‘তোমাকে ভালোবাসি, ডিয়েগো’- ম্যারাডোনাকে আবার বললেন পেলে

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ২ ডিসেম্বর বুধবার, ম্যারাডোনার মৃত্যুর ঠিক এক সপ্তাহ পর পেলে আবারও আর্জেন্টাইন ফুটবল কিংবদন্তিকে বিদায়ী শ্রদ্ধা জানিয়েছেন টুইট করে, ‘তোমায় ভালোবাসি, ডিয়েগো। তুমি চিরদিনই আমার এক অসাধারণ বন্ধু হয়ে থাকবে। তুমি ছিলে এক আশ্চর্য প্রতিভা, যে মোহাবিষ্ট করে রেখেছিল গোটা পৃথিবীকে।’ ব্রাজিলে ক্যাথলিক ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী সাতদিন পর পারলৌকিক কৃত্য হয় মৃতের, জানানো হয় শ্রদ্ধা। আচারনিষ্ঠ ক্যাথলিক পেলে তাই ম্যারাডোনার প্রয়াণের সাতদিন পর তাকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ইনস্টাগ্রামে। একটা সময় মনে হতো পেলে ও ম্যারাডোনার পরস্পরের প্রতি কোনও শ্রদ্ধাবোধ নেই। সর্বকালের দুই ফুটবলশ্রেষ্ঠর মধ্যে আছে শুধু ঈর্ষা আর বিদ্বেষ। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলো দু’জনের জীবনের পৃষ্ঠাগুলো ‍খুলে যাওয়ায় দেখা গেল অশেষ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসাই ছিল পরস্পরের প্রতি। গত ২৩ অক্টোবর পেলের ৮০তম জন্মদিনের এক সপ্তাহ পর ৩০ অক্টোবর ৬০তম জন্মদিনের কেক কাটা হয়েছে ডিয়েগো ম্যারাডোনার। দু’জন পরস্পরকে জানিয়েছেন শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা। কিন্তু ষাটতম জন্মদিনের এক মাসের মধ্যে ২৫ নভেম্বর আকস্মিকভাবে চিরবিদায় নিলেন ম্যারাডোনা। সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলারকে হারিয়ে এই গ্রহ এখনও কাঁদছে।
পেলে সেরা না ম্যারাডোনা, সারাবিশ্বে ঘুরেফিরে এই একই আলোচনা চলতো এই সেদিনও। মেসি ও রোনালদো এসে সেই আলোচনাটা একটু থামিয়েছেন। কিন্তু পেলে বুধবার রাতে তার ইনস্টাগ্রাম পোস্টে লিখেছেন, ম্যারাডোনাই সেরা, এই আর্জেন্টাইন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ‘এই পৃথিবীটাকে আরও সুন্দর লাগতো যদি আমরা নিজেদের মধ্যে তুলনাটা কম করে পরস্পরের প্রশংসা করতাম বেশি। সুতরাং আমি বলতে চাই তোমার কোনও তুলনা হয় না’-ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন তিনবারের বিশ্বকাপ বিজয়ী। এই পোস্টের মধ্যে দুই ফুটবল কিংবদন্তির অনেক ছবি দেওয়া হয়েছে, একটি ছবিতে দেখা যায় তরুণ ম্যারাডোনা মুগ্ধ দৃষ্টিতে পেলের গিটার বাজানো দেখছেন ঘনিষ্ঠভাবে। পেলে লিখেছেন, ‘তোমার ভ্রমণ ছিল সততার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তুমি ভালোবাসাটা প্রকাশ করেছো তীব্রভাবে। তুমি আমাদের শিখিয়েছো ভালোবাসতে হবে, বেশি করে বলতে হবে “ভালোবাসি তোমায়”।’
ব্রাজিল কিংবদন্তির হৃদয়ে এখনও ক্ষরণ, ‘তুমি এত দ্রুত চলে গেলে যে তোমাকে এ কথাটি আমি বলতে পারিনি, সুতরাং আমি এখন লিখে জানাচ্ছি, তোমাকে ভালোবাসি ডিয়েগো।’
পেলে ও ম্যারাডোনা -টুইটার দু’জন ছিলেন ভিন্ন সময়ের প্রতিনিধি। তবু একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল তাদের মধ্যে। দ্বিতীয় সহস্রাব্দে ফিফা তাই শ্রেষ্ঠ ফুটবলারকে বেছে নিতে প্রথমে আয়োজন করে অনলাইন ভোট। তাতে বিপুল ব্যবধানে জেতেন ১৯৮৬ বিশ্বকাপজয়ী ম্যারাডোনা। কিন্তু ফিফার পরে উপলব্ধি হয় যে অনলাইনে স্বাভাবিকভাবেই বেশি ভোট পাবেন ম্যারাডোনা, কারণ বর্তমান সময়ের প্রতিনিধি তিনি। এরপর আরেকটি ভোটের ব্যবস্থা করা হয় যাতে ভোট দেন ক্রীড়া সাংবাদিক ও কোচরা। এবার বিজয়ী পেলে। পরে অবশ্য বিংশ শতাব্দীর সেরার মুকুট দেওয়া হয় দু’জনকেই, যুগ্মভাবে। পেলে লিখেছেন, ‘তুমি বল পায়ে এক জাদুকর। সত্যিকারের কিংবদন্তি। সবকিছুর ওপর আমার কাছে তুমি হলে সবসময়ের অসাধারণ এক বন্ধু, যার হৃদয়টা আরও বড়।’ তারায় ভরা অনন্ত আকাশে ম্যারাডোনাকে প্রকৃত বন্ধু হিসেবেই খুঁজে নেবেন পেলে, ‘একদিন স্বর্গে আমরা একই দলের হয়ে ফুটবল খেলবো। এবং তখনই প্রথমবারের মতো আকাশে আমি মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে গোল উদযাপন করবো না বরং সেটা করবো অবশেষে তোমাকে আলিঙ্গন করতে পারার আনন্দে।