দুই যুগেও হেক্টরপ্রতি ফলন ৫ কেজিতে ওঠেনি

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ আবহাওয়াগত কারণে জাফরান উৎপাদনে কাশ্মীর একেবারে স্বয়ংসম্পূর্ণ। একই কারণে অঞ্চলটিতে অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় উন্নতমানের জাফরান উৎপাদিত হয়। ফলে কাশ্মীরে উৎপাদিত জাফরানের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বিশ্ববাজারে। তবে সমস্যা হচ্ছে অঞ্চলটিতে মূল্যবান মসলাপণ্যটির হেক্টরপ্রতি ফলন একেবারেই নগণ্য। গত দুই যুগের মধ্যে কোনোবারেই কাশ্মীরের মাটিতে প্রতি হেক্টরে পাঁচ কেজি জাফরান উৎপাদিত হয়নি। ফলন কম হওয়ায় পণ্যটির আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ইরানসহ অন্যান্য শীর্ষ উৎপাদনকারী দেশের সঙ্গে কাশ্মীরের টিকে থাকা বেশ মুশকিল হয়ে পড়েছে।
খাতসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, কৃষকদের যথাযথ জ্ঞানের অভাব ও পুরনো চাষ পদ্ধতি কাশ্মীরে জাফরানের ফলন কম হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ। এছাড়া কয়েক বছর ধরে অঞ্চলটির আবহাওয়া ব্যাপক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টির অভাবে তাপমাত্রা ক্রমেই বাড়ছে, যা পণ্যটির ফলন কমে যাওয়ার পেছনে অন্যতম প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে। এছাড়া কাশ্মীরের এ ঐতিহ্যবাহী খাতটি রক্ষায় সরকারের প্রণোদনারও যথেষ্ট অভাব রয়েছে বলে মনে করেন অনেকেই।
কাশ্মীরের কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৬ সালে কাশ্মীরে সব মিলিয়ে ১৫ দশমিক ৯৫ টন জাফরান উৎপাদন হয়েছিল। দুই যুগের ব্যবধানে ২০১৯ সালে অঞ্চলটিতে মূল্যবান মসলাপণ্যটির উৎপাদন কমে ১৫ দশমিক ১৩৩ টনে নেমেছে। এ যুগের মধ্যে কোনো বছরই অঞ্চলটিতে পণ্যটির হেক্টরপ্রতি ফলন পাঁচ কেজি ছুঁতে পারেনি। উপরন্তু এ সময়ের মধ্যে কাশ্মীরে পণ্যটির ফলন হেক্টরপ্রতি গড়ে দশমিক শূন্য ৯৫ শতাংশ কমেছে।
তবে খাতটি রক্ষায় সরকার যে একেবারেই কোনো পদক্ষেপ নেয়নি তা নয়। ২০০৭ সালে খাতটি রক্ষায় তত্কালীন জম্বু ও কাশ্মীর সরকার স্যাফোর্ন অ্যাক্ট-২০০৭ প্রণয়ন করে। এ আইনে জাফরান খামারগুলোয় বাণিজ্যিক প্লটে রূপান্তরকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ ঘোষণা করা হয় এবং লঙ্ঘনকারীদের ওপর ১০ হাজার রুপি জরিমানা ও এক বছরের কারাদণ্ডের বিধান আরোপ করে।
ওই বছর কাশ্মীর জাফরান খাতে রেকর্ড গড়ে। ২০০৭ সালে অঞ্চলটির ৩ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে জাফরানের চাষ হয়, হেক্টরপ্রতি উৎপাদন দাঁড়ায় ২ দশমিক ৩৪ কেজিতে এবং মসলাটির মোট উৎপাদন ৭ দশমিক ৭০ টনে গিয়ে পৌঁছায়।
এর পরের বছর কাশ্মীরে জাফরানের আবাদি জমির পরিমাণ বেড়ে ৩ হাজার ৭১৫ হেক্টরে উন্নীত হয়, যা এখনো স্থির রয়েছে। পণ্যটির উৎপাদন বাড়তে বাড়তে ডাবল ডিজিট ছুঁয়েছে।
তবে বন্যার কারণে ২০১৪ সালে অঞ্চলটির জাফরান উৎপাদনে ধস নামে। এ সময় কাশ্মীরে পণ্যটির উৎপাদন কমে আগের বছরের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশে নেমে আসে। এর পরের দুই বছর চাঙ্গা ভাবের পর ফের মন্দায় পড়ে খাতটি। অপ্রত্যাশিত বৃষ্টি ও তুষারপাতের কবলে পড়ে ২০১৭ ও ২০১৮ সালে কাশ্মীরে যথাক্রমে ৫ দশমিক ২ ও ৫ দশমিক ৬৫৩ টন জাফরান উৎপাদন হয়। তবে গত বছর ফের পণ্যটির উৎপাদন বেড়ে ১৫ টন ছাড়িয়ে গেছে। সূত্র: ইন্ডিয়াস্পেন্ড