স্বর্ণ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে

0

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে জমা পড়েছে ৭১৫ কেজি স্বর্ণ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশ হয়েছে ঢাকার একটি দৈনিকে। এত বিপুল স্বর্ণের মধ্যে রয়েছে বার ও স্বর্ণালঙ্কার। তবে, এই স্বর্ণ বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব নয়। এসবই জব্দ করা হয়েছে দেশের প্রধান বিমানবন্দর শাহজালালের মাধ্যমে পাচারের সময়। এর কিছু স্বর্ণ পাওয়া গেছে পরিত্যক্ত অবস্থায়। আর কিছু স্বর্ণ ব্যক্তিসহ ধরা পড়েছে বিমানবন্দরে। এসব জব্দকৃত স্বর্ণ নিয়ে ফৌজদারি মামলা-মোকদ্দমাও চলমান। ফলে, এ স্বর্ণ মামলার আলামত। উল্লেখ্য, শাহজালাল বিমানবন্দরের মাধ্যমে স্বর্ণ চোরাচালানের বিষয়টি সুবিদিত। এর সঙ্গে বেসামরিক বিমান চলাচল সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তি ও এয়ারলাইন্স জড়িত। সম্প্রতি শাহজালালে কয়েকজনের বিরুদ্ধে স্বর্ণ চোরাচালানের প্রমাণ পাওয়ায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও গৃহীত হয়েছে। স্বর্ণের বার ও স্বর্ণালঙ্কার বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রাখা হয়েছে সুরতি ও নিরাপদ বিবেচনায়। নিকট অতীতে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে গচ্ছিত স্বর্ণের পরিমাণ নিয়ে গরমিলের অভিযোগও উঠেছে। আপাতত সে সমস্যার সমাধান করে নতুন নিয়মে রাখা হয়েছে ৭২৫ কেজি স্বর্ণ। এর বাইরেও বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা হাতিয়ে নিয়ে বিদেশে পাচারের অভিযোগ আছে। যার সিংহভাগ আজও উদ্ধার হয়নি। সে অবস্থায় সুনিশ্চিত সাইবার নিরাপত্তাসহ ভল্টের সুরায় বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপ আরও সচেতন সতর্ক ও সাবধান হবে নিশ্চয়ই। সময়ে সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে স্বর্ণ বিক্রিও করে থাকে স্থানীয় বাজারে দেশীয় স্বর্ণালঙ্কার প্রস্তুতকারকদের কাছে। তবে অজ্ঞাত কারণে তাতে খুব কমই সাড়া মেলে। কেন যেন একশ্রেণীর স্বর্ণলঙ্কার ব্যবসায়ী ও প্রস্তুতকারীর বেশি আগ্রহ থাকে বেআইনিভাবে আনা চোরাচালানকৃত স্বর্ণ এবং স্বর্ণের গহনার ওপর।
২০১৯ সালে জুনের তৃতীয় সপ্তাহে দেশে প্রথমবারের মতো তিন দিনব্যাপী স্বর্ণ করমেলা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সহযোগিতায় এই মেলার আয়োজন করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। উল্লেখ্য, দেশে প্রায় সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে স্বর্ণের গহনার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে সামাজিক ব্যবস্থা ও প্রথার অঙ্গ হিসেবে। যে কারণে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ছোট-বড় স্বর্ণ তথা গহনার দোকান। আজকাল স্বর্ণ-রুপার গহনার পাশাপাশি হীরা ও প্লাটিনামের গহনাও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অথচ দেশে বৈধভাবে আদৌ কোন স্বর্ণ আমদানি হয় না, হীরা ও প্লাটিনাম তো দূরের কথা। স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের মতে দেশে প্রতিবছর স্বর্ণের চাহিদা ৩০ থেকে ৪০ টন। যার প্রায় পুরোটাই এসে থাকে অবৈধ পথে ও উপায়ে। সামান্য কিছু আসে প্রবাসী শ্রমজীবীদের মাধ্যমে। কিছু স্বর্ণ আবার বাংলাদেশের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশেও পাচার হয়ে যায়। এর কুফল যা হচ্ছে তা হলো, প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয় সরকার। জুয়েলার সমিতির দীর্ঘদিনের দাবির প্রেেিত ২০১৯ সালের ৩ অক্টোবর স্বর্ণ নীতিমালা অনুমোদন করে সরকার। অবৈধ স্বর্ণ বৈধ করার জন্য ২৮ মে এনবিআর একটি প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে, প্রতি ভরি স্বর্ণ ও অলঙ্কারে এক হাজার টাকা, প্রতি ক্যারেট কাট ও পলিশড হীরায় ৬ হাজার টাকা এবং প্রতি ভরি রুপায় ৫০ টাকা টাকা আয়কর দিয়ে এসব বৈধ করা যাবে। তারপরও কেউ বৈধ করতে আসে না। আমরা মনে করি, অবৈধ স্বর্ণের মালিক ও চোরাচালানীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।