যশোরে আরও ১২৯ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে ভাইরাস না পাওয়ায় ১২ জনকে ছাড়পত্র

0

বিএম আসাদ ॥ যশোরে করোনাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে গত ২৪ ঘন্টায় আরও ১২৯ জনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। গত ১০ মার্চ থেকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয় ৩শ’ ২৩ জন। ১২ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। তাদের শরীরে কোন ভাইরাস পাওয়া যায়নি। এদিকে, করোনা প্রতিরোধে গতকাল যশোর সার্কিট হাউজে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় নানা পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গত ১৫ দিনে বিদেশ থেকে প্রায় ২৪ হাজার লোক যশোরে ফিরে এসেছে। বেলা ১১টার দিকে যশোর সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ জেলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। কমিটির সভাপতি যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেলে যশোরে সেনাবাহিনী সমন্বিতভাবে কাজ করবে। বিদেশ ফেরত লোকজনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়া এবং করোনাভাইরাস প্রতিরোধে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রচারণা চালানো হবে।
ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে চেয়ারম্যান, মেম্বার, পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর, পুলিশ, স্বাস্থ্যকর্মী ও পরিবার-পরিকল্পনা বিভাগের কর্মীরা সমন্বিতভাবে কাজ করবে। বিদেশ ফেরত লোকজনের তালিকা ও কোয়ারেন্টাইনে রাখতে তারা প্রশাসনের সাথে সহযোগিতা করবেন। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সমন্বিত কমিটি গঠন করা হবে। গত ১০ মার্চ থেকে ১৮ মার্চ পর্যন্ত ১৫ দিনে যশোর জেলায় পাসপোর্টধারী ২৩ হাজার ৩শ’ ৯৪ জন বিদেশ থেকে ফেরত এসেছেন। তারা কোয়ারেন্টাইনের নিয়মাবলী মানছেন না। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এছাড়া কেশবপুরে আসরে উপ-নির্বাচন ও বাস যাত্রীদের চলাচল নিয়ে সভায় আলোচনা হয়।
সভায় করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব ডা. শেখ আবু শাহীন, যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায়, যশোর সিএমএইচ-এর স্বাস্থ্য আই স্পেশালিষ্ট মেজর রেজওয়ান আহমেদ, এডিএম মুহাম্মদ আবুল লাইছ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল, মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু, এডিসি (শিক্ষা ও আইসিটি) শাম্মী ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, এডিশনাল এসপি মো. সালাহউদ্দিন আহমেদ, যশোর প্রেসকাবের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ফ্রান্সিস ডি কস্তাসহ উপজেলা স্বাস্থ্য প্রকল্প কর্মকর্তা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও সাংবাদিকবৃন্দ সভায় উপস্থিত ছিলেন। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে স্ব-স্ব অবস্থান থেকে সকলে সচেতনতা সৃষ্টির ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেন।
এদিকে, যশোর সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানিয়েছেন, অভয়নগর উপজেলায় ২৪ ঘন্টায় ২৫ জন, অধ্যাবধি ৩৭ জন, বাঘারপাড়ায় ২৪ ঘন্টায় ৩ জন, অদ্যাবধি ৪ জন, চৌগাছায় ২৪ ঘন্টায় ৬ জন, অদ্যাবধি ১৮ জন, যশোর সদরে ২৪ ঘন্টায় ৯৩ জন, অদ্যাবধি ২শ’ ১২ জন, মনিরামপুরে ২৪ ঘন্টায় ২ জন অদ্যাবধি ২৬ জন, ঝিকরগাছায় অদ্যাবধি ১৪ জন, কেশবপুরে অদ্যাবধি ৭ জন ও শার্শা উপজেলায় ১৭ জন মিলে ৩শ’ ৩৫ জন কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এর ভেতর অভয়নগরে ৩ জন ও চৌগাছায় ৯ জন মিলে ১২ জনকে কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। এখন জেলায় মোট ৩শ’ ২৩ জন কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। এদিকে, যশোর জেলার ৮টি উপজেলায় গত ৩ মার্চ থেকে ১৮ মার্চ পর্যন্ত ১৫ দিনে ২৩ হাজার ৩৯ জন বিদেশ থেকে এসেছেন। এদের ভেতর অভয়নগর উপজেলায় ৩ হাজার ৭শ’ ৯ জন, বাঘারপাড়া উপজেলায় ১ হাজার ৩শ’ ৫৯ জন, চৌগাছা উপজেলায় ৮শ’ ৬০ জন, ঝিকরগাছা উপজেলায় ২ হাজার ২শ’ ৩১ জন, কেশবপুর উপজেলায় ১ হাজার ১শ’ ২ জন, মনিরামপুর উপজেলায় ২ হাজার ২শ’ ৫৫ জন, যশোর সদর উপজেলায় ৯ হাজার ৪শ’ ৮ জন ও শার্শা উপজেলায় ২ হাজার ৪শ’ ৭০ জন। ঢাকা হতে যশোর জেলা প্রশাসনে এ তথ্য দেয়া হয়েছে বলে জেলা প্রশাসক সভায় জানিয়েছেন। তাদেরকে কোয়ারেন্টাইনের নিয়মাবলী মেনে চলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সিভিল সার্জন জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তাদের জন্য ৬টি আইসিইউ বেড, ৪শ’ ৫০টি চিকিৎসাধীন থাকার বেড ও ৪৫টি আইসোলেশন ওয়ার্ড করা হয়েছে। প্রত্যেক উপজেলায় ৫টি করে আইসোলেশন ওয়ার্ড করা হয়েছে।