আদালতের রায়ে পিতৃগৃহে ঠাঁই মিললেও আগুনে মৃত্যুপথে শিশু : ঘটনা নিয়ে পরস্পর বিরোধা অভিযোগ

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আদালতের রায়ের মাধ্যমে ও ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী পাঁচ বছরের শিশু আলআমিন পিতার বাড়িতে ঠাঁই পেলেও আগুনে পুড়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে এখন। ঘুমন্ত আলআমিনকে কে বা কারা দগ্ধ করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাকুড়া গ্রামে। এ ঘটনায় শিশুর নানি ও তার পিতা পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন।
শিশু আলআমিনের সর্বাঙ্গ ঝলসে গেছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্নইউনিটে স্থানান্তর করেছেন চিকিৎসকরা। অগ্নিদগ্ধ শিশুর নানী সাকিরননেছার দাবি, শিশুটির পিতা কিংবা তার লোকজন ঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। তবে তার পিতা দায়ি করছেন নানি সাকিরণনেছাকে। আলআমিন বাকুড়া গ্রামের বৃদ্ধা দাউদ হোসেন সর্দারের পুত্র। একই গ্রামের আবুল কালামের কন্যা নাসিমা খাতুন দাউদ হোসেনের বাড়ি গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করতেন। তখন তাদের দু’জনের শারীরিক সম্পর্কে ফসল হচ্ছে শিশু আলামিন। ৫ বছর আগে আলামিনের জন্ম হওয়ার পর দাউদ হোসেন তার পিতৃপরিচয় দিতে অস্বীকার করেন। তখন তার নানী সাকিরণ পিতৃপরিচয়ের দাবিতে আলামিনকে নিয়ে যশোরের আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলা চলে দীর্ঘ ৫ বছর। এ সময় আদালতের বিচারক দাউদ হোসেন ও আলআমিনের ডিএনএ পরীক্ষা করান। ডিএনএ পরীক্ষায় আলামিনের পিতা দাউদ হোসেন সর্দ্দার বলে প্রমাণিত হয়। খোরপোষ হিসেবে টাকা পান নাসিমা খাতুন। রায় পাওয়ার পর আলামিন ও তার মাতা নাসিমা খাতুন দাউদ হোসেনের বাড়িতে বসবাস করছিলেন। শিশুটির নানী সাকিরণ নেছা ও ওই বাড়িতে ছিলেন। গত বুধবার রাতে শিশু আলামিন ঘরে মশারির ভেতর ঘুমিয়ে ছিল। তার মাতা ও নানী ছিল ঘরে। কিন্তু কারোর কোন ক্ষতি হয়নি। অথচ শিশু আলামিনের কাঁথা-কাপড়ে আগুন লেগে তার সমস্ত শরীর ঝলসে গেছে। এ অবস্থায় রাত ৩টার দিকে আলামিনকে তার নানী সাকিরণনেছা যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে এনে ভর্তি করেন। হাসপাতালে ভর্তি করার পর আলামিনের অবস্থার অবনতি ঘটে। তখন শিশু সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক যশোর মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আনছার আলী, ডাঃ মাসফিকুর রহমানসহ শিশু সার্জারি বিভাগের সকল চিকিৎসক মিলে অগ্নিদগ্ধ আলামিনকে চিকিৎসা দেন। তার অবস্থা বেগতিক দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা অথবা ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত দেন। তবে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্তও স্থানান্তর করা সম্ভব হয়নি।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শিশুটির মুখমন্ডল, মাথা ও হাত-পাসহ সমস্ত শরীর আগুনে পুড়ে গেছে। শরীরের চামড়া উঠে মাংস বের হয়ে গেছে। কোথাও বাদ নেই তার। অবস্থা খুবই খারাপ। বেঁচে থাকার আশা খুব ক্ষীণ উল্লেখ করে তাকে রেফার্ড করা হয়েছে বলেও চিকিৎসকগণ জানিয়েছেন। এদিকে আলামিনের নানী সাকিরণ নেছার অতীত ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, দাউদ হোসেন সর্দারের ১ম স্ত্রী হচ্ছেন হাসিনা বেগম। ২য় স্ত্রী নাসিমা খাতুন। প্রথম স্ত্রীর এক ছেলে তিন মেয়ে। তারা কেউ নাসিমাকে দাউদের স্ত্রী ও আলামিনকে ছেলে হিসেবে মেনে নিতে চান না। আদালতে বিচারের মাধ্যমে আলামিনের পিতৃপরিচয় মিলেছে। তাই, তার ওই বাড়িতে ঠাঁই দিয়েছে। রাতে আলআমিনের নানি’র দাবি ঘরের দেয়ালের ফাঁক দিয়ে পাটকাঠিতে আগুন লাগিয়ে আলআমিনের বিছানায় আগুন দেয়। যে কারণে ঘরের ভেতর ঘুমিয়ে থাকা শিশু আলআমিনের খাটের ওপর মশারিসহ সব পুড়ে গেছে। এ ঘটনায় সাকিরণ নেছা দাউদ হোসেন সর্দ্দার ও তার স্বজনদের দায়ী করেছেন।
এদিকে হাজি দাউদ হোসেন সদ্দার জানান, এ ঘটনা মীমাংসার জন্যে তামান্নার মা সাকিরনকে ১২ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। সন্তানের সকল খরচ বহন করার দায়িত্ব নিয়েছেন। প্রতিমাসে সন্তানের ভরণ পোষণ দেন। সাকিরন তার কাছে আরও ১০ লাখ টাকা দাবি করছেন। টাকা দিতে অস্বীকার করায় আল-আমিনকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করে তাকে ফাঁসানো হচ্ছে। একই ঘরে সাকিরন ও আল-আমিন ঘুমিয়ে ছিলেন। আল-আমিন অগ্নিদগ্ধ হলেও সাকিরনের কিছু হয়নি। এটি বিশ্বাস করার মতো না বলে জানান দাউদ হাজি। মূলত তার কাছ থেকে নতুন করে টাকা আদায় করতে নতুন নাটক সাজিয়েছেন সাকিরন। এ ঘটনার সঠিক তদন্তের দাবি করেছেন তিনি।