মোবারকগঞ্জ ও দর্শনায় চিনি কলে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

0

স্টাফ রিপোর্টার,ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা॥ ঝিনাইদহের মোবারকগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গার দর্শনা চিনি কলে শ্রমিক-কর্মচারীরা গতকাল বিক্ষোভ করেছেন। সরকারি চিনি কল বন্ধের সরকারি পরিকল্পনার প্রতিবাদ ও বকেয়া পাওনার দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ জানান, মোবারকগঞ্জ চিনিকল শ্রমিক কর্মচারীরা পাওনা বেতন, কৃষকের সার কীটনাশক এবং আখের বকেয়া ৬ কোটি টাকা পরিশোধের দাবিতে গেট মিটিং করেছে। সকালে মিলের প্রধান ফটকে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও শ্রমিক ফেডারেশনের আইন ও দর কষাকষি বিষয়ক সম্পাদক গোলাম রসুল, আখ চাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি জহুরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান মন্টু, চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম প্রমুখ। মিলের প্রায় আটশ’ শ্রমিক কর্মচারী সভায় অংশ নেয়। শ্রমিকরা জানায়, মিলের গত ২০১৯-২০ মাড়াই মৌসুমে কৃষকের আখের ১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা এখনো বাকি। এদিকে চলতি ২০২০-২১ রোপন মৌসুম শুরু হলেও কৃষকরা সার ও কীটনাশক কিনতে না পারায় বন্ড বা স্ট্যাম্প করছে না মিল কর্তৃপক্ষ। সার ও কীটনাশক না পেয়ে বিপাকে পড়েছে আখ চাষিরা। ফলে সময় মতো বন্ড না হওয়ায় আখ রোপনে অনাগ্রহ দেখাচ্ছে অনেক কৃষক। অন্যদিকে মিলের শ্রমিক কর্মকর্তাদের তিন মাসের প্রায় ৪ কোটি টাকা বাকি। বাকি রয়েছে গেল বছরের মৌসুমি শ্রমিকদের ওভার টাইমের প্রায় অর্ধকোটি টাকা। সব মিলিয়ে ৬ কোটি টাকার বকেয়া রয়েছে। এরই মধ্যে আগামী ৪ ডিসেম্বর মিলটি ২০২০-২১ আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধনের দিনক্ষণ ঠিক করেছে। কিন্তু চলতি মৌসুমের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি থাকলেও মিলের এমন নাজুক অবস্থায় শ্রমিক কর্মচারী ও মিল এলাকার আখচাষিদের মধ্যে হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা জানান, চিনিকলসমূহ বন্ধের সরকারি পরিকল্পনার প্রতিবাদে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি চিনিকলে গেটসভা হয়েছে। সকালে কেরু শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের আয়োজনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। কেরু কোস্পানি চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি ও বাংলাদেশ চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশনের সহ সাধারণ সম্পাদক তৈয়ব আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গেটসভায় বক্তব্য রাখেন, কেরু কোস্পানি চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি মাসুদুর রহমান, দর্শনা আখচাষি কল্যাণ ফেডারেশনের সহ-সভাপতি ওমর আলী ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারী, কেরু কোস্পানি চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সহসভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ও সহসাধারণ সম্পাদক খবির উদ্দিন এবং শ্রমিক নেতা ফিরোজ আহম্মেদ সবুজ।
ফেডারেশনের সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, গেটসভার মাধ্যমে প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু হলো। আগামী ২৮ নভেম্বর শনিবার নিজ নিজ চিনিকল এলাকায় আখচাষি ও শ্রমিক-কর্মচারীদের সমন্বয়ে মানববন্ধন, প্রত্যেকটি চিনিকল এলাকায় পোস্টার, ব্যানার ও লিফলেট বিতরণ, একই সঙ্গে ১৫টি সরকারি চিনিকলে মাড়াই মৌসুমের তারিখ নির্ধারণ না হওয়া পর্যন্ত কোনো চিনিকলের বয়লার স্লো ফায়ারিং করা যাবে যাবে না। এছাড়া সভা থেকে পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়। দাবিগুলো হলো, চিনিকলে নিয়োজিত শ্রমিক-কর্মচারীদের ৫-৬ মাসের বকেয়া বেতনসহ সকল পাওনাদি এবং অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের গ্রাচ্যুইটির টাকা পরিশোধ, চিনিকল বন্ধের প্রক্রিয়া বাতিল, আসন্ন মাড়াই মৌসুম (২০২০-২০২১) এর আগে যাবতীয় মালামাল সরবরাহ করতে হবে, আখ উৎপাদনের স্বার্থে সার,বীজ ও কীটনাশকসহ জরুরি উপকরণসমূহ সরবরাহ করতে হবে ও আখচাষিদের আখের বকেয়া মূল্য পরিষদ করতে হবে। কেরু কোম্পানি চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি ও বাংলাদেশ চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশনের সহ সাধারণ সম্পাদক তৈয়ব আলী বলেন, চিনি শিল্পগুলো সরকারের সিদ্ধান্তের কারণে আরও সমস্যায় নিমজ্জিত হচ্ছে। বিভিন্ন ভুল সিদ্ধান্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের ওপর চাপিয়ে চিনিকল বন্ধের পাঁয়তারা করা হচ্ছে। যা আমাদের জন্য দুর্বিষহ পরিবেশ তৈরি করেছে।