ভরা মৌসুমেও চালের কেজিতে বাড়ল ৪ টাকা,বেড়েছে মুরগি ও ডিমের দাম

0

শেখ আব্দুল্লাহ হুসাইন ।।  ভরা মৌসুমেও যশোরে চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে। বেড়েছে খামারের মুরগি ২০ টাকা ও ডিমে ২ টাকা। গ্রীষ্মকালীন সবজির দামও চড়া। এ সপ্তাহেও বাড়তি দামেই অপরিবর্তিত রয়েছে আলু, পেঁয়াজ ও গরুর মাংস। গতকাল শুক্রবার শহরের বড় বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
বোরো ধানের ভরা মৌসুমে বাজারে চালের দাম কমার পরিবর্তে প্রতি কেজিতে ২ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। যশোর চাল বাজার সমিতির সভাপতি সুশীল কুমার বিশ^াস জানান, হাট-বাজারে নতুন ধান ওঠার সাথে সাথে বড় বড় মিল মালিকরা কিনে নিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া ধণাঢ্য ব্যক্তিরাও হাট থেকে প্রচুর ধান কিনে মজুত করছেন। এ কারণে হাট-বাজারে ধানের দাম বেশি।
গতকাল শুক্রবার বড় বাজার চাল বাজারে বাংলামতি চাল মানভেদে বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৭৬ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৭০ থেকে ৭২ টাকা। মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬২ টাকা, গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৫৬ থেকে ৬০ টাকা। কাজললতা বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৫৮ টাকা, গত সপ্তাহে ছিল ৪৯ থেকে ৫২ টাকা। সুবললতা বিক্রি হয়েছে ৫৮ টাকা, গত সপ্তাহে ছিল ৫৬ টাকা। বিআর-২৮ ধানের চাল বিক্রি হয়েছে ৫৬ টাকা, গত সপ্তাহে ছিল ৫২ থেকে ৫৪ টাকা। তাছাড়া গতকাল বিআর-৬৩ ধানের চাল বিক্রি হয়েছে ৬৪ থেকে ৬৮ টাকা, বিআর-৪৯ ধানের চাল বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা, নূরজাহান বিক্রি হয়েছে ৪৭/৪৮ টাকা।
বড় বাজারে এ সপ্তাহে খামারের মুরগি ও ডিম বেশি দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে। গতকাল শুক্রবার বিক্রেতা তানবীর ব্রয়লার হাইজের স্বত্বাধিকারী ইমরান হোসেন জানান, খামারিরা বলছেন মুরগির খাবারের দাম বেশি , তাছাড়া উৎপাদনও কমে গেছে, এ কারণে তারা চাহিদা অনুযায়ী মুরগি সরবরাহ করতে পারছে না। তাই মুরগির দাম বেড়ে গেছে। গতকাল তিনি ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ২৩০ টাকায় বিক্রি করেছেন, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ২১০ টাকায়। সোনালি মুরগির দামও এ সপ্তাহে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩৭০ টাকায়। লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৬০/৩৭০ টাকা।
বাজারে খামারের মুরগির দাম বাড়ার সাথে ডিমের দামও এ সপ্তাহে প্রতি পিস বেড়েছে ২ টাকা। গতকাল শুক্রবার বড় বাজারের খুচরা ডিম বিক্রেতা গোলাম মোস্তফা বাবলা জানান, তিনি বৃহস্পতিবার থেকে খামারের মুরগির ডিম প্রতি পিস বিক্রি করছেন ১২ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১০ টাকা। তিনি জানান খামারিদের কাছ থেকেই তিনি পাইকারি ডিম প্রতি পিস ১১ টাকা ২০ পয়সায় কিনেছেন। তাছাড়া বড় বাজার কাঠেরপুলে গরুর মাংসের দামও বিক্রেতারা ৭৫০ টাকা কেজিতে ওঠানোর পর আর কমাননি।
বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজি এখনও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। বড় বাজারের কাঁচামাল আড়তদার মনিরামপুর ভা-ারের অন্যতম স্বত্বাধিকারী জহিরুদ্দিন কাজল জানান, সম্প্রতি তীব্র খরার কারণে সবজির ফলন মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরবরাহ কমে গেছে। এ কারণে বাজারে দামও চড়া।
গতকাল শুক্রবার বড় বাজারে খুচরা বিক্রেতা নাসির আলী মানভেদে সজনে ডাটা বিক্রি করেছেন ১২০ থেকে ১৮০ টাকা, গত সপ্তাহে ছিল ১১০ থেকে ১৪০ টাকা। বরবটি বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা, গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। উচ্ছে বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা, করলা ৪৫ থেকে ৬০ টাকা, টমেটো ৩০ থেকে ৪০ টাকা, পটল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, গাজর ৭০ টাকা, পেঁপে ৬০ টাকা। বেগুন বিক্রি করেছেন ৪৫ টাকা থেকে ৮০ টাকা, গত সপ্তাহে ছিল ভালো মানেরটা ৬০ টাকা। ঝিঙে বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা।
এদিকে বড় বাজারে আলু প্রতি কেজি ৫০ টাকা ও পেঁয়াজ ৭০ টাকা দামে এ সপ্তাহেও বিক্রি করতে দেখা যায়। খুচরা বিক্রেতা জয়দেব সাহা জানান, তাদের আড়ত থেকে বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। বড় বাজার কালীবাড়ি মার্কেটের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী ‘নিতাই গৌর ভা-ারের’ অন্যতম স্বত্বাধিকারী বাগান চন্দ্র সাহা জানান, পেঁয়াজের আমদানি ভালো। তবে হাটে দাম বেশি। তিনি গতকাল শুক্রবার প্রতি কেজি পেঁয়াজ মানভেদে ৬০ টাকা থেকে ৬২ টাকায় বিক্রি করেছেন।
গতকাল শুক্রবার ক্রেতা শহরের চুড়িপট্টির বাসিন্দা শেখ আসাফ উদ দৌলাহ তুহিন জানান, খামারের মুরগির দাম বাড়তি থাকায় তার চাহিদার এক কেজির পরিবর্তে তুলনামূলক ছোট সাইজের মুরগি কিনে খরচ পোষাতে হয়েছে। তাছাড়া তিনি সব ধরনের পণ্যের দাম চড়া থাকায় অসন্তষ্টি প্রকাশ করে সরকারের বাজার তদারকি সংস্থাগুলোর গাফিলতিকেই দায়ী করেছেন।