ঝিনাইদহ রূপালী ব্যাংকে শিক্ষকদের ঋণের টাকা নিতে লাখ প্রতি দিতে হয় কমিশন!

0

স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ ॥ ঝিনাইদহ রূপালী ব্যাংকে (কর্পোরেট শাখা) শিক্ষকদের বেতনের বিপরীতে ঋণ নিতে টাকা দিতে হচ্ছে ব্যাংক কর্মকর্তাদেরকে। এমন অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষকরা। দীর্ঘদিন ধরে হেড অফিসের দোহাই দিয়ে ব্যাংকের ঋণ শাখার কর্মকর্তা মো. ইদ্রীস আলী শিকদের কাছ থেকে লাখ প্রতি এক হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন তিনি। তবে ব্যাংক ম্যানেজার বলছেন, হয়তো আগে নেওয়া হলেও তিনি আসার পর থেকে কোন টাকা আদায় করা হচ্ছে না। বরং ঋণ পেয়ে শিক্ষকরা বেজায় খুশি।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে শিকদের বেতনের বিপরীতে ৮০শতাংশ হারে সল্প সুদে ৬ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করছে ব্যাংকটি। ইতিমধ্যে ব্যাংকটি প্রায় ৩ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে সদর উপজেলার বেসরকারি শিকদের মধ্যে। ঋণ বিতরণ ও কমিশনের বিষয়ে ব্যাংক কর্মকর্তা মো. ইদ্রীস আলী বলেন, আমরা বেসরকরি শিকদের বাড়ি মেরামত ও জমিক্রয় ইত্যাদির জন্য বেতনের ৮০শতাংশ হারে ঋণ বিতরণ করছি। লাখে কত করে নিচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন সিবিএ খরচ, ভ্যাট, কাগজ প্রসেসিং ইত্যাদি বাবদ টাকা নেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত টাকার কোন রশিদ দেওয়া হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন না, আমরা কোন রশিদ দিচ্ছি না। তিনি বলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ম্যানেজার আমাদের যেভাবে বলেছে আমরা সেইভাবে টাকা আদায় করছি। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার প্রত্যেকটি বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়ের শিকদের বেতনের বিপরীতে ঋণ করেছে ঝিনাইদহ রূপালী ব্যাংক। শহরের শিশুকুঞ্জ স্কুল এন্ড কলেজ এবং চন্ডিপুর বিষ্ণুপদ স্কুল এন্ড কলেজের প্রায় ২৫ জন শিক বেতনের বিপরীতে ঋণ গ্রহণ করেছেন। তারা প্রত্যেকেই ব্যাংক কর্মকর্তা ইদ্রিস আলীকে লাখ প্রতি ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা কমিশন দিয়েছেন।
বিষ্ণুপদ স্কুল এন্ড কলেজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক জানান, তিনি দেড় লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। এ জন্য ইদ্রিস আলীকে ২৫০০ টাকা কমিশন দিতে হয়েছে। এ বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা শিা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) তসলিমা খাতুন বলেন, এরকম অনিয়মের কথা আমিও শুনেছি। কিন্তু আমরা জিজ্ঞাসা করলে শিকরা স্বীকার করেন না। ফলে কোন ব্যবস্থা নিতে পারিনা। ঝিনাইদহের এক টেকনিক্যাল কলেজের অধ্য বলেন, শিকদের বেতনের বিপরীতে যে ঋণ বিতরণ হচ্ছে, তাতে রিস্ক নাই। তারপরও কেন ঘুষ নিচ্ছে তা আমাদের বুঝে আসে না। বিষয়টি নিয়ে জেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি মহিউদ্দীন জানান, তিনিও এমন অভিযোগ শুনেছেন। তবে বর্তমান ম্যানেজার যোগদানের পর থেকে বিষয়টি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছেন। ব্যাংক ম্যানেজার মোঃ ইমদাদুল ইসলাম নূরানী রোববার বিকালে জানান, এই শাখায় যারা কর্মরত তাদের বেশির ভাগ স্থানীয়। তারা দীর্ঘদিন ধরে আছেন। শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা আমিও শুনেছি। তবে সার্কুলারের বাইরে তো টাকা নেওয়ার কথা নয়। তিনি বলেন, সরকারের বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন রোববার সকালে বিষয়টি তদন্ত করছে। তারা ব্যাংকের কার্যক্রম দেখে গেছেন। তিনি দাবি করেন তিনি আসার পর থেকে ব্যাংকে কোন অনৈতিক লেনদেন হচ্ছে না।