সিলেটে ক্ষোভের পর মামলা রেকর্ড

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ রাত নামলেই আতঙ্ক বাড়তো সিলেটের রুবেল আহমদের পরিবারে। নেশা খেয়ে বাসায় এসেই হামলা চালাতো নেশাখোর, লম্পট আশুক। দৃষ্টি পড়েছিল ওই বাসার তরুণীর ওপর। নানা কুপ্রস্তাব, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করতো। ক’দিন আগেও তরুণীকে বাসার সামনের রাস্তায় টানাটানি করে। এসব ঘটনার প্রতিকার চেয়ে থানায় মামলার জন্য এজাহার দিয়েছিল রুবেলের পরিবার। কিন্তু আশুক ও তার লোকজন এলাকায় প্রভাবশালী। সাবেক এক কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতার আত্মীয়ও তারা।
এ কারণে পুলিশ মামলা নিতে নানা টালবাহানা করে। এক পর্যায়ে জিডি হিসেবে সেটি গ্রহণ করে। জিডি নিলেও একবার এসে তদন্ত করেনি। এরই মধ্যে বুধবার বিকালেই ঘটে আবার একই ঘটনা। ওই তরুণী বাসার বাইরে বের হলে তাকে টানাটানি করা হয়। ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদ করতে গেলে ভাই রুবেলকে করা হয় মারধর। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ হয়। মধ্যরাতে তারা সিলেটের মেডিকেল এলাকার ইমার্জেন্সি ফটকের কাছে সড়ক অবরোধ, টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে। সিলেট নগরীর পশ্চিম কাজলশাহ। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দেয়ালঘেঁষা নতুন একটি আবাসিক এলাকা। বর্তমানে সেটি ‘সোনার বাংলা’ আবাসিক এলাকা হিসেবে চিনেন সবাই। ওই এলাকার নেশাখোর, লম্পট আশুক খান। বয়স ৫০’র কাছাকাছি হবে। রাত হলেই নেশা করে মাতলামি করে এলাকায়। এ কারণে তাকে নিয়ে ভয়ে থাকেন এলাকার নিরীহ বাসিন্দারা। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- আশুক খান কয়েকদিন ধরে পাশের বাসার এক তরুণীকে উত্ত্যক্ত করছিল। সে নানাভাবে তাকে কুপ্রস্তাব দিয়ে যাচ্ছিল। দেখা হলেই নানা অঙ্গিভঙ্গি করে। কয়েকদিন আগে সে ওই তরুণীকে বাসার বাইরের রাস্তায় একা পেয়ে জাপটে ধরে। এসব ঘটনায় গত ৪ঠা অক্টোবর সিলেটের কোতোয়ালি থানায় তরুণীর পরিবারের পক্ষ থেকে এজাহার দাখিল করা হয়। এবং ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়- মামলা রেকর্ড করে আসামি গ্রেপ্তারের। কিন্তু পুলিশ ওই মামলা গ্রহণের নানা টালবাহানা করে। তারা মামলা রেকর্ড করবে না বলে জানিয়ে দেয়। এক পর্যায়ে অনুরোধের প্রেক্ষিতে ওই এজাহারটিকে জিডি হিসেবে গ্রহণ করে। ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান- পুলিশ এজাহারটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করেনি। পরে সেটিকে জিডি হিসেবে গ্রহণ করলেও কোনো কার্যক্রম চালায়নি। বুধবার মধ্যরাতে বিক্ষোভের সময় স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন- সাবেক এক কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতার আত্মীয় পরিচয় থাকার কারণে পুলিশ অভিযোগটিকে আমলে নেয়নি। বরং সেটিকে জিডি হিসেবে গ্রহণ করে ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে। ওই আওয়ামী লীগ নেতা অভিযোগ দাখিলের পর মামলা রেকর্ড না করতে সরাসারি পুলিশের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন বলে জানান তারা। এ কারণে পুলিশ সেটিকে মামলা হিসেবে রেকর্ড করেনি। এদিকে- পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় কার্যত গৃহবন্দি হয়ে পরে পরিবারটি। রাত হলেই তারা থাকতেন আতঙ্কে। মাদক সেবন করে আশুক গিয়ে বাসায় হানা দিতো। দরোজা, জানালায় আঘাত করতো। ওই তরুণীর নাম ধরে ডাকাডাকি করতো। এসব কর্মকাণ্ডে ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠেছিল ভুক্তভোগীর পরিবার। এই অবস্থায় গত বুধবার বিকালে বাসার ফটকের কাছে ওই তরুণীকে দেখতে পায় আশুক। এ সময় সে ওই তরুণীকে জাপটে ধরে টানাটানি করে। ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। তরুণীটি চিৎকার দিলে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করেন। পরে রাতে বাসায় ফিরে ঘটনার প্রতিবাদ জানান ভাই রুবেল আহমদ। এ সময় তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে আশুক ও তার লোকজন। তারা দলবদ্ধ হয়ে রুবেলকে মারধর করে। পরে এলাকার মানুষ গিয়ে রুবেলকে উদ্ধার করেন। এদিকে পুলিশে গিয়ে লাগাতার এই ঘটনার প্রতিকার না পেয়ে মধ্যরাতে এলাকার লোকজন মেডিকেল এলাকার সড়কে ফুলকলির সামনে রাস্তা অবরোধ করে। এ সময় তারা রাস্তার টায়ার জ্বালিয়ে অগ্নিসংযোগ করে। বিক্ষোভকালে তারা ঘটনাকারী আশুক ও রুবেলের ওপর হামলাকারী আহমদসহ কয়েকজনের গ্রেপ্তার দাবি করেন। খবর পেয়ে কোতোয়ালি থানা পুলিশ গিয়ে ন্যায় বিচারের আশ্বাস দিলে প্রায় এক ঘণ্টা পর সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়। এ ঘটনায় রাতেই ধর্ষণের চেষ্টাকারী আশুক খানকে আসামি করে সিলেটের কোতোয়ালি থানায় ওই তরুণীর মা এজাহার দেন। পুলিশ রাতে সেটিকে মামলা হিসেবে রেকর্ড করে। তবে মামলা রেকর্ড হলেও গ্রেপ্তার হয়নি আশুকসহ তার সহযোগীরা। ওই তরুণীর ভাই রুবেল আহমদ জানিয়েছেন, কয়েকদিন আগে অভিযোগ দিলেও পুলিশ সেটিকে মামলা হিসেবে রেকর্ড করেনি। বরং জিডি দায়ের করে দায় এড়িয়ে যায়। বুধবারের ঘটনা তাদের অবগত করলেও তারা ব্যবস্থা নেয়নি। এ কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীরা রাস্তা অবরোধ, বিক্ষোভ করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিলেটের কোতোয়ালি থানার এসআই দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, মামলা রেকর্ডের পর পুলিশ আসামি গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু আসামিদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মামলা দায়েরের পর থেকে পুলিশ সক্রিয় রয়েছে বলে জানান তিনি। তবে বিক্ষোভের পর মামলা গ্রহণের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সিলেটের লামাবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই কামাল হোসেন। তিনি জানিয়েছেন, তারা থানায় এজাহার না দিয়েই রাস্তায় বিক্ষোভ শুরু করে। এ কারণে পুলিশ তাদের দ্রুত এজাহার জমা দেয়ার অনুরোধ জানায়। এর প্রেক্ষিতে তারা অভিযোগ দিলে সেটিকে মামলা হিসেবে রেকর্ড করে পুলিশ। তিনি জানান, কারো প্রভাবে পুলিশ প্রভাবিত হয় না। আইনের ভিত্তিতে যা করা প্রয়োজন পুলিশ তাই করবে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এলাকায় নেশাখোর বখাটে হিসেবে আশুক পরিচিত। গাঁজা, ইয়াবাসহ নানা মাদকে আসক্ত সে। তাদের ভাড়াটিয়া কলোনি রয়েছে। এসব কলোনিতে বসবাসকারী নারীদের ঘরে প্রায়ই হানা দেয় সে। গোসলে ঢুকলে নারীদের বাথরুমে জোরপূর্বক ঢুকে পড়ে। কয়েকদিন আগে উল্টো পাশের বাসায় এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটিয়েছিল। পরে তার বড় ভাই, এলাকার মুরব্বি এবং স্থানীয় মসজিদের মোতওয়াল্লি মাসুক মিয়া সেটির সমাধান করে দিয়েছেন। স্থানীয় ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর একে আজাদ লায়েক জানিয়েছেন, ‘ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনাটি আমি শুনেনি। আগেও এলাকায় এ ধরনের অনেক ঘটনার খবর এসেছে। সামাজিকভাবে শেষ হয়েছে বলে শুনেছি।’ তিনি বলেন- ‘কেউ ধর্ষণ কিংবা ধর্ষণের চেষ্টার মতো ঘটনা ঘটালে এলাকার মানুষ তার সঙ্গে থাকবে না। বরং সামাজিকভাবে ধর্ষকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সময় এখনই।’