লকডাউনে দিনমজুরদের কথা ভাবতে হবে

0

করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতার কবলে পড়েছে যশোরাঞ্চল। বৃহত্তর যশোরসহ আশপাশের কয়েকটি জেলার সমন্বয়ে এই যশোরাঞ্চলের হৃদপিন্ড হচ্ছে যশোর শহর। সেই শহরই এখন করোনাভাইরাসের কবলে। মাত্র ৪/৫ দিনের ব্যবধানে যশোর জেলায় সনাক্ত হওয়া ২৯ জনের ৭ জনই শজর সংলগ্ন এলাকাবাসীন্দা। শুধু তাই নয়, মানুষের চিকিৎসার একমাত্র স্থান যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের মেডিসিন ও করোনারী (সিসিইউ) ওয়ার্ডে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয়েছে। ফলে ওয়ার্ড দু’টি লকডাউন করে চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেন কর্তৃপক্ষ। এরপর পরিস্থিতি মূল্যায়ণ করে জেলা প্রশাসন বিকেলে যশোর জেলা লকডাউন ঘোষণা দেন। এই লকডাউন আজ ভোর ৬টা থেকে কার্যকরের নির্দেশ রয়েছে। লকডাউনের আদেশে জরুরি পরিসেবা ছাড়া সব কিছুই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যশোরে প্রবেশ বাহিরে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। একই সাথে মানুষকে ঘরে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আসলে ভয়ঙ্কর শত্রু করোনার হাত থেকে রক্ষার জন্য ঘরে থাকার কোন বিকল্প নেই। এ কারণে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশ সরকার দীর্ঘ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে।
২৫ মার্চ প্রথম ঘোষিত হয়েছিল করোনাজনিত ছুটি। প্রথম দফা ছুটি শেষ হওয়ার আগে ছুটি বাড়ানো হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে ছুটি বাড়িয়ে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটির মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছিল। দফায় দফায় যে ছুটি বাড়ানো হচ্ছে তা দেশের মানুষের স্বার্থেই, একথা বলাইবাহুল্য। সোজা কথায় জীবন বাঁচাতে ঘরে থাকার জন্য ছুটি বাড়ানো হয়েছে। যেহেতু করোনাকাল এখনও শেষ হয়নি। এই ছুটি মধুর ছুটি নয়, নয় অবকাশ যাপনের সুবর্ণ সুযোগ। এই ছুটির পরতে পরতে রয়েছে উৎকণ্ঠা, আতঙ্ক, দুশ্চিন্তা। আমরা আগেও বলেছি এই ছুটি সার্বণিকভাবে কর্তব্য পালনের ছুটি, এ অবকাশ দায়িত্বশীলতার। পরিবারের প্রতিটি সদস্যের মঙ্গল সাধনের জন্য প্রতিটি দিন সক্রিয়তার, সচেতনতার। অর্থাৎ ছুটিতে কাজ রয়েছে কিছু যা অবশ্য পালনীয়। প্রথম কাজ ঘরে থাকা এবং বার বার হাত ধোয়া। করোনার কোনরকম লণ প্রকাশ পেলে গণমাধ্যমে প্রতিদিন প্রচারিত ও প্রকাশিত নম্বরে ফোন করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপকে অবহিত করা। রোগ লুকিয়ে রাখা অনুচিত। তাতে আশপাশের মানুষ তথা সমাজ বিপদগ্রস্ত হতে পারে।
পরিবারের যিনি প্রধান তার দায়িত্ব বেশি। তিনি যথাযথ নির্দেশনা দেবেন পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে। তা অরে অরে পালন করতে হবে। আমরা যদি সতর্ক ও সচেতন থাকি, সুরামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করি, তাহলে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটি আমাদের তেমন তি করতে পারবে না। সকাল৬টার পর বাইরে বের হতেও নিষেধ করেছে প্রশাসন। এই নির্দেশ অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে মর্মে আদেশ জারি করা হয়েছে।
আমরা আগেও বলেছি, করোনা ছুটি এসেছে ভোগের জন্য নয়, দুঃসময়কে রুখে দেয়ার কৌশলের অংশ হিসেবে। কিছু কথা আমাদের পুনরাবৃত্তি করা তাই উপযোগী। দেশে মানুষ ঘরে অবস্থান করছে। কিন্তু অনেককে ঘরের বাইরেও যেতে হচ্ছে জরুরী প্রয়োজনে। সার্বণিকভাবে ঘরে থাকার জন্য মানুষের ওপর বন্দিত্বের অনুভূতিসহ নানা মনোস্তাত্ত্বিক চাপ আসাটা স্বাভাবিক। এ সময় তার করণীয় সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা চাই। নিজেকে বাঁচাতে হলে আমাদেরও কিছু ত্যাগ করতে হবে, সতর্ক ও সচেতন হতে হবে- এই বার্তা যেন সবার সামনে চলে এসেছে। এ মুহূর্তে গণমাধ্যম ঝুঁকি নিয়ে মানুষকে সচেতন করার দায়িত্ব পালন করছে। কয়েকটি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেই আমরা নিরাপদ থাকতে পারব। ঘোষিত লকডাউনে সবাই ঘরে থাকবেন নিজের ও পরিবারের সুরার স্বার্থে- এটাই প্রত্যাশিত। বাস্তবতা মেনে নিয়ে ঘরের বাইরে যাওয়া থেকে নিজেকে সংযত না করতে পারলে সমূহ বিপদ। তাই ঘরে অবস্থান করে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে আমরা করোনাকে ঠেকিয়ে দিতে পারব এ শুভবোধ জাগ্রত রেখে সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করার অনুরোধ রইল আমাদের। সেই সাথে প্রশাসনের কাছে দাবি এই লকডাউনে বেকার হওয়া সকল শ্রমজীবীর বাঁচার মতো খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা। আমরা এ প্রসঙ্গে কয়েকবার লিখেছি বিধায় নতুন কিছু না লিখে শুধু খাদ্যসামগ্রী পৌঁছানোর দাবিটাই রাখছি। আশা করি, জেলা প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্বের সাথে ভাববেন।