৮৪ বছর পর স্পেনে ফাতি নামের একজন….

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ একটুর জন্য। একটুর জন্য দুটি রেকর্ড নিজের করে নিতে পারলেন না আনসু ফাতি। তবে স্পেনের হয়ে অভিষেক ম্যাচেই গিনি-বিসাউ বংশোদ্ভুত বার্সেলোনার তরুণ ফরোয়ার্ড প্রতিশ্রুতি দিলেন, সামনে অনেক রেকর্ডই তার ‘একক সম্পত্তি’ হবে। বৃহস্পতিবার স্পেনের হয়ে অভিষেক হয়েছে আনসু ফাতির। উয়েফা নেশনস লিগে জার্মানির বিপক্ষে ম্যাচের ৪৬ মিনিটে কোচ লুইস এনরিকে যখন ফাতিকে নামিয়ে দিলেন, তার বয়স ১৭ বছর ৩০৮ দিন। ৮৪ বছর পর এত কম বয়সে কোনও ফুটবলার গায়ে তুললেন স্পেনের জার্সি। ১৯৩৬ সালে প্রাগের মাঠে চেকোশ্লোভাকিয়ার বিপক্ষে যখন স্পেনের হয়ে অভিষেক হয়েছিল আনহেল জুবিয়েতার, তার বয়স ছিল ১৭ বছর ২৮৩ দিন। অর্থাৎ বয়স আর মাত্র ২৬টি দিন কম হলে স্পেনের হয়ে সর্বকনিষ্ঠ অভিষিক্ত ফুটবলারের স্বীকৃতি পেয়ে যেতেন ফাতি। পৃথিবীটা এ বছর করোনা নামের অদ্ভূত অসুখে আক্রান্ত না হলে রেকর্ডটা নিশ্চয়ই হতো। এর আগে বা্র্সেলোনার হয়ে লা লিগায় অভিষেকেও অল্পের জন্য ‘প্রথম’ হতে পারেননি। ২৫ আগস্ট, ২০১৯, ন্যু ক্যাম্পে রিয়াল বেতিসের বিপক্ষে তার অভিষেক ম্যাচে ফাতির বয়স ছিল ১৬ বছর ২৯৮ দিন। মাত্র ১৮টি দিনের ব্যবধানে ভিসেঙ্ক মার্তিনেজ ‘সর্বকনিষ্ঠের’ রেকর্ডটি গড়েছেন ১৯৪১ সালে।
তবে হ্যাঁ, এর পরই বার্সেলোনার হয়ে কয়েকটি ‘প্রথমে’ নাম তুলেছেন এই ‘বিস্ময়বালক’। ৩১ আগস্ট, ২০১৯, ওসাসুনার মাঠে ২-২ ড্র ম্যাচে বার্সেলোনার হয়ে প্রথম গোল করেন। সেদিন তার বয়স ছিল ১৬ বছর ৩০৮ দিন। বার্সেলোনার ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ হলেও লা লিগায় তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা। এই ‘তৃতীয়’ হওয়াটা পছন্দ হয়নি তার। প্রথম হওয়ার জন্য ১৪ দিন পর, ১৪ সেপ্টেম্বর একই ম্যাচে গোল ও গোলে সহায়তা করলেন। লা লিগার ইতিহাসে রেকর্ড। ম্যাচর দ্বিতীয় মিনিটে গোল করার পর সতীর্থ ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংকে গোল বানিয়ে দেন সপ্তম মিনিটে। ঘরের মাঠে ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি ৫-২ গোলে জেতে বার্সেলোনা। ২০১৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বার্সেলোনার সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে অভিষেক হয় চ্যাম্পিয়নস লিগে। বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের মাঠে গোলশূন্য থাকা ম্যাচটির দিনে ফাতির বয়স ছিল ১৬ বছর ৩২১ দিন। বোজান কিরকিচকে (১৭ বছর ২২ দিন) টপকে বার্সেলোনার সর্বকনিষ্ঠ হতে পারলেও চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে অভিষিক্ত তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় ফাতি। এই ‘তৃতীয়’ তকমাটা আবারও হয়তো তাকে একটু জ্বালিয়েছে, তাই ডিসেম্বর গড়াতেই নতুন কীর্তি। ইন্টার মিলানের বিপক্ষে গোল করে হয়ে যান চ্যাম্পিয়নস লিগের সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা। ১০ ডিসেম্বর, ২০১৯, তার গোলেই বার্সেলোনা সান সিরোতে জেতে ২-১ গোলে, ওই দিন ফাতির বয়স ছিল ১৭ বছর ৪০ দিন।
গিনি-বিসাউ ছিল পর্তুগালের উপনিবেশ। সেই সুবাদে ফাতির বাবা আবেদন করলেই পর্তুগালের নাগরিকত্ব পেয়ে যেতেন। আনসুর বাবা বোরি ফাতি মুখে একবার কথাটা তুলেওছিলেন যে ছেলের গায়ে পর্তুগালের জার্সি গায়ে উঠলেই তিনি খুশি হবেন। কিন্তু স্পেন এই মুক্তোটিকে হারাতে চায়নি। গত বছরই (২০ সেপ্টেম্বর) তাকে নাগরিকত্ব দেয় স্পেন সরকার। এ বছর ২০ আগস্ট জাতীয় দলের স্কোয়াডে ডাক পান। আর ৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায়ই তার অভিষেক হয়ে গেল স্পেনের রক্ত-লাল জার্সিতে। মাঠে নেমেই দলের খেলায় গতি আনেন ফাতি। আক্রমণে ধার বেড়ে যায় লা রোহাদের। এর আগে হচ্ছিল কী, বল দখল বেশি ছিল স্প্যানিশদের, যা দলটির বরাবরের বৈশিষ্ট্য, কিন্তু খেলার মধ্যে সরাসরি গোল করার তাড়না মানে ডিরেক্ট ফুটবল ছিল না। হেসুস নাভাসের পরিবর্তে মাঠে নামার পর সেই `ডিরেক্ট ফুটবল’ যেন দেখা যায়। খেলার যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে একটা গোলও তার নামের পাশে যোগ হতে পারতো যদি ইতালিয়ান রেফারির আনুকূল্য পেতেন। তার হেডে বল জালে জড়ানোর আগে আগেই বাঁশি বাজে রেফারির। বলে হেড করতে উঠে বক্সে জার্মান এক ডিফেন্ডারকে ফাউল করে বসেন সার্জিও রামোস! নেশনস লিগে ‘ভিএআর’ নেই। ধারাভাষ্যকাররা বলছিলেন ভিএআর থাকলে ফাতির গোলটি বাতিল নাও হতে পারতো। তাহলে বিতর্কিত গোলে জার্মানির সঙ্গে ম্যাচ ড্র করার (১-১) দায়টা নিতে হতো না স্পেনকে। অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়েছিল ৪ মিনিট, গায়া স্পেনের সমতাসূচক গোলটি করেছেন ষষ্ঠ মিনিটে! তবে এই গোল নিয়ে যতই বিতর্ক থাক, ফাতির অভিষেকের আলো তাতে একটুও ম্লান হয়নি।