ধর্ষকদের ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন

0

পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা বাংলাদেশের সহনশীল সমাজের পরিচয় যেন পাল্টে যাচ্ছে। মানবিক মূল্যবোধের অবয় চরমে। নৈতিকতা নির্বাসিতপ্রায়। নেই সামাজিক অনুশাসন। ভুল রাজনৈতিক মূল্যবোধের কারণেই কি সামাজিক অবয় বেড়েছে? আইন-শৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীর তৎপরতাও কি ভরসাযোগ্য? এসব প্রশ্ন আজ খুবই প্রাসঙ্গিক এ কারণেই যে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। ধর্ষণকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
সমাজে এমন কিছু ঘটনা ঘটছে সমাজকে আলোড়িত করে। যেমনটি ঘটেছে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ বা লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে। লজ্জাবনত দেশ প্রতিবাদে মুখর হলেও অনাচার তো থেমে নেই। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে, দিনাজপুরের পার্বতীপুরে এক অজ্ঞাতপরিচয় তরুণীর হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, তাঁকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। একই জেলার বিরলে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে এক যুবক এবং সিলেটে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রকে বলাৎকারের অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কুষ্টিয়ার মিরপুরে এক মাদরাসাছাত্রীকে দুই দফা ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন মাদরাসাটির সুপার। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে তিন বছরের শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাঙামাটির লংগদু উপজেলায় এক প্রধান শিকের বিরুদ্ধে ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। প্রকাশিত খবরগুলো প্রমাণ করছে সিলেট, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরের ঘটনায় সারা দেশে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে, তাতে নিপীড়কদের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। মানবাধিকার ও নারী অধিকার সংগঠনগুলোর দেওয়া তথ্য বলছে, প্রতিবছর বাড়ছে ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ৯৭৫ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছে, যেখানে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনাই ঘটেছে ২০৮টি। ধর্ষণের পর হত্যার শিকার ৪৩ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ১২ জন নারী আর ১৬১ জন নারী হয়েছেন যৌন হয়রানির শিকার। যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদ করতে গিয়ে অপরাধীদের হাতে তিনজন নারী ও ৯ জন পুরুষ খুন হয়েছেন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্য মতে, গত বছর ধর্ষণের শিকার হয়েছে মোট এক হাজার ৬০৭ জন। এর মধ্যে একক ধর্ষণের শিকার হয়েছে এক হাজার ৩৭০ জন এবং দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে ২৩৭ জন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৭৭ জনকে। ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা করেছে ১৯ জন।
মানবাধিকারকর্মী ও অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিপীড়করা ব্যাপক মতাধর। মতার বলয়ে থেকে অপরাধ কর্মকাণ্ড চালানোর ওপর নজরদারি করতে হবে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, নিপীড়নের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনায় দ্রুত বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীকে আরো তৎপর হতে হবে।