দিল্লির সহিংসতায় নিহত বেড়ে ২০

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) নিয়ে টানা চতুর্থ দিনের সহিংসতায় ভারতের রাজধানী দিল্লিতে নিহত বেড়ে ২০ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছে দুই শতাধিক। এই সময় আরও জানিয়েছে, দিল্লির মৌজপুর, ব্রহ্মপুরী, ভজনপুরা চক, গোকুলপুরীসহ বিভিন্ন এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বুধবার এক টুইটে বলেছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা মোতায়েন করা উচিত। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লিখবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। কেজরিওয়াল আরও লিখেন, পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক। চেষ্টা সত্ত্বেও পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং আস্থা ফেরাতে ব্যর্থ হয়েছে। সেনা মোতায়েন এবং আক্রান্ত বাকি এলাকাগুলোতে কারফিউ জারি করা প্রয়োজন।
এদিকে মঙ্গলবার রাতে সহিংসতাপ্রবণ এলাকা পরিদর্শন করেছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। তিনি পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। দিল্লির মৌজপুর, জাফরাবাদ, কারওয়ালনগরে ও চাঁদবাগে কারফিউ জারি করা হয়েছে। এসব এলাকায় দাঙ্গাকারীদের ‘শুট অ্যাট সাইট তথা দেখা মাত্র গুলির’ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জাফরাবাদ, মৌজপুর-বাবারপুর, গোকুলপুরি, শিব বিহার ও জোহরি এনক্লেভ মেট্রো স্টেশনের গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সেখানে কোনো ট্রেন দাঁড়বে না। ওই এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে। দিল্লির আরও ১০ জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, ‘হিন্দুয়োঁ কা হিন্দুস্তান’, ‘জয় শ্রীরাম’- এসব স্লোগান দিয়ে সংখ্যালঘু মুসলিমদের বাড়িঘর, দোকানপাট ও মসজিদে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
ভারতের সহিংসতা নিয়ে বিবিসির খবরে বলা হয়, ভারতের রাজধানী দিল্লিতে সহিংসতার তৃতীয় রাতেও বেশীরভাগ ঘটনায় মুসলিমদের বাড়িঘর ও দোকানপাটে হামলার খবর পাওয়া গেছে। গত এক দশকের মধ্যে চলমান ঘটনাবলীকে ভারতে সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। দেশটির বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের পক্ষ ও বিপক্ষ গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের সূচনা হয়েছিলো রোববার, যা পরে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় রূপ নেয় বলে জানান সংবাদদাতারা। ওদিকে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় এবং জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার শিক্ষার্থীরা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বাড়ির সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করেছে মঙ্গলবার রাতেই। তবে পুলিশ জলকামান দিয়ে রাত সাড়ে তিনটা নাগাদ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ওদিকে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পুলিশ ও অন্য কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেছেন। এ বৈঠকে মঙ্গলবারই স্পেশাল পুলিশ কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পাওয়া এসএন শ্রীবাস্তবও যোগ দিয়েছেন। তবে সহিংসতার ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে এখন তীব্র সমালোচনাও হচ্ছে বলে জানান শুভজ্যোতি ঘোষ। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে বিবিসি সংবাদদাতারা বলেন, সংঘর্ষকারীদের কারও কারও হাতে বন্দুক দেখা গেছে। সহিংসতা হয়েছে মূলত উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে। এসব এলাকার সড়কগুলো এখন অনেকটা ধ্বংসস্তূপের মতো রূপ নিয়েছে, রাস্তায় পুড়ছে যানবাহন, উড়ছে ধোঁয়া – বলেন বিবিসি হিন্দির সংবাদদাতা ফয়সাল মোহাম্মদ আলী। হামলার মুখে অনেকেই বাড়ি ঘর ছাড়ছেন। তিনি আংশিক পুড়ে যাওয়া মসজিদ দেখেছেন, যেখানে মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কুরআনের পাতা। আরেকটি মসজিদেও হামলা হয়েছে মঙ্গলবার বিকেলে। ব্যাপক প্রচার হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে একদল লোক মসজিদের মিনারে উঠছেন। সাংবাদিকসহ অনেকেই টুইট করেছেন এই বলে যে হামলাকারীরা তাদের ধর্মীয় পরিচয় সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। একজন ফটো সাংবাদিক বলেছেন, তাকে তার প্যান্ট খুলে ধর্মীয় পরিচয় নিশ্চিত করতে বলা হয়েছিল।