ছুটি আর বাড়ছে না : সীমিত আকারে চলবে গণপরিবহন

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে চলমান সাধারণ ছুটি ৩০ মে’র পর আর বাড়ছে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা হবে অফিস-আদালত। একই সাথে সীমিত আকারে চলবে গণপরিবহনও। এ বিষয়ে বুধবার রাতে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ৩১ মে থেকে সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চলার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। প্রতিমন্ত্রী জানান, সীমিত যাত্রী নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চলাচল করতে পারবে। নৌপরিবহন, ট্রেনও চলবে বলে তিনি জানান। এর আগে বুধবার বিকালে প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আপাতত বন্ধ থাকবে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার এ ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন আমরা পেয়েছি মাত্র। দেশে করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে প্রায় আড়াই মাসের মতো সাধারণ ছুটি চলছে, যেটা গত ২৬ মার্চ থেকে কয়েক দফায় বাড়ানো হয়। তবে এবার ৩০ মে’র পর আর ছুটির মেয়াদ বাড়ানো হবে না। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ৩১ মে থেকে সরকারি বেসরকারি সব অফিস পুরোদমে কাজ শুরু হবে। তবে জুনের মাঝামাঝি মানে ১৫ জুনের একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা সবাইকে বেঁধে দেয়া হচ্ছে, এই সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও ১৫ জুন পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। তবে অনলাইনে ক্লাস চলবে। গণজমায়েত ও সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ থাকলেও ধর্মীয় উপাসনালয় খোলা থাকবে। এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাত্রী পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে বেশ কয়েকদফা সরকারি ছুটির মেয়াদ বাড়ানো হলেও এবার ৩০ মে’র পর আর ছুটির মেয়াদ বাড়ানো হবে না। তবে ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফিসে কাজ করতে হবে। বয়স্ক এবং গর্ভবতীরা অফিসে আসবেন না। আপাতত ১৫ জুন পর্যন্ত স্কুল, কলেজ বন্ধ থাকবে। তবে অনলাইনে ক্লাস নেয়া যাবে। তিনি আরও বলেন, ৩১ মে থেকে সরকারি আধা-সরকারি সব অফিস খুলবে। অর্থনৈতিক কর্মকা- চালু রাখতে সীমিত পরিসরে সব অফিস খোলা রাখতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, রাত আটটা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত আগের মতো চলাচল সীমিত থাকবে। হাটবাজার দোকানপাট বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে।
এদিকে, গণ জমায়েত ও সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ থাকলেও ধর্মীয় উপাসনালয় খোলা থাকবে। মার্চ মাসের শুরুতে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী প্রথম ধরা পড়ার পর ক্রমে পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকলে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এরপর দফায় দফায় ছুটি বাড়তে থাকে। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ৩০ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি থাকবে। যদিও করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি হচ্ছে তারপরেও সাধারণ ছুটি আর না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আসছে সরকারের পক্ষ থেকে।
গত ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত পড়ার পর ক্রমে পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকলে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এরপর দফায় দফায় ছুটি বাড়তে থাকে। সরকার ঘোষিত ছুটির সঙ্গে বন্ধ রাখা হয় দেশের সব দোকানপাট ও শপিংমল। এমন পরিস্থিতিতে ২৯ মে পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয় দেশের সব বিপণি বিতান ও মার্কেটগুলো। তবে ৩০ তারিখ থেকে মার্কেট খোলা রাখার ইঙ্গিত দিয়েছে ঢাকা মহানগর দোকান মালিক সমিতি।
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরের কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে খোলা হয়েছিলো সারাদেশের দোকানপাটগুলো। তবে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, মহানগর দোকান মালিক সমিতির গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মহানগরের সব বাণিজ্য বিতান ও শপিং মল ঈদের দিন থেকে ২৯ মে শুক্রবার পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। ফলে আগামী ৩০ মে শনিবার থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিধি-নিষেধ মেনে যথানিয়মে প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার সম্ভাবনা রয়েছে। দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের মাত্রা এখনো চরম পর্যায়ে রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে আরও ১৫৪১ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৩৮ হাজার ২৯২ জনে। এছাড়া একই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৫৪৪ জনে। তবে অর্থনৈতিক ক্ষতির কথা বিবেচনা করে সীমিত আকারে কিছু কিছু খাতে অচলাবস্থা কাটাতে চাচ্ছে সরকার। করোনাভাইরাসের কারণে প্রথম দফায় ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি দেওয়া হয়েছিল। এরপর ছুটি বাড়িয়ে তা ১১ এপ্রিল করা হয়। ছুটি তৃতীয় দফা বাড়িয়ে করা হয় ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। চতুর্থ দফায় ছুটি বাড়ানো হয় ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত। পঞ্চম ধাপে ২৬ এপ্রিল থেকে ০৫ মে পর্যন্ত ও ষষ্ঠ দফায় ৬ মে থেকে ১৬ মে পর্যন্ত ছুটি বাড়ানো হয়। আর সর্বশেষ ১৭ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত ছুটি বাড়ানো হয়।