বেসরকারি শিক্ষা নিয়ে সরকারকেই ভাবতে হবে

0

গত রোববার দৈনিক লোকসমাজে প্রকাশিত একটি সংবাদের শিরোনাম ছিল “বন্ধের পরও যশোরে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন পরিশোধে চাপ”।চলতি সমযরে সবচেয়ে জলন্ত সমস্যার ভেতরের কথা নিযে প্রতিবেদনটি করেছেন আকরামুজ্জামান। সার্বিকভাবে সাক্ষাৎকারধর্মী সংবাদটিতে স্পষ্ট হয়েছে বেসরকারি শিক্ষার বর্তমান অবস্থা। স্কুল ও শিক্ষক কর্মচারীদের বাঁচাতে কতৃপক্ষের অবস্থান এবং করোনায় বিপর্যস্ত অভিভাবকের অভাব বা অবস্থা সবই ফুটে উঠেছে। আমরা মনেকরি বেসরকারি শিক্ষা নিয়ে সরকারের জরুরি ভিত্তিতে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিৎ। সরকারি বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে সবকূল রার বিষয়টি তারা ভাবতে পারেন।
বৈশ্বিক মহামারী কোভিড ১৯ করোনা চীনের হুয়ান থেকে ইউরোপে হত্যাযজ্ঞ শুরু করার পরপরই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে। দেশের পর দেশ যখন করোনার আগ্রাসনে দিশাহারা তখন বাংলাদেশও মুক্ত থাকতে পারেনি। মানুষের জীবন রায় সবদেশ যখন লকডাউন কার্ফু দিয়ে অচল করতে শুরু করে তখন বাংলাদেশও সেপথ অনুসরণ করে। বাংলাদেশ মার্চ মাসের ১৭ তারিখ একযোগে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে। সেই থেকে আজ পর্যন্ত শিশু শিক্ষালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রযেেছ। ফলে শিক্ষা-কার্যক্রম কার্যত অচল রয়েছে। সরকার অবশ্য সংসদ টিভির মাধ্যমে অনলাইন কাস কার্যক্রম চালাচ্ছেন। তবে তা খুব সংক্ষিপ্ত এবং প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এই শিক্ষার সবচেয়ে বড় বাধা নিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং ঘরে ঘরে টিভির অভাব। সরকারের এই ব্যবস্হার পাশাপাশি অতিসম্প্রতি কিছু কোচিং সেন্টারও অনলাইন কাস চালু করেছে।কিন্তু তা কোনো কাজে আসছে বলে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা মনে করছেন না। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী কোচিং সেন্টারের প্রযুক্তিগত ত্রুটি এবং শিক্ষার্থীদের মোবাইল সংকট। ষষ্ঠ খেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই তো ভিডিও অপারেটিংয়ে দুর্বল। তবে এই পদ্ধতি চালু করে কোচিং সেন্টার তাদের আসল উদ্দেশ্য প্রকাশ করেছে। তারাও স্কুলগুলোর মতো তিন মাসের বেতন ও পরীক্ষার ফি দাবি করছে। তারা বলছে কোচিং সেন্টার ভাড়া, শিক্ষক কর্মচারীদের বেতনসহ বিভিন্ন খরচ বহন করতে এটা মানবিক দাবি। আসলেও বিষয়টি তেমনিই। তবে সমস্যা হচ্ছে এই তিনমাসে মানুষের আর্থিক অবস্থার অবনতি। আকরামুজ্জামান মোটামুটি এ অবস্হার একটি চিত্র এঁকেছেন। তবে ঘরের বাস্তবতা আরো কঠিন। খুব পরিষ্কার করে বলা যায় একমাত্র পদস্থ সরকারি চাকুরে এবং কিছু দুর্নীতিবাজ ছাড়া আর কারো সংসার সচ্ছল নেই। দ্রব্যমূল্যের লাগামছাড়া গতি আর কর্মহীন তিনমাস মানুষের জীবনে বিভীষিকাময় অবস্থার জন্ম দিযেেছ। বাস্তবতা হচ্ছে এমুহূর্তে বহু অভিভাবক আছেন যাদের পে উচ্চ বেতনের স্কুল ও কোচিংয়ের তিনমাসের বেতন দেয়াই সম্ভব না। অনেকের পক্ষে ওইসব স্কুলে সন্তান পড়ানোটাও অসম্ভব হয়ে যাবে। তাছাড়া কেউ জানে না আরও কতদিন তাদের দয়া করে যেতে হবে। আর তারা তা করতে পারবে কি-না। তাই এই বন্ধকালিন সময়ের স্কুল ও কোচিংয়ের বেতন নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।
আমরা যশোরের জেলা প্রশাসকের বক্তব্য পড়েছি। তিনি বিদ্যমান বাস্তবতার আলোকেই বলেছেন। বেসরকারি স্কুল ও শিক্ষকদের খরচ ও বেতনের বিকল্প না থাকায় অভিভাবকদেরকেই মানবিক দায়িত্ব নিতে হবে। আমরা তারসাথে দ্বিমত করছি না। তবে বাস্তবতার অপরদিকের বাসিন্দা অভিভাবকদের সমতা নিয়েই আমাদের ভাবনা। আমরা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছি আর দু’মাস এভাবে থাকার পর কতজন অভিভাবক খরচ টেনে যেতে পারবেন। আমরা মনেকরি সরকারের উচিৎ এখনই একটি পরিকল্পনা হাতে নেযা। যেমন নিয়েছে তারা শিল্পকারখানা ও শিল্পপতিদের রায়। বেসরকারি শিক্ষাব্যবস্হা সচল রাখতে একটি প্রণোদনা বা অনুদান চালু করা। এইসাথে শিার্থীদের বেতন অর্ধেক করে দেয়া। অর্থাৎ সরকার ও অভিভাবকদের যৌথ সহায়তায় শিক্ষা ও শিক্ষক কর্মচারীদের বাঁচিযে রাখা প্রকল্প। আমরা আশা করবো সরকার বিষয়টি ভেবে দেখবে।