চৌগাছা নির্বাচনের পরদিনও ইভিএমএ নিয়ে সরব ভোটাররা

0

স্টাফ রিপোর্টার চৌগাছা (যশোর) ॥ সদ্য সমাপ্ত যশোরের চৌগাছা পৌরসভা নির্বাচনে ইলেকট্রনিক্্র ভোটিং মেশিন ইভিএমএ ভোট গ্রহন নিয়ে আলোচনা সমালোচনা যেন শেষ হচ্ছে না। ভোটের দিন থেকে শুরু করে গতকাল সোমবারও পৌর এলাকার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, রাস্তা ঘাট, মাঠে ঘটে সর্বত্রই চলেছে আলোচনা। কিছু ভোটার ইভিএমএ ভোট দিয়ে বেশ স্বচ্ছন্দবোধ করলেও অধিকাংশ ভোটারের মাঝে ইভিএম নিয়ে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ভোট দিতে বিলম্ব হওয়া, ইভিএম মেশিন ভোট গ্রহনের পর সংকেত না দেয়া, নিজের ভোটটি নির্ধারিত প্রতীকে গেছে কিনা এ ধরনের নানা কথা অনেকের মুখেমুখে। সাধারণ ভোটাররা পরবর্তীতে চৌগাছার যে কোন নির্বাচনে আগের মত ব্যালটে ভোট গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ঠদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
রবিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে চৌগাছা পৌরসভার বহু কাংখিত নির্বাচন। এই নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয় লাভ করেছেন বর্তমান মেয়র নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নূর উদ্দীন আল মামুন হিমেল। ৯টি সাধারণ ওয়ার্ডের মধ্যে ৩ ও ৭ নং ওয়ার্ডে এসেছে নতুন দুই মুখ আর সংরক্ষিত মহিলা আসনেও পাশ করেছেন সাবেক কাউন্সিলর ফাতেমা খাতুন। পৌরসভা নির্বাচনে এবারই প্রথম ইভিএমএ ভোট গ্রহন করা হয়েছে। তাই ইভিএমএ ভোট দেয়া নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে নানা জল্পনা কল্পনা।
ভোটাররা বলেন, এ অঞ্চলের মানুষ এর আগে কখনও এই মেশিন চোখেও দেখেনি আর ভোট দেয়া তো দুরের কথা। যার কারনে ভোটের আগে থেকেই তাদের মাঝে এক ধরনের শংকা দেখা দেয়। ভোটের আগে নির্বাচন কর্তৃপক্ষ ভোটারদের জন্য মাত্র ১ দিনের মগ ভোটের ব্যবস্থা করেন। সেখানে সাধারণ ভোটারের উপস্থিতি ছিল খুবই কম বলে জানান স্থানীয়রা। ফলে ইভিএমএ ভোট কেমন হবে, আদৌ ভোট দিতে পারবে কিনা সেই শংকা বরাবরই ছিল। ভোট গ্রহনের প্রথম দিকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে দায়িত্বরত কর্তৃপক্ষদের বেশ বেগ পেতে হয় বলেও অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে।
পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের এলাহী বক্্র হাফেজিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে প্রথম ভোট দেন কলেজ শিক্ষক এনামুল কাদির। তিনি বলেন, ভোট দিতে যেয়ে কোন সমস্যা হয় কিনা এ নিয়ে বেশ দুঃশ্চিন্তায় ছিলাম। তবে সেখানে দায়িত্বরতরা সাহায্য করায় সমস্যা হয়নি। মৃধাপাড়া মহিলা কলেজ কেন্দ্রে একজন বয়স্ক ভোটার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তিনি ভোট দিতে যেয়ে আঙ্গুলের ছাপ না মেলায় প্রথমে ভোট দিতে পারেননি। তবে বিকেলে পুনরায় কেন্দ্রে যেয়ে ভোটটি দিতে পেরে স্বস্তি পেয়েছি। তবে ব্যালটে সীল মারলে নিশ্চিত আমার পছন্দের প্রার্থীকেই ভোট দিলাম, কিন্তু বোতাম টিপে ভোট, তাই কোথায় গেল, কে পেল আমার মূল্যবান ভোট এই ধরনের ভাবনা ভিতরে কাজ করেছে। সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে তরিকুল ইসলাম পৌর কলেজ কেন্দ্রের একটি মহিলা বুথে ভোটিং মেশিনে সাময়িক সমস্যা দেখা দেয় বলে ভোটাররা জানান। তবে তাৎক্ষনিক দায়িত্বরত কর্মকর্তারা ব্যবস্থা নেয়ায় এ সমস্যা বেশিক্ষন থাকেনি। এই কেন্দ্রের ভোটার আবু হোসেন বলেন, আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে নিশ্চিত হওয়ার পর বুথে যেয়ে মেশিনের বুতামে চাপ দিতে থাকি কিন্তু কোন আওয়াজ হয়না। পরে সেখানে কর্মরত একজন আমাকে সাহায্য করেন।
সবুজ কুড়ি কিন্ডর স্কুল কেন্দ্রে ভোটার নাছিমা সুলতানা, গীতা রানী জানান, বোতাম টিপে ভোট এই প্রথম দিলাম। ভোটারকার্ড দেয়ার পর নম্বর টিপে ভুল হওয়ায় বেশ কিছু সময় সেখানে দাড়িয়ে থাকতে হয়। পরে সঠিক নাম্বার দেয়ার পর আমরা ভোট দিতে পেরেছি। মেশিনে প্রতীক তার পাশে বোতাম সব কিছুই ঠিক আছে, তারপরও বলব এটি অন্ধকারের ভোট, কেননা বোতাম টিপলেই ভোট হয়ে গেল, আসলে কি ভোটটি আমার পছন্দের প্রতীকে গেছে ? এ ধরনের নানা কথা ভোটের দিন থেকে শুরু করে গতকালও চলছে গোটা পৌর এলাকা জুড়ে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সাধারণ ভোটার বলেন, মেশিন না তারা ব্যালটে ভোট দিতে পারলে বেশি খুশি হত। তাই আগামীতে চৌগাছায় যে নির্বাচনই হোক না কেন তা যেন ব্যালটে অনুষ্ঠিত হয় তার সুব্যস্থা গ্রহনে ভোটাররা সংশ্লিষ্ঠদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ সেলিম রেজা বলেন, ইভিএমএ ভোট প্রদানে ভোটারদের কোন সমস্যায় পড়তে হয়নি। ভোট গ্রহনের সারা দিনের মধ্যে ১০টি কেন্দ্রের একটি কেন্দ্র হতেও কোন অভিযোগও আসেনি। সকল বুথে প্রার্থীদের এজেন্টের সরব উপস্থিতিতে ভোটারা স্বাচ্ছন্দে তাদের ভোটাধিকার প্রদান করেছেন। অনেকে না বুঝেই ইভিএম সম্পর্কে নানা কথা বলছেন। সব মিলিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু পরিবেশে আমরা পৌর নির্বাচন সম্পন্ন করতে পেরেছি।