প্রতিশ্রুতি দেয়া নয়, রক্ষাই মূল কথা

0

ভারত সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা বন্ধে আবারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারতের সীমান্তরী বাহিনী, (বিএসএফ) প্রধান। ঢাকায় অনুষ্ঠিত চার দিনব্যাপী বিজিবি-বিএসএফের ৫০তম আনুষ্ঠানিক বৈঠক শেষে এক যৌথ বিবৃতিতে এই আশাবাদ ব্যক্ত করা হয় অতি সম্প্রতি। বিএসএফ অবশ্য অতীতেও একাধিকবার এই অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। যদিও তথ্য-পরিসংখ্যানে এ প্রতিশ্রুতি রক্ষার প্রমাণ মেলে না। গত বছর (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) সীমান্তে বিএসএফের গুলি নির্মম নির্যাতনে মারা গেছে ২৮ বাংলাদেশী। অন্যদিকে, চলতি বছরের সাড়ে আট মাসে বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্তে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৩৯ বাংলাদেশীর। তাদের মধ্যে ৩২জন বিএসএফের গুলিবর্ষণে এবং বাকি ৫ জনের শারীরিক নির্যাতনে। এই তথ্য মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র আসকের। দেখা যাচ্ছে যে, করোনার কারণে উভয় দেশে লকডাউন, সাধারণ ছুটি সীমান্তসহ যাতায়াত বন্ধ সত্ত্বেও হত্যা-নির্যাতন থেমে থাকেনি। অবশ্য নদী-নালা, পাহাড়-পর্বত-জঙ্গল পরিবেষ্টিত সুদীর্ঘ চার হাজার কিলোমিটারের বেশি সীমান্ত একেবারে নিচ্ছিদ্র ও নিরাপদ রাখা দুঃসাধ্যও বটে। তদুপরি দু’দেশের সীমান্ত পথে যে প্রতিনিয়তই অবৈধ লোক চলাচল, চোরাচালান, অস্ত্র ও মাদক এমনকি সোনা-রুপার লেনদেন ঘটে চলেছে, তা স্বীকার করেছেন বিজিবি-বিএসএফ প্রধান উভয়ই। এও সত্য, চোরাচালানসহ অধিকাংশ ঘটনা ঘটে থাকে রাতের আঁধারে, যখন দৃশ্যমানতা কম থাকে। মাঝে মধ্যে চোরাচালানি, সন্ত্রাসীদের সঙ্গে ছোটখাটো সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে, তবে বাংলাদেশী হত্যার পর তারা প্রচার করে। অবশ্য ভারতীয় হত্যার কোনো দাবি তারা করতে পারে না। খুনটা ঘটে কার্যত এক তরফা। বিএসএফের কতিপয় সদস্যের আহতের খবরও আছে। তবু পারস্পরিক সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা থাকলে সরাসরি উপর দিকে গুলি না চালিয়ে তারা নিচের দিকে করতে পারে। অথবা, নন-লেথাল বা প্রাণঘাতী নয় এসব অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে। সীমান্তে দুটি দেশের যৌথ টহলদারির মাধ্যমেও এই অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়ানো যায়। সীমান্ত হত্যার পাশাপাশি মাদক নিয়ন্ত্রণ তথা চোরাচালানও একটি বড় সমস্যা। বিএসএফ প্রধান নিজেই স্বীকার করেছেন, ভারত থেকে সীমান্ত পথে বাংলাদেশে ফেনসিডিল, ইয়াবা ও হিরোইন আসছে। মাদক বাংলাদেশের জন্য বড় একটি সমস্যা। দু’দেশের সীমান্তরী বাহিনী আন্তরিক ও সচেষ্ট সৎ হলে মাদকের চোরাচালান সর্বাংশে না হোক, বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। প্রাণহানী ছাড়াই বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ে বৈঠকে ১৪টি বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হলেও অন্যতম প্রধান ইস্যু হয়ে ওঠে সীমান্ত হত্যা। এেেত্র আগামীতে বন্ধু ও ভ্রাতৃপ্রতিম দু’দেশের সীমান্তে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি বাস্তবায়িত হবে বলেই প্রত্যাশা করে দু’পক্ষ ভারতীয় পক্ষ প্রাণঘাতি অস্ত্র ব্যবহার প্রতিশ্রুতি দেয় আরও একবার।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিছুদিন আগে খোলাখুলিই বলেছিলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক রক্তের, যা মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গভীরভাবে গ্রথিত। সেদিক থেকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের গভীর সখ্য ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। তাই বলে সমস্যাও কিন্তু কম নেই, যেমন দীর্ঘদিন থেকে ঝুলে থাকা তিস্তা চুক্তি, সীমান্ত হত্যা, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে সহযোগিতা বৃদ্ধি, বাণিজ্য ব্যবধান হ্রাস, সর্বোপরি ভারতীয় আট বিলিয়ন ডলারের আর্থিক ঋণ দ্রুত ছাড়ের ব্যবস্থা অন্যতম। মনে রাখতে হবে, ভারত মনু নদীর পানি নিলেও ২০১৫ সালে প্রতিশ্রুত তিস্তা চুক্তি ঝুলিয়ে রেখেছে অদ্যাবধি। যে কারণে বাংলাদেশ তিস্তা নদী প্রকল্পে চীন থেকে ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ ঋণ নিতে যাচ্ছে। অতঃপর এসব সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে ভারতকেই। সীমান্তে হত্যা বন্ধ হলে এটি হবে একটি ইতিবাচক অগ্রগতি। আমরা আশা করি, ভারত আমাদের আন্তরিকতার মূল্য দিয়ে বন্ধুত্ব করবে। তারা মোড়লসূলভ আচরণ বন্ধ করে এক সাথে চলবে।