আক্রান্তের শীর্ষে পুলিশ :মৃত্যু ৫ শনাক্ত ৭৪১, কোয়ারেন্টাইনে ১২৫০ আইসোলেশনে ১৭৪ জন

0
লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনা মহামারীকালে প্রতিদিনই আক্রান্ত হচ্ছেন পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। তবে নামমাত্র সুরক্ষাসামগ্রী নিয়ে চলমান দুর্যোগকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন মানবিক কাজে অংশ নিয়ে সর্বত্র প্রশংসিত হচ্ছে পুলিশ। এরই মধ্যে করোনা যুদ্ধে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কভিড-১৯ পজিটিভ হয়ে মৃত্যুর কাছে হার মেনেছেন পাঁচ পুলিশ সদস্য, যা বিভিন্ন পেশাজীবীর মধ্যে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এ ছাড়া গতকাল পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের ৭৪১ জন সদস্য। এর মধ্যে কেবল ঢাকা মহানগর পুলিশেই (ডিএমপি) আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫৬। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ২৩২ জন পুলিশ সদস্য কভিড-১৯ পজিটিভ হয়েছেন। অন্যদিকে করোনা মোকাবিলায় আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের সেবা নিশ্চিত করতে অতীতে মেডিকেল ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল এমন কর্মকর্তাদের নিয়ে বিশেষায়িত সেল গঠন হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন সূত্র। পুলিশ সদর দফতর সূত্র বলছেন, অতীতে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন এমন পুলিশ কর্মকর্তাদের তালিকা করা হচ্ছে। শিগগিরই তাদের পুলিশ সদর দফতরে তলব করা হবে। দীর্ঘদিন চিকিৎসাসেবা থেকে বাইরে থাকার কারণে তাদের দু-তিন দিনের বিশেষ প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হবে। পরবর্তী সময়ে তাদের পুলিশের বিভিন্ন হাসপাতালে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে সংযুক্ত করা হবে। চলমান মহামারীতে আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের সেবা নিশ্চিতে তারা দায়িত্ব পালন করবেন এবং বিভিন্ন ইউনিটে গিয়ে পুলিশ সদস্যদের প্রেষণামূলক বক্তব্য দেবেন, কীভাবে দায়িত্ব পালন করেও নিজেদের করোনা থেকে মুক্ত রাখা যায়। কোনো সমস্যা থাকলে তৎক্ষণাৎ যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন তারা। এ ছাড়া বিভিন্ন ইউনিটের লকডাউন ঠেকাতে এবং সেবা নিশ্চিত করতে ইউনিট, থানা, এমনকি ফাঁড়িতে দুটি আলাদা টিম করা হয়েছে। পুলিশ সদস্যদের মনোবল ধরে রাখতে নিয়মিতভাবে রেঞ্জ ডিআইজি, মেট্রোপলিটন কমিশনার, ইউনিটপ্রধানদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নিচ্ছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি)। দিচ্ছেন বিভিন্ন নির্দেশনা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘পুলিশ সদস্যরা তাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে দেশবাসীকে সেবা করার চেষ্টা করছেন। ভবিষ্যতেও তারা এ সেবা অব্যাহত রাখবেন। আমাদের পাঁচজন সদস্য এরই মধ্যে আত্মদান করেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন ৭৪১ জন। যেসব পুলিশ কর্মকর্তা চিকিৎসাবিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন তারা কীভাবে এই ক্রান্তিকালে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারেন, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল সূত্র জানান, এ হাসপাতালের আওতায় এখন পর্যন্ত ৩ শতাধিক পুলিশ সদস্যকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে স্থান না হওয়ায় সিদ্ধেশ্বরী স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ রাজধানীর ২২টি আবাসিক হোটেলে আক্রান্ত পুলিশ সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদের রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে চিকিৎসক সংকটের কারণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসক সংযুক্তির অনুরোধ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার পুলিশ হাসপাতালে জরুরি ভিত্তিতে ৩০ জন চিকিৎসক সংযুক্ত করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালের পরিচালক ডিআইজি ড. হাসান উল হায়দার বলেন, ‘আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়ার জন্য হাসপাতালের বাইরেও আমাদের ব্যবস্থা রয়েছে।’ এদিকে গতকাল করোনায় আক্রান্ত হয়ে উপপরিদর্শক পদমর্যাদার এক পুলিশ সদস্য সুলতানুল আরেফিন (৪৪) মারা গেছেন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে পাঁচজন পুলিশ সদস্য মারা গেলেন। এর আগে পুলিশের এসআই নাজির উদ্দীন, এএসআই মো. আবদুল খালেক, কনস্টেবল মো. আশেক মাহমুদ ও কনস্টেবল জসিম উদ্দিন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। পুলিশে এ পর্যন্ত ৭৪১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে ঢাকা মহানগরেই আক্রান্ত হয়েছেন ৩৫৬ জন। আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন কনস্টেবল পর্যায়ের সদস্যরা। এর পরই রয়েছেন এএসআই ও এসআই পদমর্যাদার সদস্যরা। তবে আক্রান্তের তালিকায় রয়েছেন সহকারী পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব কর্মকর্তারাও। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৫৭ জন। কোয়ারেন্টাইনে আছেন ১ হাজার ২৫০ জন, আইসোলেশনে আছেন ১৭৪ জন পুলিশ সদস্য। চলমান এই সময়ে কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষা নয়, করোনা আক্রান্ত কিংবা অন্যান্য রোগে অসুস্থ ব্যক্তিদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া, করোনা পজিটিভ মৃত ব্যক্তিদের দাফন-সৎকার, ত্রাণ হিসেবে নিজেদের রেশন বিলিয়ে দেওয়ার মতো অনেক মানবিক কাজে সম্পৃক্ত হয়ে সব মহলেই প্রশংসিত হচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার থেকে স্বাস্থ্যবিধিসহ নানা নির্দেশনা পাওয়ার পরপরই আমরা আমাদের পুলিশ সদস্যদের অবহিত করছি। সিনিয়র অফিসাররাও বিভিন্ন ইউনিটে গিয়ে তাদের সঙ্গে এসব নিয়ে কথা বলছেন। ডিএমপির সদস্যদের প্রয়োজন অনুযায়ী মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস সরবরাহ করা হয়েছে।’ পুলিশ সদস্যদের নিয়ে চিকিৎসা সেল গঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আইজিপি স্যার উদ্যোগ নিয়েছেন। আমরা ডিএমপিতে এমন কর্মকর্তাদের তালিকা করছি। এসব কর্মকর্তাকে বিশেষজ্ঞদের অধীনে কয়েক দিন প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরই কাজে লাগানোর চিন্তা হচ্ছে।’ এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সাবেক ছাত্র বর্তমানে ডিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (ট্রাফিক-পশ্চিম) মুহাম্মদ মঞ্জুর মোর্শেদের কাছে। তিনি বলেন, ‘চলমান এই সময়ে সাধারণ মানুষ যেভাবে প্রশংসা করছে, সত্যি খুব ভালো লাগছে। কর্তৃপক্ষ চাইলে অদম্য এই যোদ্ধাদের চিকিৎসায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চাই।’