যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ভারতসহ বিভিন্ন দেশের ফ্লাইট বাতিলের হিড়িক

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ যুক্তরাজ্যের সঙ্গে একের পর এক বিভিন্ন দেশের ফ্লাইট বাতিলের হিড়িক শুরু হয়েছে। সম্প্রতি এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে কানাডা। আগামী ৭২ ঘণ্টার জন্য যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যাত্রীবাহী সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে বলে কানাডার স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিশ্চিত করেছেন। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে নতুন প্রজাতির করোনাভাইরাস শনাক্তের খবর সামনে আসতেই বিভিন্ন দেশ যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ফ্লাইট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে শুরু করে। ইউরোপীয় দেশগুলো যুক্তরাজ্যের ভ্রমণকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর কানাডাও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ফ্লাইট বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাজ্যে নতুন করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ায় দেশটির সঙ্গে বিমান চলাচল বন্ধ করে দিল ভারতও। এর আগে একই কারণে জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, কানাডার মতো দেশগুলো ব্রিটিশদের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছে। সোমবার ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২২ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাজ্য-ভারত বিমান চলাচল বন্ধ থাকবে।
যুক্তরাজ্যের সঙ্গে প্রথম ফ্লাইট বাতিলের ঘোষণা দেয় নেদারল্যান্ডস। এর পরেই একই পথে হাঁটতে দেখা গেছে বেলজিয়াম, ইতালি, জার্মানি ও ফ্রান্সকে। তারাও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ফ্লাইট বাতিল করেছে। রোববার রাত থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার জন্য যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ফ্লাইট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ফ্রান্স। সড়ক, সমুদ্র , রেল ও আকাশপথে মালামাল বহন করে নিয়ে আসা লোকজনও এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অপরদিকে আয়ারল্যান্ড জানিয়েছে, রোববার মধ্যরাত থেকেই তারা প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে বিমানের ফ্লাইট ও ফেরি চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। প্রাথমিকভাবে ৪৮ ঘন্টা এই বিধিনিষেধ জারি রাখা হবে বলে জানিয়েছে তারা। রোববার মধ্যরাত থেকে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বিমানের ফ্লাইট ও ট্রেন বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছে বেলজিয়াম। দেশটির প্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্ডার ডে ক্রু রাষ্ট্রায়ত্ব টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা অন্তত ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। পূর্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আরও পদক্ষেপ নিতে হবে কিনা তা আমরা দেখব।’
অস্ট্রিয়াও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ফ্লাইট বাতিলের পরিকল্পনা করছে বলে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। অপরদিকে স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নভূক্ত দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের ভিত্তিতে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ফ্লাইট বন্ধের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে চান। সুইডেন জানিয়েছে, যুক্তরাজ্য থেকে তাদের দেশে প্রবেশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। রোমানিয়া, লিথুয়ানিয়া, লাটভিয়া, এস্তোনিয়া, বুলগেরিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্রও যুক্তরাজ্যের ফ্লাইটের ওপর নিষেধাজ্ঞার পরিকল্পণা ঘোষণা করেছে।
এদিকে ট্রান্সপোর্ট কানাডা বলছে, কার্গো বিমান বা জরুরি কাজে নিয়োজিত বিমানের ফ্লাইট নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকবে না। তবে যাত্রীবাহী সব ধরনের বিমানে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে দেশটি বলছে, বেসামরিক বিমান চলাচলে নিরাপত্তা ও জনগণের সুরক্ষার জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি ছিল। স্থানীয় সময় রোববার মধ্যরাত থেকেই কানাডার আরোপ করা বিধি-নিষেধ কার্যকর হয়েছে। ব্রিটেনে শনাক্ত হওয়া করোনার নতুন প্রজাতিটি যে খুব বেশি প্রাণঘাতী বা ভ্যাকসিনের সঙ্গে ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে এটা আরো ৭০ শতাংশ বেশি সংক্রামক। করোনার পুরোনো প্রজাতির চেয়ে এটি অনেক দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে নতুন করে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা রোববার বিকেলে নতুন প্রজাতির এই করোনাভাইরাস নিয়ে আলোচনা করেছেন। এরপরেই যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ফ্লাইট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, কানাডায় এখনও পর্যন্ত কারও দেহে নতুন প্রজাতির এই করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়েনি। তবে এই প্রজাতির উপস্থিতি আছে কিনা তা শনাক্ত করতে কাজ করে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি কানাডায় দৈনিক সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত সপ্তাহ থেকে দেশটিতে ফাইজার এবং বায়োএনটেকের ভ্যাকসিনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৫ লাখ হাজার ৭৯৫ জন। এর মধ্যে মারা গেছে ১৪ হাজার ২২৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ৬ হাজার ২০৩ জন।