ভারত থেকে ফেরা তাবলিগের ১২ মুসল্লিসহ আক্রান্ত ৫৮ : মৃত্যুর পর ২ জনের করো শনাক্ত

0

বিএম আসাদ ॥ যশোরে ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) আক্রান্তের সংখ্যা। ভারত হতে আসা ১২ জন তাবলীগ জামাতের মুসল্লিস এ জেলায় গতকাল ৫৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এদিকে, আইসোলেশনে মারা যাওয়া দু’জনের নমুনা েিপার্ট পজেটিভ এসেছে।
যশোর সিভিল সার্জন অফিসের এমওসিএস ডা. রেহনেওয়াজ জানিয়েছেন, গতকাল যশোরে কোভিড-১৯ সংক্রমণে নতুন আক্রান্ত হয়েছেন ৫৮ জন। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১শ’ ৬টি নমুনা পরীক্ষায় কোভিড-১৯ সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৪ জন। খুনা মেডিকেল কেলজ থেকে ৫০টি নমুনা পরীক্ষায় আক্রান্ত হন ১৪ জন। সোহরাবে হাসেন (২৯) ও মাসফুরা (৭৫) নামে দু’জনের যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের আইসোলেশনে মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ওই নমুনা যবিপ্রবিতে পরীক্ষা শেষে তারা করোনায় আক্রান্ত বলে প্রমাণ মিলেছে। সোহরাব হোসেনের বাড়ি সদর উপজেলার সুজলপুরে। তিনি ওই গ্রামের নওশের আলীর পুত্র। ১৭ আগস্ট ৩টা ৪০ মিনিটে তাকে করোনা পুরুষ আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছিল। এদিন বিকেল সাড়ে ৪টায় তার মৃত্যু হয়েছিল। অপরদিকে, সদর উপজেলার মাসফুরা (৭৫) নামে এক বৃদ্ধা গত ১৮ আগস্ট মারা গেছেন। ওইদিন দু’জন দু’জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। তাদের নমুনা পরীরক্ষার রিপোর্ট এসেছে করোনায় আক্রান্ত হিসেবে। সাড়ে ৮টার দিকে মারা যান চৌগাছা উপজেলার বর্নি গ্রামের আয়ুব হোসেন (৬০)। এদিন ভোর ৪টার দিকে তাকে আইসোলেশনে ভর্তি করা হয়েছিল। কাল বিকেল ৪টার দিকে পুরুষ আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসেম বিশ্বাস (৬৫) নামে এক বৃদ্ধ মারা গেছেন। দুপুর ১টার দিকে তাকে করোনা সন্দেহে দুপুর ১টার দিকে তাকে ভর্তি করা হয়েছিল। তার মৃত্যুর পর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। হাসেম বিশ্বাসের বাড়ি নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়ীয়া গ্রামে।
সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানিয়েছেন, গতকাল নতুন আক্রান্তদের ভেতর যশোর সদরে বরাবরের ন্যায় বেশি আক্রান্ত হয়েছে। যার সংখ্যা ৪০ জন। ঝিকরগাছায় ১২ জন ও কেশবপুরে ৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়। ঝিকরগাছায় আক্রান্ত ১২ জনই ভারত থেকে ফেরত আসা তাবলীগ জামাতের মুসল্লি। ঝিকরগাছায় গাজীর দরগাহ মাদ্রাসায় কোয়ারেন্টাইনে অবস্থানকালে ৬৭ জনের ভেতর গত ১৯ আগস্ট ২৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। এ নমুনা পরীক্ষা শেষে ১২ জন করোনায় আক্রান্ত হন। তাদের সকলের বাড়ি বাংলাদেশে। আক্রান্তরা হচ্ছেন- রাহেলা বেগম (৪২), জাহানারা আক্তার (২৯), হাবিবুর রহমান (৬১), আল-আমিন (৩৩), ফেরদৌস আল-মামুন (২৩), হাসান উল্লাহ (৩৩), হাফিজুর রহমান (৩৫), একে ফয়জুল হক (২৭), জায়েদা গেম (৫৫), সাইফুল ইসলাম (২৫), রফিকুল ইসলাম (২৭) ও রওশন আহসান মোহন (২৬)। ঝিকরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. মো. হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, করোনা পরিস্তিতিতে বিদেশ হতে আগতদের জন্য গত ৮ আগস্ট গাজীর দরগাহে মাদ্রাসায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টানের কাজ শুরু হয়েছে। এ র্পায়ে ভারত থেকে ২শ’ ৬৭ জন তাবলিগের মুসল্লি দেশে ফেরত আসার কথা ছিল। এর ম্েযধ ৭২ জন ফেরত আসেন। অন্যরা যে কোন কারণে আসেননি। ফেরত আসা সকলকে ওই কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছিল। এর ভেতর গত ১৯ আগস্ট ২৩ জন, ২০ আগস্ট ২৩ জন ও ২১ আগস্ট ২২ জন করে ৬৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ১৯ আগস্টে সংগ্রহ করা ২৩ জনের ভেরত ১২ জন মুসল্লির শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। কোভিড-১৯ এ আক্রান্তদের গতকালই বক্ষ্যব্যাধি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জেলায় কোভিড-১৯ সংক্রমণে আক্র্তা অন্যরা হলেন- যশোর সদর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদকআবুল কালাম আজাদ (৩৩)। তার বাড়ি আগ্রাইল গ্রামে। করোনা সন্দেহে গত ২০ আগস্ট সকালে তাকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছিল।
আরও আক্রান্তরা হলেন- যশোর শহরের ঘোপ নওয়াপাড়ার চিকিৎসসক ফারহানা মিতু (২৬), পুরাতন কসবা কাজীপাড়ার যুবক আব্দুল্লাহ (১৮), সানজিদা (৪৪), নলডাঙ্গার রোডের লুৎফুন্নেছা (৫৫), খড়কির ইয়াসিন (২৭), নীলগঞ্জের চাকিয়া খন্দকার (৬০), লোন অফিসপাড়ার ওলিউল ইসলাম (৪৩), কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা বিরামপুরের জামাল উদ্দিন (৫০), বাহাদুরপুরের আনোয়ার ইউসুফ (৩৭), ভেকুটিয়া মোমিনুর রহমান (৪০), ইসরাত জাগান (৫০), কুয়াদা বাজারের নুরুল ইসলাম (৬০), ওসমানপুরের ডালিম (৩৩), ২৫০ শয্যা হাসপাতালে কর্মরত আবু সায়েদ (৫৪), দক্ষিণ আড়পাড়ার জান্নাত আলী (৭০), ভেকুটিয়ার মিথুন (৪৫), ধর্মতলার রেবেকা (৫৩), তসলিম (৫০), সুজলপুরের সেলিম (৩২), নতুনহাটের আকিমুল (৩৫), শাখারিগাতীর মাহবুব (৩৮), উপহর কাব মোড়ের মহসিন (২০), আরবপুরের সোহাগ হোসেন (৩৫), নুরুন্নাহার (৪২), লিচুবাগার এলাকার পুলিশ সদন্য তন্ময় দাস (৩০), খাজুরার তহমিনা (৩০), সুজলপুরের সোহরাব (২৯), রঘুনাথপুরের আলেয়া (৬০), দুর্গাপুরের আবু সিদ্দিক (৫০), ঝিকরগাছার গঙ্গানন্দপুরের শামসুল হুদা (৫৫), ফিরোজ (৩৫), চৌগাছার আবু সিদ্দিক (৫০), মনিরামপুরের বাকিবিল্লাহ (৪০), আজিজুর রহমান (৬৫), ইজ্জত আলী (৪৫), শার্শার নাজমুল (৬০), কেশবপুরের শাহাপুরের কালীপদ পাল (৫০), অনিল বিশ্বাস (৪০), কালিয়ারোই গ্রামে শেখ আনসার আলী (৬০), কেশবপুরে সোনালী ব্রাংকেকর্মরত সাকিব (২৮), আতাপোলের জোহরা বেগম (৬৫), ঝিনাইদহের জান্নান আলী (৫০), রোকন (৩৫)। এছাড়া আক্রান্ত কয়েকজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। করোনা সন্দেহে গতকাল আরও ১শ’ ৮৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।