কাদা-পানিতে দূরবস্থা যশোরের সবজি ও মাছ বাজারে, দুর্ভোগে ক্রেতা-বিক্রেতা

0

আকরামুজ্জামান ॥ যশোর শহরের প্রধান তিনটি বাজার নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। বাজার তিনটি হলো-টাউন হল ময়দান ও রেলরোডের মাছ বাজার এবং ঈদগাহ ময়দানের সবজি বাজার। চলতি বর্ষা মৌসুমে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে বাজার তিনটি কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। করোনা সংক্রমণের কারণে এ তিনটি বাজারকে পূর্বের স্থান থেকে সরিয়ে এনে এখানে স্থানান্তর করা হয়। খোলা আকাশের নিচে কাদা-পানিতে একাকার হয়ে যাওয়ায় বেচাকেনা বন্ধ হয়ে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। পানিতে নষ্ট হচ্ছে কাঁচা সবজি ও মাছ। বাজার তিনটিতে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় না থাকায় অনেকে কেনাকাটা করতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনায় ব্যবসায়ীরা বাজার তিনটিকে পুনরায় পূর্বের স্থানে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।
করোনা সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার স্বার্থে গত ২৯ এপ্রিল জেলা প্রশাসন যশোর বড়বাজারের মাছ ও সবজি বাজার দুটিকে স্থানান্তর করে টাউন হল ও ঈদগাহ ময়দানে নিয়ে আসে। একই সাথে রেলবাজারের মাছ বাজারটি স্টেশন সংলগ্ন মূল সড়কের ওপর স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু ১০ দিনের মাথায় টাউন হল ময়দানে মাছ বাজারটি বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বাজার দুটিকে স্থানান্তর করায় তারা নানা সমস্যায় পড়ছেন। খোলা আকাশের নিচে দোকান বসিয়ে মাছ বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। যে কারণে তারা আগের স্থানে ফিরে যাওয়ার জন্যই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে ব্যবসায়ীদের এ সিদ্ধান্তে প্রশাসন সাড়া না দিয়ে তাদের যশোর ইনস্টিটিউট ভবন ও পাবলিক লাইব্রেরীর সামনে মাছ বাজার বসানোর জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি অনুরোধ জানায়। উপায়ন্ত না পেয়ে ব্যবসায়ীরা সেই থেকেই নির্ধারিত স্থানেই ব্যবসা করে আসছেন। এদিকে গত কয়েক দিন ধরে আষাঢ় মাসের ভারি বৃষ্টির কারণে মারাত্মক সমস্যা দেখা দিয়েছে বাজার তিনটিতে। ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে ব্যবসায়ীরা খোলা আকাশের নিচে ব্যবসা করতে পারছেন না। বৃষ্টিতে সবজি, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি ক্ষতি হচ্ছে মাছ বেচাকেনায়। যশোর বড়বাজার মাছ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কৃষ্ণপদ বিশ্বাস বলেন, ‘টাউন হলের উন্মুক্ত ময়দানে মাছ বিক্রি করতে গিয়ে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ছি। এখানে মাছ বিক্রির নির্দিষ্ট ঘর বা ছাউনি না থাকায় এর আগে আমরা প্রচন্ড গরমে ক্ষতিগ্রস্থ হই। মাছ পঁচে নষ্ট হয়ে যায়। এখন বৃষ্টি শুরু হওয়ায় আবার নতুন সমস্যায় পড়েছি।’ তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা এই কয় মাস কষ্ট করে গাছের নিচে বসে মাছ বিক্রি করছিলেন। কিন্তু বৃষ্টির কারণে তা মোটেও সম্ভব হচ্ছে না। কাঁদা-পানিতে একাকার হয়ে যাচ্ছে বাজার। এ অবস্থায় তাদেরকে দ্রুত পূর্বের স্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য দাবি জানান তিনি। একই কথা বলেন, মাছ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলম শেখ। তিনি বলেন, টাউন হল ময়দানে কোনো বাজার বসার পরিবেশ নেই। প্রথম দিকে বাজারটিতে ক্রেতারা গেলেও বর্ষায় এখন আর যেতে চাচ্ছেন না। তিনি বলেন, বাজার স্থানান্তর করা হয়েছে, অথচ বড় বাজারে মুরগি ও মাংসের দোকানসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় মুদি দোকান রয়েছে। তিনি স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাছের দোকান বড় বাজারে ফের চালু রাখার দাবি জানান। টাউন হল ময়দানের মাছ বাজারের মতো একই অবস্থা বিরাজ করছে যশোর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানের সবজি বাজারেও। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, খোলা আকাশের নিচে বসে তারা সবজি বিক্রি করতে পারছেন না। বৃষ্টিতে সবজিসহ আনুষাঙ্গিক জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে যশোর বড়বাজারের সবজি ব্যবসায়ী সমিতির নেতা সুশান্ত সাহা বলেন, সবজি বাজারের জন্য যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তা ঈদগাহ ময়দানে নেই। এখানে আড়তদাররা দাঁড়াতে বা বসতে পারেন না। এখন বৃষ্টিতে মহাবিপদে রয়েছি আমরা। বৃষ্টি হলে শাক-সবজি কাদা-পানিতে একাকার হয়ে যায়। কাদার কারণে ক্রেতারা বাজারে আসতে পারছেন না বলে তিনি অভিযোগ করেন। সবজি বিক্রেতা হাসান আলী বলেন, বৃষ্টির পানিতে পেঁয়াজ, রসুন ও আলু একাকার হয়ে যায়। পানি লাগার পরে এ তিনটি পণ্য বেশিক্ষণ ভাল থাকে না। পঁচে নষ্ট হয়ে যায়। গতকাল (১৮ জুন) এখানকার চার শতাধিক ব্যবসায়ীর কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি জানান।এদিকে বর্ষার কারণে খোলা আকাশের নিচে মাছ বিক্রি করতে পারছেন না বলে লিখিতভাবে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছে যশোর রেলওয়ে মাছ বাজার সমিতি। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বাজার ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে এ আবেদন করা হয়। রেলবাজার মাছ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. মঞ্জুরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই আবেদনে উল্লেখ করা হয়, মাছ বাজারটি পূর্বের স্থান থেকে সরিয়ে রেলস্টেশনের সামনে রাস্তার ওপর দেয়ার কারণে তারা চরম সমস্যায় আছেন। খরার সময় তারা প্রচন্ড দাবদাহের কারণে সমস্যায় যেমন পড়েছেন, এখন বৃষ্টির কারণে একেবারেই অচল হয়ে পড়েছে তাদের বেচাকেনা। তারা অভিযোগ করেন, এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন রিকশা-ভ্যান, ইজিবাইক, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, পিকআপ ভ্যানসহ নানা যানবাহন চলাচল করে। এমনি অবস্থায় রাস্তার ওপর খোলা আকাশের নিচে তারা মাছ বিক্রি করতে পারছেন না। এজন্য তারা দ্রুত বাজারটিকে পূর্বের স্থানে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি জানান। আবেদনে রেলবাজারের সকল মাছ ব্যবসায়ী স্বাক্ষর করেন। বিষয়টি নিয়ে যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ শফিউল আরিফের সাথে কথা বললে তিনি জানান, ‘এ ব্যাপারে যশোর পৌরসভার মেয়র সাহেব ভালো বলতে পারবেন। যেহেতু তিনিই এসব বাজার ইজারা দেন। সুতরাং এ বিষয়ে তিনিই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।’ পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কাছে এখনো কেউ অভিযোগ করেননি। ব্যবসায়ীরা যদি এ বিষয়ে কিছু বলেন, তাহলে সেটি ভেবে দেখা যাবে।’ তিনি বলেন, ‘করোনা সংক্রমণের মহামারি থেকে মানুষকে রক্ষা করতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’