প্রসঙ্গ ঃ গরিবের গড় আয়ুর বৈষম্য

0

সব সমাজেই ধনী-গরিবের পার্থক্য রয়েছে। তকে তা সহনীয় রাখার দায় যাদের তারা কতটা আন্তরিক এ বিষয়ে তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। সরকারের দাবি , বাংলাদেশ উন্নয়ন যাত্রায় এগিয়ে চলেছে লণীয় গতিতে। একইভাবে কী বাড়ছে মানুষের জীবনমান? দৃশ্যত মনে হতে পারে, কেউ কষ্টে নেই কিংবা না খেয়ে নেই। কিন্তু উদরপূর্তিই জীবনের একমাত্র ল নয়। উদরপূর্তির পাশাপাশি তা যেন স্বাস্থ্য রায় ভূমিকা রাখে সেটিও নিশ্চিত হওয়া উচিত। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি আমাদের সমাজে অধিকাংশ মানুষেরই স্বাস্থ্য রা নিশ্চিত করার সুযোগ নেই। কারণ একদিকে খাদ্যে রয়েছে নানা ধরনের ভেজাল অন্যদিকে রয়েছে পুষ্টিমান সমৃদ্ধ খাবার কেনায় আর্থিক অমতা।
সম্প্রতি একটি দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, উচ্চ আয়ের মানুষদের তুলনায় গড় আয়ুতে পিছিয়ে আছে নিম্ন আয়ের মানুষেরা। একটি শিশু নিম্ন আয়ের পরিবারে জন্ম নিলে তার গড় আয়ু হয় ৫৯ বছর। আর উচ্চ আয়ের ঘরে জন্ম নিলে তার গড় আয়ু হয় ৭৮ বছর। এই দুই ধরনের পরিবারে জন্ম নেয়া মানুষের গড় আয়ুর মধ্যে পার্থক্য ১৯ বছর। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলে রাজধানীর একটি হোটেলে জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থা (ইউএনডিপি) একটি বাংলা ফন্ট উদ্বোধন করে। এ সময় বাংলা ভাষার প্রতি সম্মান জানিয়ে সংস্থাটি তাদের গত বছরের (২০১৯) মানব উন্নয়ন রিপোর্টের সার সংপে বাংলায় প্রকাশ করে। ওই রিপোর্টে এসব তথ্য জানানো হয়। জীবন-মৃত্যু, জ্ঞান-সুযোগ এবং জীবন-পরিবর্তনীয় প্রযুক্তির েেত্র অসমতা থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে। তথ্যটি নিঃসন্দেহে বিষাদময়।
ইউএনডিপির প্রতিবেদনে অনুযায়ী, বর্তমান সময় মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে উল্লেখযোগ্য সফলতা প্রত্য করছে। অভূতপূর্ব সংখ্যক মানুষ সারা বিশ্বে বুভুু, ব্যাধি এবং দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেয়ে ন্যূনতম জীবনধারণের ঊর্ধ্বে উঠতে পেরেছে। এই উন্নয়ন সূচক নির্দেশ করে যে, প্রত্যাশিত আয়ের েেত্র মূলত শিশুমৃত্যুর হার হ্রাসের েেত্র প্রভূত উন্নতি হয়েছে। কিন্তু এতে বহু মানুষকে পেছনে ফেলে আসা হয়েছে এবং সব সমতার েেত্র বহু অসমতাও রয়েছে। এই অসমতাগুলো জীবন-মৃত্যু, জ্ঞান-সুযোগ এবং জীবন-পরিবর্তনীয় প্রযুক্তির েেত্র বিরাজমান।
সমাজে সবাই সমান সুযোগ সুবিধা নিয়ে বসবাস করবে এমনটি হয়ত আশা করাও ঠিক না। তবে যেখানে স্বাস্থ্যরায় প্রশ্ন জড়িত সেখানে রাষ্ট্র কর্তৃক এমন ব্যবস্থা নেয়া উচিত যাতে নিম্ন আয়ের মানুষেরও পুষ্টি চাহিদাপূরণ কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয়। কারণ নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তি সবার অধিকার। এছাড়া ধনী-গরিব নির্বিশেষে পাঁচটি অধিকার সমভাবে ভোগ করার অধিকার রাষ্ট্রের সব নাগরিকের সমান। আমাদের সংবিধান তাই বলে। একটি কথা মনে রাখতে হবে যে, রাষ্ট্রের উন্নয়ন যাত্রায় সমাজের গরিব জনগোষ্ঠী যে কায়িক শ্রম বিনিয়োগ করে এর অবদান হেলা করার নয়। সে েেত্রও তাদের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিমান সমৃদ্ধ খাবার নিশ্চিত করার দায় রাষ্ট্রের রয়েছে। প্রতিবেদনের একটি তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য হলো-নিম্ন আয়ের ঘরে একটি শিশু জন্মালে তার গড় আয়ু হয় ৫৯ বছর। আর উচ্চ আয়ের ঘরে জন্মালে ওই শিশুর গড় আয়ু বেড়ে দাঁড়ায় ৭৮ বছর। অর্থাৎ জন্ম থেকেই নিম্ন ও উচ্চ আয়ের মধ্যে বৈষম্য শুরু হয়। মানবিক কারণেই এটি মেনে নেয়া কঠিন। তবে আমরা বিশ্বাস করি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ এবং ভেজালমুক্ত খাদ্য নিশ্চিত করা সম্ভব হলে আয়ুজনিত এই বৈষম্য কমে আসবে। সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত কার্যকর পদপে গ্রহণ করবে এটিই আমাদের প্রত্যাশা।