চামড়া রপ্তানিতে গতি নেই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে

0

বেশ কয়েক বছর ধরেই চামড়ার দাম অস্বাভাবিক রকমের কম। এর সন্তোষজনক ব্যাখ্যা পাওয়া কঠিন। কোরবানির পশুর চামড়ার দাম সর্বকালের সর্বনিম্নে রয়েছে। তার পরও সরকারের নির্ধারিত দামে কিনছেন না ট্যানারি মালিকরা। ছোট-মাঝারি অনেক চামড়া বাতিল বলে তাঁরা নামমাত্র দামে কিনে নিচ্ছেন। ন্যায্য দাম না পাওয়া গেলে ওয়েট ব্লু বা পশম ছাড়ানো চামড়া রপ্তানির সুযোগ দেওয়া হবে না বলেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর পরও তেমন সাড়া নেই ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে।
চামড়া ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, লবণযুক্ত চামড়া বা ওয়েট ব্লু রপ্তানির সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে বটে, তবে বিষয়টি খুব সহজ নয়। তাঁরা বলতে চান, বিশ্ববাজারে চামড়ার চাহিদা কম, কৃত্রিম চামড়ার প্রভাব এবং বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের চামড়া খাতের ভাবমূর্তি সংকটও রয়েছে। বিশ্ববাজারে এই চামড়ার তেমন কদর নেই। ভারত ও পাকিস্তান আগে কাঁচা চামড়া নিত। এখন কৃত্রিম চামড়ার প্রভাবে ওয়েট ব্লু চামড়ায় তাদেরও আগ্রহ নেই। এসব বিকোতে হলে ব্র্যান্ড বায়ার লাগবে। কমপ্লায়েন্সের কারণে তারাও বাংলাদেশ থেকে চামড়া নিতে চায় না। তা ছাড়া রপ্তানির প্রক্রিয়া জটিল; অনুমোদনসহ অন্য সব প্রক্রিয়ায় আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও হয়রানি আছে। এসব কারণ দেখিয়ে রপ্তানির ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ দেখান না ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) ভাষ্য, লবণযুক্ত চামড়া তারা কিনতে শুরু করেছে। একেকটি চামড়া তারা কিনছে গড়ে ৫০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকায়; চলতি বছর ৭০ থেকে ৭৫ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে। এবার ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ চামড়া কম সংগৃহীত হয়েছে। বিশ্ববাজারে ফিনিশ লেদারের চাহিদা আছে বটে, তবে কৃত্রিম চামড়া একটি বড় সমস্যা। ক্রেতারা ওয়েট ব্লু কেনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। দেশের চামড়া নিয়ে বিশ্ববাজারে ভাবমূর্তির সংকটও আছে। গতবারের অনেক চামড়া এখনো বিক্রি হয়নি। তাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চাইলেও চামড়া রপ্তানিতে গতি আনা কঠিন।
করোনার একটি নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে; কিন্তু সেটি কাটতে শুরু করেছে। নতুন কার্যাদেশও আসছে। সমস্যা হচ্ছে, কাঁচা চামড়া (ওয়েট ব্লু নয়) রপ্তানিতে সরকারি নিষেধাজ্ঞা। মূল লাভের জায়গাটিই বন্ধ। সরকারি সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী নয়, তবে ব্যবসায়ীরা চান কাঁচা চামড়া বেচতে। ঝামেলা মূলত সেখানেই। এ কারণেই সংকট। এই সংকট চামড়া খাতের ব্যবসায়ীদের তৈরি বলে ধারণা করা হয়। সরকারকে বিষয়টি ভালো করে খতিয়ে দেখতে হবে।