যেভাবে আত্মসমর্পণ করলেন রাজখোয়া

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ দীর্ঘ ৯ বছর চেষ্টার পর উলফা নেতা দৃষ্টি রাজখোয়াকে বশে এনেছে ভারতীয় সামরিক গোয়েন্দারা। এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এমনটাই দাবি করেছেন। টাইমস অব ইন্ডিয়া এই তথ্য দিয়ে বলেছে, আর দশটা অভিযানের মতো করে রাজখোয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তাকে বশে আনতে ৯ বছর সময় লেগেছে। ২০১১ সালে এক এমআই (মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স) কর্মকর্তা প্রথম রাজখোয়ার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। এরমধ্যে তাকে একাধিকবার ট্রান্সফার করা হলেও তিনি বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগাযোগ ধরে রাখেন। নিজের নিরাপত্তার কথা না ভেবে তিনি রাজখোয়াকে আত্মসমর্পণ করে মূলধারায় ফিরে আসতে উৎসাহী করতে চেষ্টা চালিয়ে যান। এক পর্যায়ে তিনি বোঝাতে সক্ষম হন যে, বিদ্রোহ হচ্ছে এই অঞ্চলের উন্নয়নের পথে সব থেকে বড় বাধা। এর ভিত্তিতে কয়েক দিন পূর্বে আত্মসমর্পণে রাজি হন রাজখোয়া।
তাকে বশে আনাকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিদ্রোহ দমনের পথে বড় সফলতা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। রাজখোয়া ছিলেন উলফার ডেপুটি কমান্ডার ইন চিফ। গত বুধবার ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে মিলে সুপরিকল্পিত ওই অভিযান চালায় সেনাবাহিনী। এতে চার সঙ্গীসহ আত্মসমর্পণ করেন দৃষ্টি রাজখোয়া। তার আসল নাম মনোজ রাভা। টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, রাজখোয়া ছিলেন উলফা (স্বতন্ত্র)’র কমান্ডার ইন চিফ পরেশ বড়ুয়ার সব থেকে ঘনিষ্ঠ সহযোগী। বর্তমানে চীনে লুকিয়ে আছেন পরেশ বড়ুয়া। তবে রাজখোয়ার গ্রেপ্তারকে এই অঞ্চলে বিদ্রোহ দমনের পথে বড় সফলতা বলে মনে করা হচ্ছে। তাকে ধরতে গোয়েন্দারা গত কয়েক বছর ধরেই কাজ করে যাচ্ছিল।
অভিযানের পরিকল্পনাটি এমআই-এর ডিরেক্টর জেনারেলের তদারকিতে সাজায় দিল্লির গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। পুরো প্রক্রিয়াকে নিরাপদ ও এতে অংশ নেয়া সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয় ওই পরিকল্পনায়। এটি বাস্তবায়নে আসামে অবস্থিত ভারতীয় সেনাদের রেড হর্নস ডিভিশনের সাহায্য নেয় গোয়েন্দারা। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১১ই নভেম্বর রাতে অভিযানটি পরিচালনা করা হয়। রাত ৯টার দিকে রাজখোয়া আত্মসমর্পণ করেন। এ সময় তার কাছে ছিল একটি একে-৮১ অ্যাসল্ট রাইফেল ও দু’টি পিস্তল। এরপর তাকে ও তার সহযোগীদের অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে আরেক কর্মকর্তা টাইমস অব ইন্ডিয়াকে জানান, আমরা আশা করছি রাজখোয়ার আত্মসমর্পণ অন্য উলফাসহ বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সদস্যদেরকেও আত্মসমর্পণে উৎসাহিত করবে।
২০১১ সাল পর্যন্ত রাজখোয়া উলফার ১০৯ ব্যাটালিয়নের কমান্ডার ছিলেন। ওই বছরের নভেম্বরে পরেশ বড়ুয়া তাকে উলফার ডেপুটি কমান্ডার পদে নিয়োগ করেন। তিনি পরেশ বড়ুয়ার সব থেকে ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন বলে জানা যায়। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে একাধিক হামলার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বাংলাদেশেও তার সক্রিয়তা ছিল বলে টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের ময়মনসিংহেও লুকিয়ে ছিলেন রাজখোয়া। তিনি ভারতের বিভিন্ন বিদ্রোহী গ্রুপের কাছে অস্ত্র সরবরাহ করতেন। এ জন্য গারো পাহাড় এলাকা থেকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরে ব্যাপক বিচরণ ছিল তার। গারো বিদ্রোহীদের মধ্যেও তিনি অত্যন্ত প্রভাবশালী। এর আগে তাকে ধরতে চালানো একাধিক অভিযান থেকে বেঁচে গেছেন রাজখোয়া। এ বছরের ২০শে অক্টোবরও এক অভিযান চালানো হয়েছিল তাকে গ্রেপ্তারে।