বাজেটে মানুষের জীবিকাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে: মির্জা ফখরুল

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনা মহামারির প্রেক্ষাপটে সরকারকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে জোর না দিয়ে আগামী বাজেটে মানুষের জীবন রক্ষা ও জীবিকার বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একইসঙ্গে তিনি ১৩ দফা বাজেট প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। মঙ্গলবার (৯ জুন) দুপুরে উত্তরায় নিজের বাসায় দলের পক্ষে থেকে ‘বাজেট ভাবনা:অর্থবছর ২০২০-২১’ শীর্ষক ভিডিও কনফারেন্সে এসব কথা বলেন তিনি।
বিএনপির ১৩ দফা প্রস্তাবনার মধ্যে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে— স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, শ্রম কল্যাণ, কৃষি, শিক্ষা, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনর্গঠন ও স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার, সর্বজনীন জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা গঠন, সরকারি বিনিয়োগ ও অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, কৃষি ও গ্রামাঞ্চলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, কর্মহীন, কর্মক্ষম, বেকার ও দরিদ্র মানুষদের নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান প্রভৃতি। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘করোনা সংকটকালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে জোর না দিয়ে মানুষের জীবন রক্ষা ও জীবিকার বিষয়টি বাজেটে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। করোনা সংক্রমণ রোধ করতে না পারলে কোনোভাবেই অর্থনীতিতে স্বস্তির কোনও অবকাশ নেই।’ গত ৪ এপ্রিল করোনা মহামারি মোকাবিলায় বিএনপির পক্ষ থেকে ৮৭ হাজার কোটি টাকার আর্থিক সহায়তার যে প্যাকেজ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিলে, তাকে বাজেট প্রণয়নের প্রাথমিক ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা নেওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘করোনাকালে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে সারাদেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কীভাবে ভেঙে পড়েছে। জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে পুনর্গঠিত করতে হবে এবং দীর্ঘ মেয়াদে স্থিতিশীল করতে হবে। এমন টেকসই ব্যবস্থা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি করোনা জাতীয় মহামারির মতো সংকট মোকাবিলায় পর্যাপ্ত সংখ্যক বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়, যারা যুদ্ধকালীন সময়ের মতো সর্বদা প্রস্তুত থাকবে একটি ইন বিল্ড সিস্টেমের আওতায়।’ স্বাস্থ্য খাতে তথা প্রত্যেকের জন্য পারিবারিক ডাক্তার, নার্স ও অবকাঠামোসহ সামগ্রিক ব্যয় জিডিপি’র ৫ শতাংশ বরাদ্দ এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্য ভাতার আওতায় আনার দাবি তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল।
তিনি আরও বলেন, ‘‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বিশেষ করে ‘দিন আনে দিন খায়’ শ্রেণির মানুষকে সর্বজনীন সামাজিক কর্মসূচির আওতায় এনে তাদের নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান, বেকার ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, শিশু প্রতিপালন ভাতা, পেনশন ভাতা, আবাসন সুবিধা, স্বাস্থ্য ভাতা প্রদানে এই খাতে জিডিপির ৬-৭ শতাংশ বরাদ্দ, আইটি প্রযুক্তি ও গবেষণা খাতে বিশেষ বরাদ্দ, কৃষি ও খাদ্য খাতে জিডিপি ও বাজেটের কমপক্ষে ১ দশমিক ৫ ও ৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ বরাদ্দ, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাতে বরাদ্দ জিডিপির দশমিক ৭৩ শতাংশ ও বাজেটের ২ দশমিক ৮১ শতাংশ বৃদ্ধি, সবুজ শিল্পায়ন ও গ্রামীণ অর্থনীতি উজ্জীবন, সমন্বিত শিল্পায়ন ও অবহেলা উন্নয়নের ইকুইটি ম্যাচিং তহবিল ও কৃষি কমিশন গঠন, প্রবাসীদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করার সুপারিশ করছি।’ পোশাক শ্রমিকদের ছাঁটাইয়ের ঘোষণায় উদ্বেগ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সংকটকালে শ্রমিকরা যাতে কর্মহীন হয়ে না পড়ে, সেজন্য ৫ হাজার কোটি টাকা আর্থিক প্রণোদনা নিয়েছেন মালিকেরা। প্রণোদনাও নেবেন, ছাঁটাইও করবেন— এই দুইটা একসঙ্গে চলতে পারে না। মোদ্দা কথা, এই সংকট চলাকালে শ্রমিক ছাঁটাই হবে অমানবিক ভুল সিদ্ধান্ত।’ বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অর্থনীতি সংকুচিত হওয়ায় আয়কর ও মূল্য সংযোজন কর কমবে। ফলে রাজস্ব আশানুরূপ হবে না। বাজেট ঘাটতি অর্থায়নের জন্য বিদেশি ঋণের ওপর জোর দিতে হবে। বাজেট ঘাটতি ও জিডিপির তুলনায় ঋণের অনুপাত সহনীয় কোঠায় রাখতে হবে। শুধু মুদ্রানীতি দিয়ে তারল্য যোগানের মাধ্যমে এই মহামারির সংকটকাল থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে না। প্রয়োজন সক্রিয় রাজস্বনীতির।’ এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘জনগণের কাছে আওয়ামী লীগ সরকারের জবাবদিহিতা নেই। কারণ, তারা জনগণের ভোটের তোয়াক্কা করে না। একটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের কারণে সরকারের কোনও বৈধ্যতা নেই। তারপরও এই মহাসংকটের সময়ে বৃহত্তর স্বার্থে আমরা দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ জাতীয় প্রয়াসের আহ্বান জানাচ্ছি।’ করোনা সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থতা এবং সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পরিণতির দায় বর্তমান সরকারকেই নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।