চোরদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মানুন

0

মানুষকে ঘরে আটকে রাখা আসলেই কঠিন। অনেক েেত্র প্রায় অসম্ভব বলেও প্রতীয়মান হয়। ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত একটানা ছুটি, জরুরী সার্ভিস ব্যতিরেকে অফিস-আদালত, শিল্প-কলকারখানাসহ প্রায় সবকিছু বন্ধ থাকার পরও মানুষ বের হয়ে আসছে রাস্তায়। নিতান্ত প্রয়োজনে যেমন, ওষুধ বা খাদ্য কেনা অথবা জরুরী চিকিৎসা সেবার জন্য বাইরে আসা অপরিহার্য হলেও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে মানুষ একেবারে অকারণেও বের হয়ে আসছে রাস্তায়। আর শুধু একা নয়, অনেক েেত্র দলে দলে-পায়ে হেঁটে অথবা অন্যবিধ উপায়ে। এ রকম প্রায় জনসমুদ্রতুল্য দৃশ্য প্রত্য করা গেছে ৪ এপ্রিল ছুটি শেষ ও প্রলম্বিত করার অবকাশে। তখন গার্মেন্টস শ্রমিকদের এর আগে দলে দলে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে রাজধানীতে যেতে দেখা যায়। আবার ছুটির মেয়াদ বাড়াতে দলে দলে ছুটেও যায় গ্রামের বাড়িতে। এতে করোনা সঙ্কটজনিত সমস্যা সমাধানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, নিরাপত্তা বিধান ও সঙ্গনিরোধ কার্যক্রম রীতিমতো হুমকির মুখে পড়ে। ঢাকার সব ওয়ার্ডে করোনা ছড়িয়ে পড়ে। অতঃপর বাধ্য হয়ে সরকার ও প্রশাসন লকডাউন নিশ্চিত করতে গ্রহণ করে কঠোর ব্যবস্থা। রাজধানী ঢাকা ইতোমধ্যে লকডাউন হয়েছে। তারপরও লোক ঘুরছে। এবার লকডাউন বরা হচ্ছে বিভিন্ন জেলায়। যে কোন মূল্যে মানুষের যাতায়াত ও চলাচল যথাসম্ভব সীমিত করার চেষ্টা হচ্ছে। দুঃখজনক ঘটনা হচ্ছে রাষ্ট্রপতির নির্দেশে পরও সন্ধ্যার পর অলিতে-গলিতে লোক ঘুরতে দেখা যাচ্ছে।
এদিকে করোনা চিকিৎসায় সমন্বয়হীনতার অভিযোগ উঠেছে। প্রথমত, করোনা নির্ণয়ের জন্য দেশে কোন কিট ও পিপিই-মাস্ক ইত্যাদি ছিল না। পরে গণস্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন পোশাক কারখানায় সেসব তৈরি হলেও হাসপাতাল ও কিনিকগুলোতে তা সরবরাহে তেমন কোন সমন্বয় হয়নি বললেই চলে। ফলে স্বভাবতই চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি এখনও রয়েছে। বিশেষ করে বেসরকারী হাসপাতালগুলো করোনা সন্দেহে সাধারণ জ্বরের রোগী দেখতেও অনীহা দেখিয়েছে। তবে বর্তমানে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। আবার করোনা আক্রান্তের সংক্যাও বাড়ছে। বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। সঙ্গত কারণেই বাড়ছে ভীতি।
অন্যদিকে করোনা সঙ্কটে সর্বাধিক বিপদ ও অনিশ্চয়তার মুখে রয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশীরা। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশী এরমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন করোনাক্রান্ত হয়ে। অনেকে দেশে ফিরে আসার জন্য উদগ্রীব। তবে বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় ভবিষ্যত হয়ে পড়েছে অনিশ্চিত। এদিকে, মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ থেকে বাংলাদেশীদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য চাপও রয়েছে সরকারের ওপর। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে । সব মিলিয়ে আগামী দিনগুলো সবার জন্যই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও দুর্ভাবনার বৈকি।
করোনাভাইরাসজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতি ও সঙ্কট মোকাবেলায় স্বাস্থ্য বিভাগ ছাড়াও প্রধানমন্ত্র পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন সময়ে সময়ে। সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে সরকারিভাবে কিছু প্যাকেজও ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ছয় মাস পর্যন্ত প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য ও আর্থিক প্রণোদনা দুর্গতদের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দেয়া, দশ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি, টিসিবির মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রি ইত্যাদি। মাঠপর্যায়ে কাজটি বাস্তবায়ন করতে হচ্ছে ডিসি এবং টিএনও অফিসকে। এ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, সে েেত্র আদৌ কোন দুর্নীতি-অনিয়ম সহ্য করা হবে না, বরং কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অথচ প্রতিদিন ধরা পড়ছে ত্রাণের চাল চুরি। শত শত বস্তায় হাজার হাজার কেজি চালসহ ধরা পড়ছেন সরকার দলীয় নেতা ও চেয়ারম্যান, মেম্বর। তবে বিশেষ কোন কঠোরতা দেখা যাচ্ছে না প্রশাসনের। এতে অনেক রকম প্রশ্ন জাগছে জনমনে। আমরা আশা করবো, প্রশাসন এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা কার্যকর করতে কোন দ্বিধা করবে না।