বাড়তি দামে বিক্রি হতে পারে পাম অয়েল

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥শীত মৌসুমে পাম অয়েল জমে যায়। ফলে এ সময় পণ্যটির চাহিদা কমে। কমতির দিকে থাকে দাম। তবে এবার পাম অয়েলের বাজারে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। নভেম্বর-ডিসেম্বরে শীত মৌসুম শুরু হয়ে গেছে। পাম অয়েলের দাম কমেনি। উল্টো আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি। সম্প্রতি ২৫ বছরের সর্বোচ্চে উঠেছে পাম অয়েলের দাম। পাম অয়েলের এমন মূল্যবৃদ্ধির ধারা ২০২১ সালের প্রথম প্রান্তিকজুড়ে (জানুয়ারি-মার্চ) বজায় থাকতে পারে। মালয়েশিয়ান পাম অয়েল বোর্ড (এমপিওবি) এমনটাই মনে করছে। খবর স্টার অনলাইন ও জাকার্তা পোস্ট।
পাম অয়েলের বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৯ সালের মে মাসে প্রতি টন পাম অয়েলের গড় দাম ছিল ৫৭৬ ডলার ৫৬ সেন্ট। পরের মাসে তা আরো বেড়ে টনপ্রতি ৬৫৬ ডলার ৪৯ সেন্টে উন্নীত হয়, যা আগের মাসের তুলনায় ১৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেশি। জুলাই ও আগস্টে প্রতি টন পাম অয়েলের গড় দাম ছিল যথাক্রমে ৬৯৪ ডলার ১৬ সেন্ট ও ৭৬০ ডলার ৩০ সেন্ট। জুলাইয়ে পণ্যটির দাম আগের মাসের তুলনায় ৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেড়েছে। আগস্টে বেড়েছে ৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
মূল্যবৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় গত বছরের সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন পাম অয়েলের গড় দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৯৬ ডলার ২২ সেন্টে, যা আগের মাসের তুলনায় ৪ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি। অক্টোবরে পণ্যটির গড় দাম আরো ২ দশমিক ৮৯ শতাংশ বেড়ে টনপ্রতি ৮১৯ ডলার ২৭ সেন্টে উন্নীত হয়েছে।
নভেম্বরে প্রতি টন পাম অয়েলের গড় দাম আরো বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯১৭ ডলার ৮১ সেন্টে, যা আগের মাসের তুলনায় ১২ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ বেশি। ডিসেম্বরে পণ্যটির দাম নিয়ে এখনো কোনো তথ্য প্রকাশিত হয়নি। তবে বিশ্লেষকদের ধারণা, এ সময় পাম অয়েলের গড় দাম আরো চাঙ্গা হয়ে উঠেবে।
নভেম্বর-ডিসেম্বরে ক্রেতা দেশগুলোয় শীত মৌসুম শুরু হয়ে যায়। এর পরও এবার শীতের শুরুতে চাঙ্গা রয়েছে পাম অয়েলের বাজার। এমপিওবি বলছে, করোনা মহামারীতে একদিকে ইন্দোনেশিয়া-মালয়েশিয়ায় পাম অয়েল উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। অন্যদিকে এসব দেশে পাম অয়েল সরবরাহ ও মজুদও কমতে শুরু করেছে। মূলত এসব কারণে শীত মৌসুমেও পাম অয়েলের দাম রয়েছে চাঙ্গা।
এ বিষয়ে এমপিওবির চেয়ারম্যান দাতুক আহমাদ জাযলান ইয়াকুব বলেন, ২০২০ সালে করোনার কারণে লকডাউন মালয়েশীয় পাম অয়েল শিল্পকে শ্রমিক সংকটের মুখে ফেলেছিল। এরপর বর্ষায় অতিবৃষ্টি ও বন্যা চ্যালেঞ্জ আরো বাড়িয়ে দেয়, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে পাম অয়েল উৎপাদন ও পণ্যটির সরবরাহে। বেড়ে যায় পাম অয়েলের দাম।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে শীত মৌসুম শুরু হয়ে গেলেও মালয়েশীয় পাম অয়েল টনপ্রতি ৩ হাজার রিঙ্গিতের (স্থানীয় মুদ্রা) ওপরে বিক্রি হচ্ছে। ২০২১ সালের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকজুড়ে মালয়েশীয় পাম অয়েলের দাম ৩ হাজার রিঙ্গিতের ওপরেই থাকতে পারে। এর পেছনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে পাম অয়েলের সরবরাহ সীমিত হয়ে আসা।
বুরসা মালয়েশিয়া ডেরিভেটিভস এক্সচেঞ্জে গত ২৩ ডিসেম্বর পাম অয়েলের দামে নতুন রেকর্ড হয়েছে। এদিন ভবিষ্যতে সরবরাহ চুক্তিতে পণ্যটির দাম ওঠে টনপ্রতি ৩ হাজার ৮৫৪ রিঙ্গিতে। ২৫ বছরের মধ্যে এটাই মালয়েশীয় পাম অয়েলের সর্বোচ্চ দামের রেকর্ড।
দামে এ নতুন রেকর্ড হওয়ার পেছনে পাম অয়েলের উৎপাদন ও মজুদ কমে আসাকে চিহ্নিত করেছে এমপিওবি। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বরে মালয়েশিয়ায় ১৪ লাখ ৯০ হাজার টন পাম অয়েল উৎপাদন হয়েছে, যা গত মার্চের পর সর্বনিম্ন। একই সময়ে দেশটিতে পাম অয়েলের মজুদ দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৫০ হাজার টনে। ২০১৭ সালের জুনের পর এটাই পাম অয়েলের সবচেয়ে কম মজুদের রেকর্ড। ডিসেম্বরে পাম অয়েলের উৎপাদন ও মজুদের তথ্য এখনো প্রকাশ করেনি এমপিওবি।