যশোরে নকল ওষুধসহ দুজন ব্যবসায়ীকে আটক ফার্মেসিতে ধর্মঘট, রোগীদের চরম ভোগান্তি

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নকল মনটেয়ার-১০ ওষুধসহ দুজন ব্যবসায়ীকে আটকের জেরে রোববার যশোরের ফার্মেসিগুলো ধর্মঘট পালন করে। ইব্রাহিম সরদার (৩৮) ও জহির উদ্দিন আহমেদ সুইট (৪২) নামে ওই দুজন ব্যবসায়ীকে আটক করে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। তবে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে ব্যবসায়ীরা রোববার বিকেলে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। অপরদিকে ওষুধ ব্যবসায়ীদের হঠাৎ ধর্মঘটের কারণে রোগীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।


সদর পুলিশ ফাঁড়ির এসআই শরিফুল ইসলাম জানান, গত শনিবার দুপুর একটার দিকে গোপন সূত্রে তারা খবর পান যে, ঘোপ জেল রোডস্থ কাশিমপুর সার্জিক্যাল অ্যান্ড মেডিসিন হাউজে নকল ওষুধ বিক্রি করা হচ্ছে। এর প্রেক্ষিতে ফাঁড়ির ইনচার্জ ইনসপেক্টর তুষার কুমার মন্ডলের নেতৃত্বে তারা সেখানে যান। এ সময় ক্রেতা সেজে দোকানে মনটেয়ার-১০ ওষুধ চাওয়া হয়। দোকান মালিক ইব্রাহিম সরদার তাকে একপাতা মনটেয়ার-১০ দিলে তাদের সন্দেহ হয়। ফলে আসল ইনসেপ্টা কোম্পানির আসল মনটেয়ার-১০ এর পাতার সাথে দোকান মালিকের দেয়া মনটেয়ার-১০ এর পাতা পরীক্ষা করে অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায়। এ সময় ইব্রাহিম সরদারকে তারা এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি প্রথমে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিতে থাকেন। তবে এক পর্যায়ে স্বীকার করেন যে, ওই ওষুধ নকল। তিনি বেশি লাভের আশায় নকল ওষুধ কম দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করে থাকেন। এ সময় তার দোকান থেকে পুলিশ ১৪৩টি নকল মনটেয়ার-১০ উদ্ধার করেন। এছাড়া ইব্রাহিম সরদার পুলিশকে আরও জানান, মাইকপট্টির জমজম ড্রাগ হাউজের মালিক জহির উদ্দিন আহমেদ সুইট তার আত্মীয়। তারা পরস্পর যোগসাজসে নকল এই ওষুধ বিক্রি করে থাকেন। তার দেয়া তথ্যের প্রেক্ষিতে বিকেল সোয়া ৩টার দিকে জমজম ড্রাগ হাউজে অভিযান চালিয়ে নকল আরও ১০টি মনটেয়ার-১০ উদ্ধার করা হয়। এ সময় সেখান থেকে পুলিশ দোকান মালিক জহির উদ্দিন আহমেদ সুইটকে আটক করে। এ ঘটনায় ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫সি এর ১(ডি) ধারায় আটক দুজনের বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। পরদিন রোববার আটক দুজনকে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ।
এদিকে দুজন ব্যবসায়ীকে আটকের জেরে রোববার সকালে যশোরে ফার্মেসিগুলোতে ধর্মঘট আহবান করে বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি যশোর শাখা। ফলে আকষ্মিক ধর্ঘঘটের কারণে রোগীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। তবে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে বিকেলে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেন ওষুধ ব্যবসায়ীরা। তবে ধর্মঘট চলঅকালীন সব ওষুধের দোকান বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন রোগীরা। শহরের অনেক হাসপাতাল ও কিনিকে আসা অসুস্থ রোগী প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনতে পারেননি বলে জানিয়েছে বিভিন্ন সূত্র। ফলে চরম বিপাকে পড়তে হয় বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা রোগী ও স্বজনদের। এ বিষয়ে বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি যশোর শাখার সহসভাপতি আব্দুল হামিদ চাকলাদার ইদুল দৈনিক লোকসমাজকে জানান, তারা নকল ওষুধের বিপক্ষে। তবে অভিযানে ড্রাগ সুপার ও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকতে হবে। কারণ, ড্রাগ সুপারই বলতে পারবেন কোনটা নকল ওষুধ। কিন্তু পুলিশ এক্ষেত্রে ড্রাগ সুপারকেও সাথে নেয়নি। তিনি বলেন, পুলিশের এ ধরনের অভিযানের প্রতিবাদ ও আটক ব্যবসায়ীদের মুক্তির দাবিতে রোববার দুপুরে তারা সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এছাড়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ তমিজুল ইসলাম খানের সাথে সাক্ষাৎ করে তাকে স্মারকলিপি দেন। পরে জেলা প্রশাসকের অনুরোধে বিকেলে তারা ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। উল্লেখ্য, ওই ওষুধ শ্বাসকষ্টজনিত রোগীদের চিকিৎসার জন্য দেয়া হয়।