আগাম ‘আমন’ চাষের নতুন সম্ভাবনা

0

খুলনা সংবাদদাতা॥ খুলনাসহ উপকূলীয় এলাকার বেশিরভাগ জমিই এক ফসলি। এ সব জমি বছরের ৭-৮ মাসই পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। এই জমিতে আগাম আমন ধান চাষের নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে ব্রি ধান ৯০। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত এ ধান থেকে আসবে সুগন্ধি চাল। যা রফতানিযোগ্যও হবে। চলতি আমন মৌসুমে খুলনার বটিয়াঘাটায় প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে এ ধানের চাষ হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে মাত্র ৩ কাঠা জমিতে চাষ করা হয় এই উচ্চফলনশীল আধুনিক জাতের সুগন্ধি ধান। শুরুতে এর বাম্পার ফলন হয়েছে। চিকন দানার এই সুগন্ধি ধান হেক্টর প্রতি উৎপাদন হচ্ছে ৫ টন। স্থানীয় রাণী স্যালট, জটাই, হরকোচ, ভাটেল ধান হেক্টর প্রতি সর্বোচ্চ উৎপাদন হয় সাড়ে তিন থেকে চার টন। এর ফলে ব্রি ধান ৯০ কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ব্রি ধান-৯০ মাত্র চার মাসের মধ্যেই পাকছে। ফলনও বেশি।
বটিয়াঘাটা উপজেলার দাউনিয়াফাদ, গুপ্তমারি গ্রামে এ ধান চাষ নতুন আশার আলো সৃষ্টি করেছে। এ এলাকায় স্থানীয় বড়ান জাতের ধানের মাঠ এখনও সবুজ এবং কেবল পুষ্পায়ণ হচ্ছে। এ সব ধান কাটতে আরও প্রায় দু’মাস সময় লাগবে। কিন্তু একই সময় রোপণ করে মাত্র ১১৮ দিনেরও কম সময়ে আশানুরূপ ফলন পাওয়া গেছে। ফলে এ জাতটি নিয়ে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। যে সব জমি মাঝারি উঁচু ও উঁচু সেখানে এ ধান চাষ করে মধ্য কার্তিকেই ধান কাটার পর সেখানে রবি শস্য (সরিষা, আলু, শাক-সবজি) চাষ করা সম্ভব। সাধারণত এ এলাকায় স্থানীয় জাতের আমন ধান অনেক দেরিতে পাকায় নতুন কোনও ফসল চাষ করা যায় না। গুপ্তমারি গ্রামের কৃষক রণজিত রায় প্রথম এ ধান চাষ করেন। তাকে ব্রি থেকে এক কেজি বীজ সংগ্রহ করে দেন এক সৌখিন চাষি। ধান পাকার পর ফলন দেখে অনেকেই এই ধান চাষে আগ্রহী হয়েছেন। রণজিত রায় বলেন, ‘আমি তিন কাঠা জমি বর্গা নিয়ে এ ধান চাষ করি। এই জমিতে তিন মণ ফলন পেয়েছি। এতে খুবই খুশি। সামান্য পরিমাণ জমিতে এতো বেশি চিকন ধান পাওয়ার কথা ভাবতেই পারিনি। ধান কাটার পর ফলন দেখে এলাকার অনেকেই বীজ চেয়েছেন। প্রতি কেজি বীজ দেড় থেকে দুইশ’ টাকা দরে দিতেও আগ্রহী চাষিরা। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজনই নিয়েছেন ২ মণ বীজ। তিনি আগামী বছর ৩ একর জমিতে এ ধান চাষ করার পরিকল্পনা নিয়েছেন।’
দাইনিয়াফাঁদ গ্রামের কৃষাণী আরতি রায় বলেন, ‘এমন সুন্দর ছোট দানার ধান দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। ভালো ফলনও হয়েছে। এমন ফলন আগে কখনও দেখা যায়নি। তাছাড়া আমন ধান সাধারণত পৌষ মাসে কাটা পড়ে। কিন্তু নতুন জাতের এ ধান ২ মাস আগেই কাটা হয়েছে।’ তিনি নিজে নতুন জাতের এ ব্রি ধান ৯০ এর নাম দিয়েছেন ‘মুসরি দানা’। এলাকার কেউ বলছেন বেগুন বীচি। আবার কেউ নাম দিয়েছেন স্বর্ণালী ভোগ। মুক্তা এর মতো ছড়ায় গাঁথা ধানের চাল থেকে আসা ভাত খেতে সুস্বাদু এবং সুগন্ধ থাকে। পোলাওসহ বিভিন্ন উৎসবে রান্নার উপযোগী চাল আসে এ ধান থেকে।