বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা আজ

0

সুন্দর সাহা॥ আজ মাঘী শুক্লা পঞ্চমী। শ্রীশ্রী সরস্বতী পূজা। শুভ্র-বসনা বিদ্যার দেবী সরস্বতী। তাই আজকের এই শিশির-স্নাত ঊষালগ্নে দেবী তাঁর অগণিত ভক্তের মাঝে শুভাগমন করবেন। ঘরে ঘরে পূজিত হবেন বাগদেবী সরস্বতী। মণ্ডপে-মণ্ডপে মেতে উঠবে পড়–য়ারা। নানা আচার-উপাচার রয়েছে সরস্বতী পুজোয়। সঠিক মন্ত্রোচ্চারণে, পুষ্পাঞ্জলিতে পুজোর আবহই হয়ে ওঠে অন্যরকম। সকালে স্নান সেরে শুদ্ধাচারে দেবীর আসন পাতার পরে যথাবিধ নিয়মে শুরু করতে হয় পুজো।
দেবীর আগমনের এই শুভ লগ্নে সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ পুলকিত চিত্তে দেবী আরাধনার আয়োজন করেছে। বিদ্যা দেবীর অর্চনায় উন্মোচিত হয় বিদ্যার্থীর সকল মেধা। মেধাই বিদ্যার্থীকে জ্ঞান দানে উদ্ভাসিত করে অধিকতর। সাধকের জিহ্বাতে বাক-শক্তি রূপে এ দেবী প্রকাশিতা। এভাবে তিনি বাগ দেবী। সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ পঞ্চমী তিথিতে বিদ্যা ও জ্ঞানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী সরস্বতীর চরণে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন। সনাতন ধর্মাবম্বলীদের অন্যতম প্রধান উৎসব এই সরস্বতী পূজা। ধর্মীয় বিধান অনুসারে মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে এই পূজা পালনের দিন। অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করতে কল্যাণময়ী দেবীর চরণে প্রণতি জানাবেন তাঁরা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতে দেবী সরস্বতী সত্য, ন্যায় ও জ্ঞানালোকের প্রতীক। বিদ্যা, বাণী ও সুরের অধিষ্ঠাত্রী। ‘সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে/বিশ্বরূপে বিশালাক্ষী বিদ্যংদেহী নমোহস্তুতে’ সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এই মন্ত্র উচ্চারণ করে বিদ্যা ও জ্ঞান অর্জনের জন্য দেবী সরস্বতীর অর্চনা করবেন।
সরস্বতী মূলত বৈদিক দেবী। বেদে সরস্বতী প্রধানত নদীর অধিষ্ঠাত্রী দেবী। সরস শব্দের অর্থ জল। অতএব সরস্বতী শব্দের আদি অর্থ হলো জলবতী অর্থাৎ নদী। সরস্বতী শব্দটির বুৎপত্তিগত অর্থে সরস+বতু আর স্ত্রী লিঙ্গে ‘ঈ’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে সরস্বতী। তিনি বিদ্যাদেবী, জ্ঞানদায়িনী, বীণাপাণি, কুলপ্রিয়া, পলাশপ্রিয়া প্রভৃতি নামে অভিহিতা। তাঁর এক হাতে বীণা অন্য হাতে পুস্তক। অপরদিকে সরস্বতী নদীর ধারেই প্রাচীন ঋষিগণ তপস্যা করে “বেদ” নামক অলৌকিক জ্ঞান রাশিকে অনুভব করেছেন। দেবী সরস্বতী ও তাঁর বাহন শুভ্র। এ শুভ্রতা প্রকাশত্বিক। আবার সরস্বতী প্রকৃতিতে নদীরূপে প্রাণ সঞ্চারিনী হয়েছেন। পৃথিবীকে শস্য শ্যামলা করে প্রাণীকুলকে রক্ষা করছেন।
মৎস্যপুরাণে বলা আছে, পরমাত্মার মুখ থেকে নির্গত শক্তিদের মধ্যে দেবী সরস্বতী সর্বশ্রেষ্ঠা। তাঁর রূপ দেবীর মতো শ্রর্দ্ধাহা হয়েও প্রাপণীয়ার মতো আর্কষক। তিনি সর্বশুক্লা বা মহাশ্বেতা, বীণাধারিণী, কেশরাজিতে চন্দ্রশোভাময়ী, শ্রুতি ও শাস্ত্রে পরাঙ্গা এবং সৃজন-প্রেরণদাত্রী ও পদ্মাসনা। ধর্মগ্রন্থ পুরাণে বলা আছে, “শ্রী” দেবী মাঘের শুক্লাপঞ্চমীতে দেবসেনারূপে কার্তিকের সঙ্গে পরিণীতা হন। অর্থাৎ “শ্রী” দেবীর শুভদিন এবং সূর্যকন্যা সরস্বতীর উপাসনার কাল একত্রে সমন্বিত হয়ে শ্রীপঞ্চমী রূপে সুস্থিত হয়েছে। সরস্বতী পূজা উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায় বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা বাণী অর্চনাসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। যশোরসহ সারা দেশের মন্দির ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পূজা ছাড়াও অন্য অনুষ্ঠানমালায় আছে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ বিতরণ, ধর্মীয় আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সন্ধ্যা আরতি, আলোকসজ্জা প্রভৃতি। সনাতনী প্রতিটি পরিবার গুরুত্বের সঙ্গে সরস্বতী পূজা উদযাপন করে থাকে। শিক্ষার্থীরা শিক্ষায় সফলকাম হওয়ার আশায় অঞ্জলি দেন প্রতিমার সম্মুখে। এ সময় শিক্ষার্থীরা খাতা-কলম রাখেন প্রতিমার পদতলে। পূজা শেষে সেসব নিয়ে বাড়ি অথবা হলে ফেরেন আনন্দচিত্তে। পূজা শেষে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের হাতেখড়ি অনুষ্ঠান হয়ে থাকে পূজা মণ্ডপেই। পুরোহিতের কাছে হাতেখড়ি দিয়ে শিশুরা লেখাপড়ার পর্ব শুরু করে।