লকডাউন হোক পরিকল্পিত

0

কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসের ভয়াবহ বিস্তার রোধে লকডাউন যে একটা কার্যকর ব্যবস্থা সেটা প্রমাণিত। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে ‘লকডাউন’ সারা বিশ্বে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে। লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজ এবং নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি গবেষণাপত্রে এ কথা বলা হয়েছে। আরো বলা হয়েছে, এখন বিধি-নিষেধ শিথিল করা হলে তা বিরাট ঝুঁকির কাজ হবে। ইমপেরিয়াল কলেজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারের হস্তপে ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা বাদ দেওয়া হলে দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণের প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে প্রায় পৌনে এক কোটি এবং মৃত্যু হয়েছে প্রায় সোয়া চার লাখ মানুষের।
ইমপেরিয়াল কলেজের গবেষণায় বলা হয়েছে, লকডাউন থাকায় প্রায় ৩১ লাখ লোকের মৃত্যু এড়ানো গেছে। আর নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, চীন, দণি কোরিয়া, ইতালি, ইরান, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রে লকডাউন জারির ফলে ৫৩ কোটি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া থেকে বেঁচেছে। লকডাউন জারির আগে করোনা সংক্রমণ ইরানে দিনে ৬৮ শতাংশ এবং অন্য পাঁচটি দেশে ৩৮ শতাংশ হারে বেড়েছে। লকডাউন ছাড়া হয়তো বিশ্বে ভিন্ন একটা এপ্রিল ও মে মাস দেখা যেত।
এ কারণে কোথাও লকডাউন শিথিল না করার কথাই বলা হয়েছে প্রতিবেদন দুটিতে। তার পরও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে লকডাউন শিথিল করা হচ্ছে। আমাদের দেশেও করা হয়েছে। তবে সরকার পরিস্থিতি অন্যভাবে বিবেচনায় রেখেছে। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা জোনভিত্তিক ভাগ করে ১৪ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত লকডাউনে রাখা হবে। এ সময়ে তিন থেকে চারবার সংশিষ্ট এলাকার করোনা রোগীদের উন্নতি-অবনতির তথ্য বিশেষণ করা হবে। উন্নতি দেখা গেলে লকডাউনের সীমা বাড়ানো হবে না, আর সংক্রমণ ঊর্ধ্বগামী হলে সীমা বাড়তে পারে। পরীামূলকভাবে এমন লকডাউন ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের কয়েকটি এলাকায় করা হচ্ছে। শহর এলাকায় কার্যকারিতা প্রমাণ সাপেে দেশব্যাপী এর প্রয়োগের কথা চিন্তা করবে সরকার। প্রধানমন্ত্রী এ প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছেন।
অভিভাবকরা বলছেন, এ ধরনের লকডাউন হলে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ রেড জোনে বিভিন্ন ধরনের সংকট দেখা দেবে, পরিষেবায় সমস্যা হবে। বিশেষ করে বস্তি এলাকার মানুষ, নিম্ন আয়ের মানুষ খাদ্যসংকটে পড়বে। সরকার বলেছে, লকডাউনের সময় বস্তিবাসীদের প্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে। সংশিষ্ট এলাকার কর্মহীন হয়ে পড়া লোকদেরও খাবারের সংস্থান করা হবে। এটা ইতিবাচক ভাবনা। সরকার সেটা বিবেচনায় রাখলে ভালো ফল পাওয়া যাবে আশা করা যায়। তবে আমাদের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা ভালো না। মার্চের শেষভাগে। আমাদের দেশে করোনা সতর্কতা শুরু হয়। ওই সময় আতঙ্কিত পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারি ছুটিসহ শিল্প কারখানা ব্যবসা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। খাদ্যসামগ্রীর প্রয়োজন ছাড়াই ত্রাণ কার্যক্রম চালু করা হয়। কোন ধরনের তালিকা ছাড়াই ত্রাণ দিতে গিয়ে হরিলুটের ইতিহাস হয়ে যায়। কারখানা বন্ধের আগেই প্রণোদনা ও ঋণ মওকুফ শুর ুহয। এরপর ঘটেছে অনেক ঘটনা। ফলে এখন প্রয়োজনের সময় শুরু হয়েছে নানামুখি সংকট-সমস্যা। আমরা মনে করি, এই সময় দায়িত্বশীলদের ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে কাজ করতে হবে। লকডাউন দিলে গৃহবন্দি করে খাদ্য সররবাহ না করলে কোন লাভ হবে না। এ জন্য কাদের খাদ্য প্রয়োজন তার তালিকা আগে করতে হবে, নইলে ফের লুটপাট হবার আশঙ্কা থেকে যাবে।