আজ পবিত্র শবে বরাত

0

মুফতি মো. হাফিজুর রহমান ॥ মুসলমানদের সৌভাগ্যের রজনী পবিত্র শবে বরাত আজ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে এই রাত অতিবাহিত করবেন। মহিমান্বিত এ রজনীতে মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশ্বের মুসলমানরা বিশেষ মুনাজাত ও দোয়া করবেন। সৌভাগ্যের এ রজনীতে সারা দেশে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মুসলমান নামাজ ছাড়াও নফল রোজা রাখেন। তবে বৈশি^ক করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টির অংশ হিসেবে ইসলামি ফাউন্ডেশনের নির্দেশনায় শবে বরাতের রাতে মসজিদের পরিবর্তে বাড়িতে ইবাদত-বন্দেগি চলবে। শবে বরাত কথাটি ফার্সি আর লাইলাতুল বারাআত কথাটি আরবি শব বা লাইলাতুন শব্দের অর্থ রাত আর বারাআত অর্থ মুক্তি। অতএব শবে বরাত বা লাইলাতুল বারাআত এর অর্থ হল মুক্তির রাত। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ রাতে বান্দাদেরকে ডেকে ডেকে বলতে থাকেন, যারা পাপ থেকে মুক্তি চাওয়ার আছ মুক্তি চাও, আমি মুক্তি দিয়ে দেব। যারা অভাব-অনটন থেকে মুক্তি চাওয়ার আছ মুক্তি চাও, আমি মুক্তি দিয়ে দেব। যারা রোগ-শোকগ্রস্ত আছ, মুক্তি চাও, আমি মুক্তি দিয়ে দেব।
এ ভাবে আল্লাহপাক পাপ, অভাব-অনটন, রোগ-শোক ইত্যাদি থেকে এ রাতে মুক্তি দিয়ে থাকেন। তাই এ রাতকে লাইলাতুল বারাআত বা মুক্তির রাত বলা হয়। অনেকে এ রাতকে ভাগ্য রজনী বলে থাকেন কিন্তু এ কথাটা সঠিক নয়। শবে বরাত কথাটা সঠিক অর্থ হল মুক্তির রাত ভাগ্য রজনী নয়। ভাগ্য রজনী হল শবে কদর। শবে বরাত একটি মর্যাদাপূর্ণ রাত। হানাফি, শাফিয়ী, মালেকি, হাম্বলি চার মাজহাবের ইমামগণের নিকটেই এ রাত ফজিলতপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ বলে স্বীকৃত। নির্ভরযোগ্য হাদীস দ্বারা এ রাতের মর্যাদা ফজিলত প্রমাণিত। এ রাতের ফজিলত সম্পর্কে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে – হযরত মু‘আয ইবনে জাবাল (রা.) হতে বর্ণিত নবী করীম (স.) ইরশাদ করেছেন : আল্লাহ তা‘আলা মধ্য শা‘বানের রাতে ( অর্থাৎ শবে বরাতে) তার সমস্ত সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ ভাবাপন্ন ব্যক্তি ব্যতীত সকলকে ক্ষমা করে দেন। ( ইবনে মাজাহ, সহীহ ইবনে হিব্বান, তাবারানী ) শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে হাদীস শরীফে আরও বর্ণিত হয়েছে – হজরত আলী (রা.) বলেন, রসূলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন : যখন মধ্য শা‘বানের রাত হয় (অর্থাৎ ১৪ তারিখ দিবাগত রাত), তখন তোমরা সে রাত জাগরণ কর এবং পরের দিন রোজা রাখ। কারণ ওই দিন সূর্যাস্তের পর মহান আল্লাহ পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন, কোনো ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব। কোন রিজিক অনুসন্ধানকারী আছে কি? আমি তাকে রিজিক প্রদান করব। কোনো দুর্দশাগ্রস্ত ব্যক্তি আছে কি? আমি তাকে মুক্ত করব। এ ভাবে আল্লাহপাক এক একটা বিষয়ের উল্লেখ করে করে বলতে থাকেন : অমুকটা চাওয়ার আছো চাও, আমি দিয়ে দব।
এ ভাবে সুবেহ সাদেক পযর্ন্ত অর্থাৎ ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার আগ পযর্ন্ত মহান আল্লাহ বিভিন্ন বিষয়ের উল্লেখ করে মানুষকে ডেকে ডেকে চাইতে বলেন। ( ইবনে মাজাহ, শুআবুল ঈমান ) এ রাতের মর্যাদা সম্পর্কে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে – হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, এক রাতে রসূলুল্লাহ (স.) কে না পেয়ে খুঁজতে বের হলাম। খুঁজতে খুঁজতে জান্নাতুল বাকিতে ( অর্থাৎ মদীনার কবরস্থানে ) গিয়ে আমি তাকে পেলাম। তিনি বলেন, কি ব্যাপার আয়েশা ! তোমার কি মনে হয় আল্লাহ ও তাঁর রসূল তোমার ওপর কোনো অবিচার করবেন? হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি মনে করেছি আপনি অন্য কোনো স্ত্রীর কাছে গিয়ে থাকবেন। তখন রসূলুল্লাহ (স.) বললেন, যখন মধ্য শা‘বানের রাত আসে ( অর্থাৎ শবে বরাত আসে ) মহান আল্লাহ এ রাতে প্রথম আসমানে নেমে আসেন। অতঃপর বনু কাল্ব গোত্রের বকরির পশমের চেয়ে বেশি সংখ্যক বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দেন। ( তিরমিযী, শরহুস্ সুন্নাহ্ ) উল্লিখিত হাদীসসমূহ থেকে জানা গেল যে, এ রাতে আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দাদেরকে ক্ষমা করে থাকেন। রিজিক দান করেন। বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিকে মুক্তি দেন। আল্লাহপাক তাঁর বান্দাগণের প্রতি বিশেষ রহমতের দৃষ্টি দেন। ইত্যাদি। অতএব শবে বরাত উপলক্ষে হাদীসের আলোকে আমাদের করণীয় হলো, এ রাতে নফল ইবাদত করা। পরের দিন রোজা রাখা। এ রাতে সব কিছুর জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা, বিশেষ ভাবে গোনাহর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা। আড়ম্বর ব্যতীত কবরস্থানে গিয়ে কবর জিয়ারত করা, বা অন্য কোনভাবে মৃতদের জন্য ঈসালে সওয়াব করা।