজা দেয়ার জন্য প্রবেশ করবেন। সেখানে তিনি মাত্র ২০ মিনিট থাকার পর ১০টা ১০ মিনিটে মন্দির ত্যাগ করবেন। এরপর ১০ টা ১৫ মিনিট হ্যালিকপ্টারযোগে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশে রওনা হবেন। সেখানে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ পরিদর্শন ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। জেলা প্রশাসক জানান, নরেন্দ্র মোদির আগমনকে ঘিরে নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা হয়েছে গোটা সাতক্ষীরা। নিরাপত্তার বিষয়টি দেখছে এসএসএফ। তাদের সঙ্গে রয়েছেন আইনশৃংখলা বাহিনীর অন্যান্য সদস্যরা।