রিএজেন্ট সংকট, যবিপ্রবিতে নমুনা পরীক্ষায় বিরতি

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) সন্দেহভাজন করোনা রোগীদের নমুনা পরীা শুরুর পর থেকে গণমাধ্যমে তার ফল প্রকাশ নিয়মিত ব্যাপার। কিন্তু গতকাল দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলেও এখনো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোম সেন্টারের ফলাফল পায়নি গণমাধ্যম; তাই পাঠকরাও অন্ধকারে। এমন পরিস্থিতিতে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে বহু পাঠক যোগাযোগ করছেন। জানতে চাইছেন, কেন ফলাফল জানা যাচ্ছে না। এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কি-না পাঠকরা তাও বুঝতে চাইছেন। সম্প্রতি বাতাসে ভেসে বেড়ানো কিছু কথাবার্তা প্রভাবিত করছে গণমাধ্যমকর্মী ও পাঠকদের। ফলে বিষয়টি জানার জন্য কিছু সময় আগে যোগাযোগ করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপরে সঙ্গে।
যবিপ্রবি কর্তৃপ বলছেন, তাদের ল্যাবে রিএজেন্ট ফুরিয়ে গেছে। নতুন করে রিএজেন্ট সরবরাহ করার জন্য যশোরের সিভিল সার্জনকে বলা হয়েছে। সিভিল সার্জন চাহিদাপত্র ঢাকায় পাঠিয়েছেন বলে যবিপ্রবি কর্তৃপকে জানিয়েছেন। এছাড়া প্রফেসরদের নেতৃত্বে প্রথম যে টিমটি নমুনা পরীা করতো তাদের কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। নতুন টিম দায়িত্ব নিয়েছে। এছাড়া এখন জেনোম সেন্টারের ল্যাব পরিষ্কার (কিন) করার কাজ চলছে। ফলে আগামী দুই-তিন দিন এখানে পরীা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তবে বুধবার যে নমুনাগুলো পরীা করা হয়েছে, সেগুলোর ফলাফল আজ দিনের যেকোনো সময় প্রকাশ করা হবে। তাদের ভাষ্য, আগামী দুই থেকে তিনদিন দরকার হবে ল্যাব পরিচ্ছন্ন করাসহ কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজ শেষ করতে। ফলে শুধু চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা নমুনাগুলোর পুনঃপরীার ফলাফল প্রকাশ হতে পারে এই সময়কালে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, যবিপ্রবিতে নমুনা পরীার কাজ করে সাতজনের একটি টিম। এর মধ্যে পাঁচজন সরাসরি ল্যাবে কাজ করেন; দুইজন থাকেন লজিস্টিকে। বিভিন্ন জেলা থেকে নমুনাগুলো বিচ্ছিন্ন সময়ে আসায় সারারাত জেগে কাজ করতে হয় টিমকে। তাদের পর্যাপ্ত রেস্ট দরকার। তাছাড়া একটি টিমকে দিয়ে ক্রমাগত কাজ করানো বাস্তবসম্মতও না। ফলে টিম বদল করতেই হবে। তিনি জানান, প্রথম ড. ইকবাল কবীর জাহিদের নেতৃত্বাধীন টিম যবিপ্রবি জেনোম সেন্টারে নমুনা পরীার কাজ শুরু করে। এই টিমের সবাইকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। এখন মাইক্রো বায়োলজি বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ড. সেলিনা আক্তারের নেতৃত্বাধীন টিম কাজে নেমেছে। এই গ্র“পে ড. শিরিন নিগার রয়েছেন রিপোর্টিংয়ের দায়িত্বে। প্রথম দায়িত্ব পালনকারী গ্র“পের লিডার ড. ইকবাল কবীর জাহিদ বলেন, এই ল্যাবে আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ফলে এক টিম কোয়ারেন্টাইনে যাবে; আরেকটি টিম দায়িত্ব নেবে- এভাবেই চলবে। তিনি জানান, এখন ল্যাবরেটরি কিন করা হচ্ছে। নমুনা পরীার দায়িত্বপ্রাপ্তদের নিরাপত্তার জন্যই এটা জরুরি। এই সময়কালে নতুন কোনো নমুনা যবিপ্রবিতে না পাঠাতে অনুরোধ করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট সিভিল সার্জনদের। সেই অনুযায়ী সিভিল সার্জনরা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ল্যাবে নমুনা পাঠাচ্ছেন। দুই-তিন দিনের মধ্যে যবিপ্রবি ল্যাব ফের প্রস্তুত হয়ে যাবে। তখন আবার পূর্ণোদ্যমে পরীা শুরু হবে। এক প্রশ্নের জবাবে ড. জাহিদ বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা স্যাম্পলগুলোর ফলাফল দ্রুতই জানানো সম্ভব হবে। কারণ এগুলোর ফলাফল চূড়ান্ত করার জন্য একটা স্টেপ সম্পন্ন করা হয়ে গেছে আগেই। এখন নতুন করে স্যাম্পল প্রসেসিং বন্ধ আছে।’ গত ২৭ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গার ৫১টি নমুনা কুষ্টিয়ার পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়েছিল পরীার জন্য। পরদিন পাঠানো ফলাফলে দেখা যায়, এর মধ্যে ২৮টি নমুনাই পজেটিভ। কুষ্টিয়ার ল্যাবে নমুনা পরীার কাজ এই সপ্তাহেই শুরু হয়েছে। চুয়াডাঙ্গার ৫১টি নমুনার মধ্যে ২৭টি পজেটিভ হওয়ায় সন্দেহের উদ্রেক হয় আইইডিসিআর কর্তৃপরে। তারা নমুনাগুলো ঢাকায় পাঠাতে বলেন বলে ওইদিনই জানিয়েছিলেন চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান। সেই অনুযায়ী নমুনাগুলো ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল। আইইডিসিআর থেকে সেগুলো পুনঃপরীার জন্য পাঠানো হয় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখানে নমুনাগুলো পুনঃপরীা করা হচ্ছে। এই তথ্য ওইদিনই নিশ্চিত করেছিলেন যবিপ্রবি কর্তৃপ। যবিপ্রবি উপাচার্য ড. আনোয়ার বলছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে ডাক্তারসহ নমুনা পরীার কাজে নিয়োজিতদের অনেকেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। এটি ‘খুবই দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করে ড. আনোয়ার বলেন, ‘ওই সব স্থানে হয়তো সঠিকভাবে বায়োসেফটি মানা হচ্ছে না। সেকারণে এমনটি হতে পারে। যবিপ্রবি ল্যাবে ওয়ার্ল্ড স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী বায়োসেফটি বিধি মেনে চলা হচ্ছে। ফলে এখানে নমুনা পরীার কাজে নিয়োজিতদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা খুবই কম। যদিও নিরাপত্তার নিয়ম না মেনেই বিভিন্ন জেলা থেকে স্যাম্পলগুলো পাঠানো হচ্ছে; যা অত্যন্ত বিপজ্জনক। ফলে পরীার কাজে নিয়োজিতদের ঝুঁকিমুক্ত রাখতে সব ধরনের চেষ্টাই করছে যবিপ্রবি কর্তৃপক্ষ।