অসিদের ৩৩৮ রানের জবাবে অতি সাবধানী ভারত

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ সিডনি টেস্টের দুই দিন শেষে বোঝার উপায় নেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ আছে কাদের হাতে। সমানে সমান লড়ছে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া। আগে ব্যাট করে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৩৩৮ রানে অলআউট হয়েছে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। জবাবে দ্বিতীয় দিন শেষে ভারতের সংগ্রহ ২ উইকেটে ৯৬ রান। অস্ট্রেলিয়া ৩৩৮ রান করতে খেলেছে ১০৫ ওভার, যেখানে মেইডেন ছিল ১৫টি ওভার। সিডনির উইকেটে যেকোনো ম্যাচের প্রথমদিকে ব্যাটসম্যানদের জন্য থাকে খানিক সুবিধা। সেটি কাজে লাগিয়েই ওভারপ্রতি তিনের বেশি গড়ে রান তুলেছে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু দ্বিতীয় দিনে ব্যাট করতে ঠিক অত সহজ হয়নি ভারতের কাজ।
স্বাগতিকদের করা ৩৩৮ রানের জবাবে ভারত দ্বিতীয় দিন পর্যন্ত খেলেছে ৪৫ ওভার, যেখানে মেইডেনের সংখ্যা ২২টি। অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক ওভারে কোনো রানই নিতে পারেনি তারা। তবে ভালো বিষয় হলো, সাবধানী ব্যাটিংয়ে দুইটির বেশি উইকেট হারায়নি তারা। তৃতীয় দিন চেতেশ্বর পুজারা ৫৩ বলে ৯ ও অজিঙ্কা রাহানে ৪০ বলে ৫ রান নিয়ে ব্যাট করতে নামবেন। দ্বিতীয় দিন শেষ সেশনে সাজঘরে ফিরে গেছেন ভারতের দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শুবমান গিল। দুজনের উদ্বোধনী জুটি ভেঙেছে ২৭তম ওভারে। প্রায় ১০ বছর পর এশিয়ার বাইরে খেলা কোনো টেস্টে ২০ ওভারের বেশি খেলেছে ভারতের উদ্বোধনী জুটি। নতুন বলের হুমকি পার করে দিয়ে রোহিত আউট হয়েছেন ২৬ রান করে। তবে আউট হওয়ার আগে ইনিংসের ১৬তম ওভারের দ্বিতীয় বলে নাথান লিয়নের বোলিংয়ে লংঅন দিয়ে ছক্কা হাঁকান রোহিত। এটিই ছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তার শততম ছক্কা। অসিদের বিপক্ষে আর কোনো ব্যাটসম্যান ৭০টি ছক্কাও হাঁকাতে পারেননি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬৩ ছক্কা ইংল্যান্ডের ইয়ন মরগ্যানের। রোহিত ত্রিশের আগে ফিরলেও, ব্যক্তিগত ফিফটি তুলে নেন তরুণ ওপেনার শুবমান। টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটিকে অবশ্য বেশিদূর নিতে পারেননি শুবমান। ফিফটি করার ঠিক পরের বলেই তিনি ফিরেছেন সাজঘরে। দিনের বাকি ৭৭ বল কোনো বিপদ ঘটতে দেননি পুজারা ও রাহানে।
এদিকে ম্যাচের প্রথম ইনিংসেই যেন ফলাফল ঠিক করে ফেলেছে অস্ট্রেলিয়া। ২০১১ থেকে ২০২০ পর্যন্ত সময়ে, ঘরের মাঠে খেলা টেস্টের প্রথম ইনিংসে অন্তত ৩০০ রান করার পর কোনো ম্যাচ হারেনি অস্ট্রেলিয়া। এমন ম্যাচের সংখ্যা ছিল ২৪টি। যেখানে অসিদের জয় ১৯টি আর ড্র বাকি পাঁচটি। এবার ঘরের মাঠে নতুন বছর তথা দশকের প্রথম ম্যাচের প্রথম ইনিংসেও ভারতের বিপক্ষে ৩০০ রানের দলীয় সংগ্রহ পার করেছে অস্ট্রেলিয়া। গত দশকের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে এ ম্যাচে অন্তত হারের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে স্বাগতিকদের। বড় জোর হয়তো ড্রয়ের জন্য খেলতে পারে ভারত। শুধু গত দশক বলা কেন! চলতি শতক অর্থাৎ কুড়ি বছরের পরিসংখ্যানে চোখ বোলালেও, তা কথা বলে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষেই। ২০০১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়ে ঘরের মাঠে ৫১টি টেস্টে আগে ব্যাট করে অন্তত ৩০০ রান করেছে অস্ট্রেলিয়া। যেখানে তারা হেরেছে মাত্র ৩টি ম্যাচ। বাকি ৪৮ ম্যাচে জয়ের সংখ্যা ৩৯ আর ড্র বাকি ৯টি। স্টিভেন স্মিথের ২৭তম টেস্ট সেঞ্চুরিতে ভর করে সিডনিতে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির তৃতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস থেমেছে ৩৩৮ রানে। প্রায় ১৬ মাস ও ১৪ ইনিংসে খরা কাটিয়ে করা সেঞ্চুরি স্মিথ খেলেছেন ১৩১ রানের ইনিংস। এছাড়া মার্নাস লাবুশেন আউট হয়েছেন ৯১ রান করে। বৃহস্পতিবার ম্যাচের বৃষ্টিবিঘ্নিত প্রথম দিনে ২ উইকেট হারিয়ে ১৬৭ রান করেছিল অস্ট্রেলিয়া। আজ (শুক্রবার) দ্বিতীয় দিন আরও যোগ করতে পেরেছে ১৭১ রান, হারিয়েছে বাকি ৮ উইকেট। বাকিদের ব্যর্থতার ভিড়ে উজ্জ্বল ছিলেন স্মিথ। তুলে নিয়েছেন ২৭তম টেস্ট সেঞ্চুরি। যা ভারতের বিপক্ষে টেস্টে অষ্টম এবং সবমিলিয়ে ১৩তম সেঞ্চুরি।
টেস্ট ক্যারিয়ারে ২৭তম সেঞ্চুরিতে বিশ্বের দ্বিতীয় দ্রুততম ব্যাটসম্যান হলেন স্মিথ; তার লেগেছে ১৩৬ ইনিংস। মাত্র ৭০ ইনিংসে ২৭ সেঞ্চুরি করেছিলেন স্যার ডন ব্র্যাডম্যান। স্মিথের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি ২৭ সেঞ্চুরি করতে খেলেছিলেন ১৪১ ইনিংস। স্মিথের সেঞ্চুরির দিন মাত্র ৯ রানের জন্য তিন অঙ্ক ছুঁতে পারেননি লাবুশেন। তৃতীয় উইকেটে স্মিথের সঙ্গে ঠিক ১০০ রানের জুটি গড়ে তিনি সাজঘরে ফিরে যান ১৯৬ বলে ৯১ রানের ইনিংস খেলে। এরপর হতাশ করেন ম্যাথু ওয়েড (১৩), ক্যামেরন গ্রিন (০), টিম পেইনরা (১)। ফলে লেজের সারির ব্যাটসম্যানদের নিয়ে লড়াই চালাতে হয় স্মিথকে। দলীয় ২৫৫ রানের মাথায় ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফেরেন পেইন। এরপর চার বোলারকে নিয়ে আরও ৮৩ রান যোগ করেন স্মিথ। যেখানে বলার মতো ২৪ রানের ইনিংস ছিল মিচেল স্টার্কের। রবীন্দ্র জাদেজার দুর্দান্ত থ্রো’য়ে ইনিংসের শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন স্মিথ। ততক্ষণে তার নামের পাশে জ্বলজ্বল করছিল ১৬ চারের মারে ২২৬ বলে ১৩১ রানের ইনিংস। মূলত তার ব্যাটে চড়েই ৩০০ ছাড়ানো সংগ্রহ দাঁড় করাতে পেরেছে অস্ট্রেলিয়া। ভারতের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নিয়েছেন জাদেজা। এছাড়া জাসপ্রিত বুমরাহ ও অভিষিক্ত নবদ্বীপ সাইনির ঝুলিতে গেছে ১টি করে উইকেট।