পাটবীজ উৎপাদনে স্বনির্ভরতা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ মানসম্মত পাটবীজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে পাঁচবছরের জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছে বাংলাদেশ। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত পাটবীজ উৎপাদনে স্বনির্ভর হবে। প্রয়োজনীয় পাটবীজ সংগ্রহে আমদানি নির্ভরতা আর থাকবে না। রোডম্যাপ বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে ২০২১ সাল থেকে। ধাপে ধাপে তা আগামী পাঁচবছরে শতভাগ বাস্তবায়ন করা হবে। ইতিমধ্যেই কৃষি মন্ত্রণালয়ের বীজ অণুবিভাগ রোডম্যাপটি চূড়ান্ত করেছে। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে দেশে প্রায় ৬ থেকে ৭ লাখ হেক্টর জমিতে দেশি, ও তোষা এই দুই জাতের পাট চাষ করা হয়। তবে কেনাফ ও মেসতা জাতের পাটও বাংলাদেশে চাষ করা হয়, যার মান ততটা উন্নত নয়। বাংলাদেশে সব মিলিয়ে প্রতিবছর ৭০ থেকে ৭৫ লাখ বেল পাট উৎপাদন হয়। বাংলাদেশে এই পরিমাণ পাট উৎপাদনে পাটবীজের প্রয়োজন ৬ থেকে ৭ হাজার মেট্রিক টন। চাহিদার ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ পাটবীজ আমদানি করা হয় ভারত থেকে। এর মধ্যে তোষাপাট উন্নত জাতের হওয়ায় এর চাহিদা ব্যাপক। যা জেআর-৫২৪ জাতের পাট নামে পরিচিত।
সূত্র আরও জানায়, ভারত থেকে যে পাটবীজ আমদানি করা হয় সেটি জেআরও-৫২৪ জাতের। এটিই তোষাপাট নামে পরিচিত। এর বিকল্প হিসেবে গত ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) তোষা -৮ (রবি-১) নামে পাটের একটি নতুন জাত অবমুক্ত করেছে। এটি ভারতীয় তোষা জাতের পাটের চেয়েও উন্নত বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। নতুন জাত বলে কৃষকরা ভরসা রাখতে পারছে না দেশে উদ্ভাবিত নতুন তোষা-৮ জাতের পাট ও তার বীজের উপর। তারা আমদানিকৃত ভারতের জেআর-৫২৪ জাতের পাট চাষেই আগ্রহী বেশি। আমদানি নির্ভরতা কমাতে ভারতীয় জেআর-৫২৪ জাতের পাটের তুলনায় দেশে উদ্ভাবিত তোষা-৮ বা রবি-১ নামের পাটচাষে কৃষকদের লাভবান করতেই মূলত ৫ বছরের জন্য রোডম্যাপ তৈরি করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পাবনার চাটমোহর উপজেলার পাটচাষি মোহম্মদ শাহীন আহমেদ বলেন, নতুন বীজ রোপণ করে ঝুঁকি নিতে চাই না, যদি ফসল মার খায়? এ কারণেই ভারতীয় বীজের প্রতি আগ্রহ বেশি। আমরা তো ভারতীয় বীজের বিকল্প অন্য কোনও বীজ লাগাইনি। নতুন জাতের রবি-১ বীজটি এখনও সেভাবে কৃষকদের মাঝে পৌঁছাতে পারেনি সরকার। এই বীজের প্রতি আস্থা আসতে কিছুটা সময় লাগবে। যদি বাংলাদেশের উদ্ভাবিত তোষাপাট-৮ বা রবি-১ জাতের পাটবীজ ভালো হয় তাহলে আমরা তা ব্যবহার করবো। কারণ আমদানিকৃত বীজের দাম বেশি।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের বীজ অণুবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশে এক সময় দেশি পাটের বীজ দেশের কৃষকরাই উৎপাদন করতো। সাধারণত কৃষক পাট ক্ষেতের একাংশ পাট বীজ উৎপাদনের জন্য রাখতো। এ পদ্ধতিতে বীজ সংগ্রহে সময় লাগে ১০ থেকে ১১ মাস। এই সমস্যা সমাধানে বিজেআরআই ‘নাবী পাট বীজ উৎপাদন প্রযুক্তির’ মাধ্যমে বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাত্র এই চার মাসে উন্নত মানের বীজ উৎপাদনে সক্ষম। কিন্তু এই সময়ে মাঠে বেশি দামের রবিশস্য চাষ না করে পাটচাষে আগ্রহী হয় না কৃষক। ফলে চাহিদা বিবেচনায় তোষাপাট বীজ উৎপাদন বাড়েনি। এ কারণে বহুবছর ধরে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ে পাটবীজ আমদানি করে চাহিদা মিটিয়েছে বাংলাদেশ। যদি কোনও কারণে পাটবীজ আমদানি বাধাগ্রস্ত হয় তাহলে সারাবছরের জন্য অর্থকরী এই ফসলটির উৎপাদন হুমকির মুখে পড়ে। যা অর্থনীতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এ আশঙ্কা থেকে বেরিয়ে আসতেই অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে পাটবীজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করার উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার। এর ফলেই তোষা-৮ বা রবি-১ নামের পাটের জাত উদ্ভাবন করেছে বিজেআরআই। বিজেআরআই বলেছে, এই জাতের পাট ১৫ থেকে ২০ ফুট লম্বা হয় বলে উৎপাদনের পরিমাণ বেশি। এতে কৃষকরাই লাভবান হবেন।