করোনাভাইরাস : হার্ড ইমিউনিটি নিয়ে কিছু ভুল ধারণা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ মার্চ মাসে যখন আমাদের দেশে করোনাভাইরাসের আবির্ভাব হয় ঠিক তখন থেকেই আমরা সবাই কেবল প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যেতাম না। ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে আমরা বাইরে থেকে সবকিছু ধুয়ে এবং পরিষ্কার করে ঘরে রাখতাম। তবে পরবর্তীতে লকডাউন উঠে গেলে এই প্রতিরোধ ব্যবস্থাগুলো ধীরে ধীরে শিথিল হয়ে আসে। বেশিরভাগ মানুষ বলে থাকে, ভাইরাসের আসা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ এতে হার্ড ইমিউনিটি গড়ে ওঠে। তবে তারা কমই জানেন যে এই কথাটি বোঝার ভুল। এমনটাই প্রকাশ করেছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।
করোনা ভাইরাস যখন মহামারী
যখন করোনা ভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করে তখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভাইরাস প্রতিরোধে হার্ড ইমিউনিটি বাড়ানোর ব্যাপারে সর্তক করেছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস এডহানম ঘেরবাইয়িস বলেছেন, “ করোনা মহামারী মোকাবেলায় জনস্বাস্থ্যের জন্য হার্ড ইমিউনিটিকে কখনোই ভাইরাস প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করা হয় নি। ডাব্লিউএইচও-এর মহাপরিচালক সোমবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন যে, স্বাস্থ্যকর্মীরা হার্ড ইমিউনিটির ব্যাপারটা লক্ষ্য রাখুন কারণ, যখন অধিকাংশ লোকই ভ্যাকসিন নেয়, তখন পুরো জনসংখ্যাই ভাইরাস থেকে রক্ষা পায়। টেড্রস উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করেছেন যে, হামের থেকে রক্ষা পেতে, প্রায় ৯৫% জনগণকে টিকা দিতে হবে।
হার্ড ইমিউনিটি কখন কাজ করবে
হার্ড ইমিউনিটি ব্যাপারটা তখনই কার্যকর হয় যখন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোক একটি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজের মাঝে তৈরি করে এবং এর প্রাদুর্ভাবটি কমিয়ে আনে। এরকম পরিস্থিতিতে, যদিও ভাইরাস প্রতিরোধে সবার সমান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নেই, তারপরও এর ফলে ভাইরাস সংক্রমণের প্রকোপ অনেকাংশেই কমে আসে। যদিও এটি সত্য যে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভ্যাকসিন দেয়ার মাধ্যমে বা নিজেই সংক্রমিত হয়ে অর্জন করা যেতে পারে, কিন্তু করোনার ক্ষেত্রে প্রতিরোধমূলক ভ্যাককসিন এখন অবধি বের না হওয়ায় এটি নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।
এর কোনো নিশ্চয়তা নেই যে, যারা করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে সুস্থ হয়েছে তারা সবাই প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করেছে। কারণ সুস্থ হওয়ার পরও পুনরায় সংক্রমিত হওয়ার অনেক ঘটনা রয়েছে, যা সন্দেহের সৃষ্টি করেছে ভাইরাস প্রতিরোধের স্থায়িত্বকাল নিয়ে।
সবাই ভ্যাকসিন না পাওয়ার প্রভাব
ভ্যাকসিনের কারণে পোলিও, হাম, চিকেনপক্স এধরণের সংক্রামক রোগগুলো এখন মানুষের খুব বেশি হয় না। এটি বলা হয়ে থাকে যে, যেসব লোকের ভ্যাক্সিনেশন করার সুযোগ হয়নি, তাদের জন্য হয়তো এসব সংক্রমিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। এর কারণ তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়নি।
হার্ড ইমিউনিটি থেকে আমরা এখনও অনেক দূরে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুসারে, জনসংখ্যার ১০% এরও কম করোনাভাইরাসের প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে, যার অর্থ বিশ্বের বেশিরভাগ অংশই ঝুঁকিপূর্ণ। টেড্রস আরও উল্লেখ করেছেন গত চারদিন ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশেষ করে ইউরোপ এবং আমেরিকাতে দৈনিক রেকর্ড-সংখ্যক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে।