ময়নাতদন্ত রিপোর্ট সিএস অফিসে পাঠিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ: যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে তিন বন্দি হত্যায় অভিযুক্ত ৫ কর্মকর্তাই বরখাস্ত

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পৈশাচিক নির্যাতনে বন্দি কিশোর হতাহতের ঘটনায় আটক উপ-তত্ত্বাবধায়ক (প্রবেশন অফিসার) মাসুম বিল্লাহসহ আরও ৪ কর্মকর্তাকে গতকাল সোমবার সাময়িক বরখাস্ত করেছে কর্তৃপক্ষ। এর আগে আটক কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক (সহকারী পরিচালক) আব্দুল্লাহ আল মাসুদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। এ নিয়ে অভিযুক্ত ৫ জনকেই বরখাস্ত করা হলো।
এদিকে নিহত ৩ বন্দি কিশোরের মাথায় রক্ত জমাটের প্রমাণ মিলেছে। আর নিতম্ব জুড়েও ছিল একইভাবে রক্ত জমাট বাঁধা। পুলিশ ও চিকিৎসকের সাথে আলাপকালে বন্দি কিশোরদের এমন লোমহর্ষক নির্যাতনের তথ্য মিলেছে। ইতোমধ্যে নিহতদের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সিভিল সার্জন (সিএস) অফিসে পাঠিয়ে দিয়েছে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে এই রিপোর্ট হাতে পাননি বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। অপরদিকে ৩ বন্দি কিশোর হত্যা মামলায় আটক শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের দুই কর্মকর্তার রিমান্ড আজ মঙ্গলবার শেষ হচ্ছে। তাদের কাছ থেকে হত্যার ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
যশোর জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক অসিত কুমার সাহা দৈনিক লোকসমাজকে জানান, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের বন্দি কিশোর হত্যার ঘটনায় আটক ৪ কর্মকর্তাকে গতকাল সোমবার সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সমাজসেবা অধিদফতর তাদের সাময়িক বরখাস্ত করে। এই ৪ কর্মকর্তা হচ্ছেন-শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের উপ-তত্ত্বাবধায়ক (প্রবেশন অফিসার) মাসুম বিল্লাহ, কারিগরি প্রশিক্ষক (ওয়েল্ডিং) ওমর ফারুক, ফিজিক্যাল ইনস্ট্রাক্টর একেএম শাহানুর আলম ও সাইকো সোশ্যাল কাউন্সিলর মুশফিকুর রহমান। সূত্র জানায়, এর আগে হত্যার ঘটনায় আটক কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক (সহকারী পরিচালক) আব্দুল্লাহ আল মাসুদকে সাময়িক বরখাস্ত করেছিল কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে অভিযুক্ত ৫ কর্মকর্তাকেই সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, নিহত ৩ বন্দি কিশোরের লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করতে গিয়ে নিষ্ঠুর নির্যাতনের চিহ্ন দেখে হতবাক হয়ে যান সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা এসআই সেকেন্দার আবু জাফর। ওই কর্মকর্তা দেখতে পান, পুরো নিতম্ব জুড়ে রক্ত বাঁধা রয়েছে। এছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের চিহ্ন ছিলো। তার ভাষ্য, এমন ভয়াবহ নির্যাতনের চিহ্ন তিনি কোনদিন দেখেননি। তাদেরকে যেভাবে পেটানো হয় ওই চিহ্ন দেখে মনে হয়েছে, ‘নিতম্বের ওপর দিয়ে যেন ভূমিকম্প বয়ে গেছে’। চিকিৎসকদের একটি সূত্র জানায়, ময়নাতদন্ত করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক নিহত ৩ বন্দি কিশোরের মাথায় রক্ত জমাট বাঁধা দেখতে পেয়েছেন। মাথার চামড়ার ওপরের অংশ তুলে রক্ত জমাট বাঁধার চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায়।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায় জানান, নিহত ৩ বন্দির লাশের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সিভিল সার্জনের স্বাক্ষরের জন্য তার অফিসে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন হাতে পাওয়ার সাথে সাথে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে স্বাক্ষর করেছেন। তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চাঁচড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইনসপেক্টর মো. রোকিবুজ্জামান জানান, তিনি এখনো পর্যন্ত ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পাননি। এদিকে ৩ বন্দি কিশোর হত্যার ঘটনায় আটক ৫ কর্মকর্তার তিন জনকে পাঁচদিনের এবং দুজনকে গত ১৫ আগস্ট শনিবার তিনদিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। আজ মঙ্গলবার দুই কর্মকর্তা একেএম শাহানুর আলম ও ওমর ফারুকের রিমান্ড শেষ হওয়ায় তাদের আদালতে সোপর্দ করা হতে পারে। তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ইনসপেক্টর মো. রোকিবুজ্জামান জানান, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে আটক কর্মকর্তাদের কাছ থেকে বন্দি হত্যার ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হত্যার ঘটনায় জড়িত যে সকল বন্দিকে শ্যোন অ্যারেস্ট করা হয়েছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অপর একটি সূত্র জানায়, বন্দি হতাহতের ঘটনায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রাণালয় গঠিত কমিটির আহবায়ক যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আবুল লাইছ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট তাদেরকে দেওয়ার জন্য হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কাছে গত ১৬ আগস্ট চিঠি দিয়েছেন। ঘটনার তদন্তের স্বার্থে তিনি এই রিপোর্ট চেয়েছেন। উল্লেখ্য, গত ১৩ আগস্ট যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের বন্দিদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালানো হয়। এ ঘটনায় ৩ কিশোর বন্দি মারা যায়। আহত হয় আরও ১৫ বন্দি।