সাতক্ষীরা জেলায় করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতামূলক অভিযান

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ সাতক্ষীরা জেলার প্রতিটি উপজেলায় করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতামূলক অভিযান পরিচালনা করা হয়। প্রতিটি উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং সহকারী কমিশনারদের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং আনসারের সমন্বয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান ও সচেতনতা কাযক্রম অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া, তথ্য অধিদপ্তরের একটিসহ মোট ৩টি সচেতনতামূলক মাইকিং প্রতিনিয়ত করা হচ্ছে এবং শতভাগ হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকান ছাড়া অন্যসব দোকান বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকএস এম মোস্তফা কামাল স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য উঠে এসেছে।প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানা গেছে, দেশের কয়েকটি জেলায় করোনা রোগী সনাক্ত হওয়ায় ও বিভিন্ন জেলা লক ডাউন ঘোষণার প্রেক্ষিতে ঐ সকল জেলাতে কর্মরত লোকজন নিজ নিজ জেলায় ফিরতে চেষ্টা করছে। এর প্রেক্ষিতে সাতক্ষীরা জেলাতে সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় ২ হাজারের মত মানুষ অন্য জেলা থেকে এসেছে। এর মধ্যে নারায়নগঞ্জ থেকে আগত ৮ জনকে দেবহাটা উপজেলায় বাড়িতে কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে। কালিগঞ্জ উপজেলায় ৩৯১ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। আশাশুনি উপজেলায় ১০২ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে এবং ৫৫০ জনকে বাড়িতে কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা হয়েছে। বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ১০০ জনকে বড়দল ইউনিয়নে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে। শ্যামনগর উপজেলায় ২৮৭ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে, ১৫০০ জনকে বাড়িতে কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা হয়েছে। এখনও যারা কোয়ারেন্টিনের বাহিরে আছে তাদেরকে চেকপোস্ট বসিয়ে কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে। তদুপরি, এ জেলাকে করোনা ঝুঁকি মুক্ত রাখতে জেলার সাথে পার্শ্ববর্তী জেলার সকল সীমান্ত এবং আন্ত: উপজেলা সীমান্ত জরুরী সেবা ব্যতীত (যেমনঃ রোগীবাহী গাড়ী, ঔষধ পণ্যবাহী গাড়ী ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মালামালবাহী গাড়ী) সকল প্রকার যানবাহন ও জনচলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ আদেশ বহাল থাকবে। অমান্যকারীর বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।সাতক্ষীরা শহরে এবং প্রতিটি উপজেলায় রাস্তায় রাস্তায় জীবাণু নাশক স্প্রে করা হচ্ছে। মেশিনের মাধ্যমে রাস্তায় পানি ছিটানো অব্যাহত আছে। জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় ১০০০ লিটারের ২টি পানির ট্যাংকের মাধ্যমে প্রতিদিন জীবানু নাশক স্প্রে করা হচ্ছে। গত ৬ এপ্রিল,২০২০ তারিখে ভারত থেকে থেকে আসার জন্য ১৩ জনকে সাতক্ষীরা যুব ভবনে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসক সার্বক্ষণিক তাদের খোজখবর নিচ্ছেন। জেলা প্রশাসন থেকে তাদের খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করা হচ্ছে। সাতক্ষীরা থেকে করোনা টেস্টের জন্য এ পর্যন্ত ১২০ জনের নমুনা পাঠানো হয়েছে। ৯ জনের রিপোর্ট পাওয়া গেছে। আশার কথা হলো সবাই করোনা নেগেটিভ। গত সাত দিনে ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, মাদারিপুর ও শরিয়তপুর থেকে ৩ হাজারের মত মানুষ সাতক্ষীরাতে এসেছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের তথ্যমতে এর মধ্যে ৭০৪ জন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এবং বাকিরা নিজ বাড়িতে হোম কোয়ারিন্টাইনে রয়েছেন। আমাদের তথ্যমতে, আজও সাতক্ষীরায় মানুষ ফিরছে। এ সকল মানুষকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন ও হোম কোয়ারেন্টাইন এর জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের নির্দেশ দেয়া হয়েছেপ্রতিটি উপজেলায় ইউনিয়ন ভিত্তিক দুস্থ ও সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের বাহিরে থাকা গরীব মানুষের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্যসামগ্রী পৌছে দেয়া হচ্ছে। ত্রাণসামগ্রী বিতরণের ক্ষেত্রে নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয় থেকে পাওয়া মোট বরাদ্দ থেকে ইতোমধ্যে উপজেলা, পৌরসভার অনুকূলে ৬০০ টন চাল এবং ২০ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌরসভার মেয়রগণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মাধ্যমে তালিকা প্রস্তুত করে এই ত্রাণ সহায়তা কর্মহীন হয়ে পড়া দুস্থ অসহায় মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে উপজেলা ও পৌরসভার ৪২,৫০০ পরিবারের মাঝে সরকারি ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। সাতক্ষীরা জেলায় হিজড়া জনগোষ্ঠীর ৭০ জন সদস্যের মধ্যে ১০ কেজি চাল, ৫ কেজি আলু, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি লবন, ১ লিটার তৈল এবং একটি সাবানের প্যাকেজ সমাজ কল্যাণ তহবিল হতে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া, শিশু খাদ্যের জন্য সরকারের দেয়া ৪ লক্ষ টাকায় উপজেলায় এবং পৌরসভার অনুকূলে উপবরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সকল সরকারি ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে সকলকে ব্যাগের গায়ে “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক খাদ্য সহায়তা” কতাটি লিখে দিতে হবে।

করোনা পরিস্থিতিতে বিভিন্ন শেণি-পেশার মানুষ যারা ওয়ার্ড-ইউনিয়ন পর্যায়ে তালিকাভুক্ত হতে সংকোচবোধ করছে কিন্তু খাদ্য সংকট আছেন তাদের নাম, ঠিকানা এবং মোবাইল নাম্বারসহ এসএমএস এর মাধ্যমে সংগ্রহ করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসক নিজে তাদের সাথে যোগাযোগ করছেন। রাতে গোপনে তাদের বাড়িতে খাদ্যসামগ্রী পৌছে দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত এ ধরনের ৩১৫ ব্যক্তিকে সরকারী ত্রাণ সহায়তা তাদের সামাজিক মর্যাদা রক্ষা করে বিতরণ করা হয়েছে। প্রতিদিন এ কার্যক্রম চলছে। উপজেলায় বিতরণের জন্য সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২ লক্ষ টাকার মাস্ক ক্রয় করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩১৪০০ মাস্ক মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ডাক্তার, মেডিকেল স্টাফ এবং নার্সদের চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক গাড়ি সরবরাহ করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় একটি করে এম্বুলেন্স সার্বক্ষণিক রাখা হয়েছে। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৮৫০ টি পিপিই মজুত রয়েছে। এবং সিভিল সার্জন, সাতক্ষীরা ১০০০ পিপিই প্রতিটি উপজেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্য কম্প্লেক্সে বিতরণ করেছেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ এবং ব্যাটালিয়ন আনসার এর সহযোগিতায় ২০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিদিন জেলা এবং উপজেলাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবং হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিতকরন ও অভ্যিান অব্যাহত রয়েছে। জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন অভিযানে সর্বশেষ তথ্যমতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৪ টি মামলায় ৭৭৩০০ টাকা জরিমানাও আদায় করা হয়। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ১৭ টি মামলায় ১১৭০০ টাকা, তালা উপজেলায় ৩ টি মামলায় ২৫০০ টাকা, কালিগঞ্জ উপজেলায় ২ টি মামলায় ৩৬০০ টাকা, শ্যামনগর উপজেলায় ৮ টি মামলায় ৩৮,০০০ টাকা, দেবহাটা উপজেলায় ৪ টি মামলায় ১৮৫০০ টাকা, আশাশুনি ৮ টি মামলায় ২৬০০ টাকা, কলারোয়া উপজেলায় ২ টি মামলায় ৪০০ টাকা। মসজিদে নামাজ ও জামায়াতের বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা সর্বসাধারণের মধ্যে প্রচারের জন্য উপপরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সাতক্ষীরাকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রচারনা চালাচ্ছে।
এখন পর্যন্ত, করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবে সংকটকালীন সময়ে বাস- মালিক সমিতির শ্রমিকদের মাঝে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল হতে ১৭৯ জনকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকল পরিবহন শ্রমিকদের সহায়তা প্রদান করা হবে। এছাড়া, সাতক্ষীরা শহরে ২০৭ জন চা বিক্রেতা ও ভ্যান চালকের মধ্যে সরকারি ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক জেলার জনপ্রতিনিধি মাননীয় সংসদ সদস্যবর্গের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে জেলার পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে আলোচনা এবং পরামর্শ গ্রহণ করে করোনা মোকাবেলায় সর্বাত্মক কর্মসূচী বাস্তবাযন করে চলেছেন। এছাড়া, জেলা সদরের সিনিয়র সিটিজেনদের সাথে নিয়মিত ফোনে খোঁজ নিচ্ছেন এবং তাদেরকে ঘরের বাইরে না যেতে বিশেষ অনুরোধ করছেন। সরকারি ত্রাণের তালিকা এবং বিতরণে অনিয়ম স্বজনপ্রীতি ও দূর্ণীতি হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং দুর্নীতি দমন আইনে মামলা করা হবে। এছাড়া, দোকান খুলে দেয়ার কথা বলে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী দোকানদারদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঘরে থাকুন, বার বার সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন, নিরাপদে থাকুন। আপনি ঘরে থাকলে ভালো থাকবে আপনার পরিবার, ভালো থাকবে জাতি, ভালো থাকবে দেশ।