ভিয়েতনামে ৯ বছরের সর্বোচ্চে দাম বেড়েছে ভারত ও থাইল্যান্ডে

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ভারতের বাজারে রফতানিযোগ্য চালের দাম আগে থেকেই বাড়তির দিকে ছিল। এবার ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডের বাজারেও খাদ্যপণ্যটির দাম বেড়েছে। মূল্যবৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ সপ্তাহে ভিয়েতনামের বাজারে রফতানিযোগ্য চালের দাম বেড়ে নয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে উন্নীত হয়েছে। দাম টনপ্রতি ৫০০ ডলার স্পর্শ করেছে। থাইল্যান্ডে রফতানিযোগ্য চাল গত প্রায় চার মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। মূলত বাড়তি চাহিদার বিপরীতে রফতানি করার জন্য পণ্যবাহী কার্গো সংকট, পরিবহন ব্যয় বেশি থাকা, সরবরাহ শ্লথ হয়ে আসা ও মুদ্রাবাজারে ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রাগুলোর তুলনামূলক শক্তিশালী অবস্থান এশিয়ার তিনটি প্রধান রফতানিকারক দেশে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। খবর রয়টার্স ও বিজনেস রেকর্ডার।
ভিয়েতনাম বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ চাল রফতানিকারক দেশ। সর্বশেষ সপ্তাহে দেশটির বাজারে রফতানিযোগ্য ৫ শতাংশ ভাঙা চাল টনপ্রতি ৫০০ ডলারে বিক্রি হয়েছে। এর আগের সপ্তাহেও খাদ্যপণ্যটি টনপ্রতি ৪৭০-৪৯০ ডলারে বিক্রি হয়েছিল। সে হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ভিয়েতনামের বাজারে প্রতি টন রফতানিযোগ্য চালের দাম সর্বোচ্চ ৩০ ডলার বেড়েছে। ২০১১ সালের ডিসেম্বরের পর এটাই ভিয়েতনামে চালের সর্বোচ্চ মূল্য।
হো চি মিন সিটির ব্যবসায়ীরা জানান, করোনা মহামারীর মধ্যে এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোয় ভিয়েতনাম থেকে সবচেয়ে বেশি চাল রফতানি হয়েছে। এসব দেশে খাদ্যপণ্যটির রফতানি চাহিদাও রয়েছে ভালো। তবে রফতানি করার জন্য পর্যাপ্ত পণ্যবাহী কার্গো পাচ্ছে না ভিয়েতনামিজ রফতানিকারকরা। ফলে দেশটি থেকে চাল রফতানির গতি শ্লথ হয়ে এসেছে। বেড়েছে পরিবহন ব্যয়। এ পরিস্থিতি ভিয়েতনামে চালের বাজার চাঙ্গা করে তুলেছে।
কার্গো সংকটে ভিয়েতনামে চাল রফতানিতে বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে রফতানিকারকদের। কয়েক মাস আগেও দেশটি থেকে আফ্রিকার বন্দর অভিমুখে ২০ ফিটের একটি পণ্যবাহী কার্গোর ভাড়া ছিল ১ হাজার ৫০০ ডলার। বর্তমানে তা ৫ হাজার ডলারে উন্নীত হয়েছে। কার্গোর বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে পণ্য রফতানিকারকদের। স্বাভাবিকভাবেই দাম বাড়ছে রফতানিযোগ্য পণ্যটির।
ভিয়েতনামের রাজস্ব বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ১১ মাসে (জানুয়ারি-নভেম্বর) দেশটি থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ৫৭ লাখ টন চাল রফতানি হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে দেশটি থেকে খাদ্যপণ্যটির রফতানি কমেছে ২ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০২০ সালে সব মিলিয়ে ৬৫ লাখ টন চাল রফতানির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল ভিয়েতনাম সরকার। ১১ মাসের রফতানির তথ্য বিশ্লেষণ করে খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার চাল রফতানির বার্ষিক লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব নাও হতে পারে। এর পেছনে নভেল করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীকে দায়ী করছেন তারা।
শুধু ভিয়েতনাম নয়, রফতানিযোগ্য চালের দাম বাড়তির দিকে রয়েছে থাইল্যান্ডেও। চাল রফতানিকারকদের বৈশ্বিক তালিকায় দেশটির অবস্থান দ্বিতীয়। সর্বশেষ সপ্তাহে থাইল্যান্ডের বাজারে রফতানিযোগ্য ৫ শতাংশ ভাঙা চালের দাম ছিল টনপ্রতি ৫০০-৫১৯ ডলারের মধ্যে। এর আগের সপ্তাহে দেশটিতে একই মানের চাল টনপ্রতি ৪৮৫-৫১৬ ডলারে বিক্রি হয়েছিল। সে হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে রফতানিযোগ্য থাই চালের দাম টনপ্রতি সর্বোচ্চ ১৫ ডলার বেড়েছে। চার মাসের মধ্যে এটাই থাই চালের সর্বোচ্চ রফতানিমূল্য।
ব্যাংককের রফতানিকারকরা জানান, থাই রফতানিকারকরাও চাল রফতানিতে পণ্যবাহী কার্গো সংকটে ভুগছেন। একই সঙ্গে দেশটির বাজারে খাদ্যপণ্যটির সরবরাহ অনেকটাই কমে এসেছে। এখনো নতুন মৌসুমের চাল বাজারে ওঠেনি। একদিকে সরবরাহ তুলনামূলক শ্লথ হয়ে আসা, অন্যদিকে রফতানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া—এ দুইয়ের জের ধরে থাইল্যান্ডে চালের দাম বাড়তির দিকে রয়েছে।
এসব চ্যালেঞ্জের কারণে করোনা মহামারীর মধ্যে থাই চালের রফতানি বাজার সংকুচিত হয়ে এসেছে। থাই রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে (জানুয়ারি-অক্টোবর) থাইল্যান্ড থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ৪৪ লাখ ৯০ হাজার টন চাল রফতানি হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে দেশটি থেকে খাদ্যপণ্যটির রফতানি কমেছে ৩১ শতাংশ।
চাল রফতানিকারক দেশগুলোর বৈশ্বিক তালিকায় ভারতের অবস্থান শীর্ষে। দেশটিতে রফতানিযোগ্য চালের বাজার আগে থেকেই চাঙ্গা ছিল। গত সপ্তাহে তা আরো জোরদার হয়ে উঠেছে। ভারতের বাজারে সর্বশেষ সপ্তাহে প্রতি টন রফতানিযোগ্য ৫ শতাংশ ভাঙা চাল ৩৮০-৩৮৫ ডলারে বিক্রি হয়েছে। আগের সপ্তাহেও ভারতে রফতানিযোগ্য চাল টনপ্রতি ৩৭৮-৩৮৩ ডলারে বিক্রি হয়েছিল। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশটিতে রফতানিযোগ্য চালের দাম টনে সর্বোচ্চ ২ ডলার বেড়েছে।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, মুদ্রাবাজারে ভারতীয় রুপির অবস্থান শক্তিশালী হয়েছে। প্রায় দুই মাসের মধ্যে ডলারের বিপরীতে রুপির মান সর্বোচ্চে উঠেছে। এর প্রভাব পড়েছে চালের রফতানি বাজারে। বাড়তে শুরু করেছে খাদ্যপণ্যটির দাম। অন্ধ্রপ্রদেশের রফতানিকারকরা জানান, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে প্রতি টন রফতানিযোগ্য চালের দাম ৫০০ ডলারের ওপরে রয়েছে। সে তুলনায় ভারতে খাদ্যপণ্যটি তুলনামূলক কম দামে বিক্রি হচ্ছে। এর জের ধরে আমদানিকারকরা ভারতীয় চাল আমদানি বাড়িয়ে দিতে উদ্যোগী হয়েছেন, যা রফতানি বাজারে ভারতীয় চালের চাহিদা ও দাম দুটোই বাড়িয়েছে।
ভারত থেকে রফতানি হওয়া চালের অন্যতম বাজার বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলো। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার ভারত থেকে ৫০ হাজার টন চাল আমদানির নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। চলতি মাসেই এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার কথা। এ পরিস্থিতি ভারতীয় চালের বাজার দীর্ঘমেয়াদে চাঙ্গা থাকার অন্যতম কারণ। দেশটির রফতানিকারকরা বলছেন, আগামী বছর নাগাদ বাংলাদেশের বাজারে রফতানি আরো বাড়ানো গেলে ভারতীয় চালের বাজারে দীর্ঘমেয়াদে চাঙ্গা ভাব বজায় থাকতে পারে।