ধর্ষণের সালিশ নিষিদ্ধ হউক

0

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষণের ঘটনা পুরো সমাজব্যবস্থাকেই প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে ২০১৭-১৮ সালের তুলনায় ২০১৯-২০ সালে ধর্ষণ প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। আবার সব ঘটনা সামনেও আসে না। অনেক ঘটনাই আড়ালে থেকে যায়। যেসব ঘটনায় অভিযোগ করা হয়, সেগুলোই হিসাবের মধ্যে আসে। আবার অনেক ঘটনা স্থানীয়ভাবে সালিসের মাধ্যমে মীমাংসা করা হয়। এসব ক্ষেত্রে স্থানীয় নেতা বা মাতবররাই লাভবান হন বলেও অভিযোগ আছে। গত বছর সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদের মতাবলে হাইকোর্ট ধর্ষণ কিংবা ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যা মামলার বিচার করতে নিম্ন আদালতের বিচারক, পাবলিক প্রসিকিউটর, সাক্ষী, পুলিশ, চিকিৎসক বা মামলার অন্যান্য বিশেষজ্ঞের প্রতি সাত দফা নির্দেশনা দেন। সেই নির্দেশনা কতটুকু প্রতিপালিত হচ্ছে এমন প্রশ্ন রয়ে গেছে। নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ ট্রাইব্যুনালে ১৮০ দিনের মধ্যে এসব মামলার বিচার শেষ করার বিধান আছে; কিন্তু নানা কারণে তা বছরের পর বছর গড়ালেও শেষ হয় না। সম্প্রতি ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের কয়েকটি তোলপাড় করা ঘটনায় সরকার ধর্ষণের সাজা যাবজ্জীবন থেকে বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড করে অতি দ্রুততার সঙ্গে অধ্যাদেশ জারি করেছে। এরই মধ্যে একটি মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায় এসেছে। আরেক মামলায় সাত কর্মদিবসে রায় দিয়ে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন আদালত। কিন্তু ধর্ষণ তো থেমে নেই। সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ধর্ষণের ঘটনায় সালিশ করা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ধর্ষণের ঘটনায় গত পাঁচ বছরে সারা দেশে থানায় কত মামলা হয়েছে এবং কতটা বিচারের জন্য আদালতে পাঠানো হয়েছে, তার তথ্য জানাতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ধর্ষণের মামলা ১৮০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি, বিচার শুরু থেকে নিষ্পত্তি পর্যন্ত টানা বিচার কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হাইকোর্টের দেওয়া আগের নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের তিন মাসের মধ্যে এই প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশে সব অপরাধের বিচারের আইন আছে। ধর্ষণের মতো একটি জঘন্য অপরাধের বিচারের ভার সমাজপতিরা নিতে পারেন না। এটাও অপরাধ। এই তৎপরতা বন্ধ হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।