রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রকৃত খেলাপি ঋণ প্রায় ৪২,১২৫ কোটি টাকা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হিসাবে গড়মিল রয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান, ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে প্রেরিত পরিসংখ্যান ও ব্যাংকগুলোর পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার উপাত্তে ভিন্ন ভিন্ন তথ্যের রকমারি চিত্র। এমনকি খোদ অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের যে পরিসংখ্যান উপস্থাপন করেছেন সেখানেও চিত্রটি ভিন্ন। ফলে সঙ্গতকারণেই রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র নিয়ে এক ধরনের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
ব্যাংকগুলোর পরিসংখ্যান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত বছর ডিসেম্বরে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের দু’জন প্রতিনিধি অভিযোগ করেন যে, ‘রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে এবং মন্ত্রণালয়ে প্রেরিত তথ্যে গরমিল রয়েছে।’
গত অক্টোবরে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত চার (সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী) ব্যাংকের বৈঠকে খেলাপি ঋণের যে পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়, এতে দেখা যায়, ২০২০ সালের জুন শেষে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি হচ্ছে ৯ হাজার ৮৮ কোটি টাকা, জনতা’র ১৩ হাজার ২২৯ কোটি টাকা, অগ্রণী’র ৫ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা ও রূপালী’র ৪ হাজার ৪৪ কোটি টাকা।
এর আগে গত ৬ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এতে দেখা যায়, গত জুন শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের স্থিতি হচ্ছে ৪১ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সোনালী’র ৮ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা, জনতা’র ১৫ হাজার ৯৭৪ কোটি টাকা, অগ্রণী’র ৫ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা, রূপালী’র ৪ হাজার ৯০ কোটি টাকা, বেসিকের ৭ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা ও বিডিবিএল-এর ৫৫৮ কোটি টাকা।
একই মাসে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের দুটি পৃথক বৈঠকে ছয় ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের স্থিতি ৪২ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা এবং ৪২ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্যদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ)-এর আলোকে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নিজেদের জন্য পাঁচ বছর (২০১৯-২২) মেয়াদি এটি কর্মপরিকল্পনা ও লক্ষ্যমাত্রা তৈরি করেছে। এতে ২০১৯ (অর্থবছর/পঞ্জিকা বছর) সালের যে অর্জন তুলে ধরা হয়েছে, তাতে দেখা যায়, সোনালীর খেলাপি ঋণের স্থিতি ১১ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা, জনতার ১৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, অগ্রণীর ৬ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা, রূপালীর ৪ হাজার ৬১৫ কোটি টাকা, বেসিকের ৭ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা ও বিডিবিএল-এর খেলাপি ঋণ ৭৬৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে প্রেরিত সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত জুন শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ১২৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের ১০ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংকের ১৩ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের ৬ হাজার কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকের ৪ হাজার ১৬১ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংকের ৭ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা ও বিডিবিএল-এর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬৫৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। গত সপ্তাহে খেলাপি ঋণের এ হিসাব চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিসংখ্যানের ‘সঠিকতা’র বিষয়ে জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একটি সূত্র জানায়, বিভাগের পক্ষ থেকে সর্বশেষ যে হিসাব করা হয়েছে সেটিই প্রকৃত। কারণ ব্যাংকগুলোকে তাদের হিসাবের সপক্ষে প্রামাণিক দলিল দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং ব্যাংকগুলো প্রামাণিক দলিল দাখিল করেছে।
ব্যাংকখাতের একটি সূত্রমতে, করোনাজনিত কারণে তথ্য সংগ্রহে বিলম্বের কারণে পরিসংখ্যানে কিছুটা গড়মিল থাকতে পারে। সেটি সংশোধন বা আপডেট করা হয়েছে।
কিন্তু খেলাপি ঋণের পরিসংখ্যানে এর আগের অর্থবছরেও বড় ধরনের গড়মিল লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষে অর্থাৎ ২০১৯ সালের জুন শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ৫৩ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। কিন্তু পরবর্র্তীতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রতিবেদনে খেলাপি ঋণের প্রকৃত পরিমাণ ৫৫ হাজার ১০৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে।
সে হিসাবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছয় ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ কমেছে ১২ হাজার ৯৮৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা। মূলত খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ ছাড়ের কারণে খেলাপি ঋণ কমেছে বলে জানা যায়।