শ্রমিক কর্মচারীদের ঘরে ফেরান

0

একেবারেই অনাকাঙ্তি ঘটনা ঘটেছে গত বুধবার। রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিােভ করেছে। তারা রাস্তায় রাস্তায় অবরোধ গড়ে তোলে। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটিতে কারখানা মালিকরা বারবার মজুরি পরিশোধের নামে সময় বাড়িয়েছেন। কিন্তু বকেয়া মজুরি নিতে কারখানায় ঢুকতে গিয়ে শ্রমিকরা দেখছে, কারখানায় লে-অফ বা ছাঁটাইয়ের তালিকা ঝুলছে। এভাবে শ্রমিকরা বারবার প্রতারিত হচ্ছে। মূলত অনিশ্চিত অবস্থার কারণেই শ্রমিকদের পথে নামতে হয়েছে। কার্যত লকডাউন অবস্থা ভেঙে শ্রমিকরা রাস্তায় নামায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিও বেড়েছে। তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিক ও শ্রমিক নেতারা বলছেন, মজুরি কবে মিলবে তার নিশ্চয়তা না থাকায় উপায়হীন হয়ে তাঁরা রাস্তায় নেমেছেন। বিজিএমইএর সভাপতি বলেছেন, বিজিএমইএর সক্রিয় সদস্য কারখানাগুলোর মধ্যে ৭৮ শতাংশ কারখানা এরই মধ্যে বকেয়া মজুরি পরিশোধ করেছে। বৃহস্পতিবারের মধ্যে ৮০ শতাংশ কারখানার বকেয়া পরিশোধ হয়ে যাওয়ার কথা। প্রকাশিত আরেকটি খবরে বলা হচ্ছে, বিজিএমইএর তালিকার ৫০ শতাংশ পোশাক কারখানা শ্রমিকদের বেতন দেয়নি বলেই শ্রমিকরা পথে নামতে বাধ্য হয়েছে। করোনার এই সংকটে গার্মেন্ট শ্রমিকদের ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বাণিজ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন, আগামী ২২ এপ্রিলের মধ্যে শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য মজুরি পাবে।
করোনাভাইরাসের কারণে দেশে যে অবরুদ্ধ অবস্থা চলছে, তা থেকে শ্রমিকদের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কবে কারখানা খুলবে, সে নিশ্চয়তা নেই। আবার কারখানা খুললেও কাজ পাওয়া যাবে কি না, সেটিও অনিশ্চিত। অনেক ছোট ছোট কারখানা এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় শ্রমিকদের মধ্যে ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা দেখা দেওয়াটাই স্বাভাবিক। পোশাক কারখানার শ্রমিকরা থাকে ভাড়া বাসায়। পাড়ার মুদি দোকান থেকে বাকিতে জিনিসপত্র নেয় তারা। নির্দিষ্ট সময়ে দোকানের পাওনা ও বাড়িভাড়া পরিশোধ করা হয়। কিন্তু এবারের মতো অনিশ্চিত সময় আগে কখনো আসেনি। এখন কারখানায় কাজ নেই আবার বাড়িভাড়া ও দোকানের পাওনা পরিশোধের চাপ আছে। আর এ কারণেই করোনাভাইরাসের এই সময়ে সরকারের দেওয়া সাধারণ ছুটির মধ্যেও মজুরির জন্য শ্রমিকরা ঘর থেকে বের হয়ে এসেছে। এর ফলে সংক্রমণ বাড়লে তার দায় কার?
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার গার্মেন্ট কর্মচারী সংগঠন এক আবেদনে উল্লেখ করেছেন সরকার প্রদত্ত প্রনোদনায় শ্রমিকদের পাওনা পারিশোধের কথা বলেছে। বাদ দেয়া হয়েছে কর্মচারীদের। তাদেরকে কর্মকর্তাদের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ফলে, হাজার হাজার কর্মচারী মারাত্মক বঞ্চনার শিকার হয়েছে। তারা সরকারের কাছে প্রণোদনার সুবিধাভোগীদের তালিকায় শ্রমিকদের সাথে সাধারণ কর্মচারীদের তালিকাভুক্ত করার দাবি জানিয়েছে। আমরা মনে করি, কর্মচারীদের বাদ দেয়ার বিষয়টি অনিচ্ছাকৃত ভুল। এই ভুলটি সংশোধনের বহু পথ রয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্টরা ইচ্ছা করলেই এক প্রজ্ঞাপন বা সংশোধনীতে কর্মচারীদের যুক্ত করতে পারে। এতে কর্মচারীরা চরম ক্রান্তিকালে বঁ^াচার নিশ্চয়তা পাবে। এটা তাদের ন্যায্য দাবি। এ দাবি আদয়ে তারা শ্রমিকদের মতো মাঠে নেমে নতুন করে বিপদের কারণ হোক আমরা তা চাই না। আমরা চাই, শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি ও খাদ্যসামগ্রী দিয়ে ঘরে থাকার ব্যবস্থা করা জরুরি। আমরা আশা করব, গার্মেন্ট শ্রমিকদের বেতন দিয়ে দেওয়া হবে। তাদের অযথা হয়রানি করা হবে না।