সমুদ্রপথে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে আগ্রহী নন ব্যবসায়ীরা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ভারত সরকার পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের পর আটকে থাকা কিছু অবশিষ্ট পেঁয়াজ এক মাস পেরিয়ে গেলেও রফতানি করা হয়নি। তবে সম্প্রতি দুটি জাতের পেঁয়াজ সমুদ্রবন্দর দিয়ে রফতানির অনুমতি দিলেও ওই পথ দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে আগ্রহী হন হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারকরা। তারা বলছেন, সমুদ্রপথেই পেঁয়াজ আমদানি করতে হলে তারা ভারত থেকে না নিয়ে অন্য কোনো দেশ থেকে আমদানি করবেন।
হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রফতানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, হঠাৎ করে ভারত সরকার পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করার কারণে ব্যবসায়ীদের ২৫০ ট্রাকের মতো পেঁয়াজ আটকা পড়ে এবং ১০ হাজার টনের এলসি দেয়া ছিল সেটিও বন্ধ হয়ে যায়। এর পর থেকেই দেশের ব্যবসায়ীরা অবশিষ্ট পেঁয়াজগুলো আন্তর্জাতিক আমদানি-রফতানি নীতি অনুযায়ী রফতানির জন্য ভারতীয় রফতানিকারকদের চাপ প্রয়োগ করে আসছিলেন। কিন্তু ভারতীয় রফতানিকারকরা সেই পেঁয়াজগুলো রফতানি করতে পারছেন না। তারা বলছেন, সে দেশের সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা স্থলবন্দর দিয়ে কোনো পেঁয়াজ রফতানি করবেন না। বরং সমুদ্রবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ রফতানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রফতানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশীদ বলেন, সম্প্রতি ভারতীয় ব্যবসায়ীরা সমুদ্রপথে বেঙ্গালুরু রোজ ও কৃষ্ণপুরাম জাতের কিছু পেঁয়াজ রফতানির সিন্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু এটি আসলেই একটি বিব্রতকর ব্যাপার। আমরা ভারতীয় রফতানিকারকদের এখনো চাপ দিচ্ছি। আমরা কোনো সমুদ্রবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি করতে রাজি নই। আর যদি সমুদ্রবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ নিতেই হয়, তাহলে ভারত থেকে নেব কেন? অন্যান্য দেশে পেঁয়াজের দাম কম রয়েছে। আমরা সমুদ্রবন্দর দিয়ে মিসর, পাকিস্তান, তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি খুলেছি, সে প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এরই মধ্যে সেসব দেশ থেকে পেঁয়াজ আসা শুরু করেছে, যা দেশের মার্কেটেও প্রবেশ করেছে।
এদিকে এলসি খুলে রেখেও পেঁয়াজ আমদানি করতে না পেরে বিপাকে রয়েছেন এ বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা। হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক সাইফুল ইসলাম বলেন, অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের সংকট ও মুল্যবৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে গত ১৪ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয় ভারত। এর পাঁচদিন পর অনুমতি সাপেক্ষে আগের টেন্ডারকৃত ১৯ সেপ্টেম্বর ১১টি ট্রাকে ২৪৬ টন পেঁয়াজ রফতানি করে, যার অধিকাংশ পেঁয়াজ নষ্ট। এতে ব্যাপকভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন আমদানিকারকরা। এর পর থেকেই আটকে থাকা পেঁয়াজ রফতানি করতে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে আসছি। আমার নিজের দুই হাজার টনের পেঁয়াজের এলসি দেয়া রয়েছে, যার মধ্যে মাত্র ৫০০ টন পেঁয়াজ রফতানি করেছে তারা। বাঁকি দেড় হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি অবশিষ্ট রয়েছে। আমরা ব্যাংকে বাড়ি-জায়গাজমি বন্ধক রেখে ও ঋণ করে পেঁয়াজের এলসি করেছি। দীর্ঘদিনেও পেঁয়াজ না আসার কারণে ব্যাংক টাকা চাচ্ছে। টাকা না দিতে পারার কারণে যত দিন যাচ্ছে তত ব্যাংকের সুদ বাড়ছে। আমরা চাই দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ে বৈঠক করে আমাদের যেসব এলসি রয়েছে সেগুলোর পেঁয়াজ যেন তারা রফতানি করে।
হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন জানান, বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের কারণে হিলি স্থলবন্দরে গাড়ি প্রবেশের সংখ্যা কমে গেছে। এতে বন্দরের যে প্রতিদিনের আয় তা থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, একই সঙ্গে সরকারও রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।