এমন মর্মান্তিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন আর না ঘটে

0

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে গত শুক্রবার সারাদেশে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভের সময় ঢাকাসহ চট্টগ্রামের হাটহাজারি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুলিশ এবং বহিরাগতদের সাথে বিক্ষোভকারিদের ত্রিমুখী সংঘর্ষে প্রাণহানির মতো মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। পুলিশের গুলিতে হাটহাজারিতে চারজন ও ব্রহ্মণবাড়িয়ায় একজন নিহত হয়। কর্তব্যরত সাংবাদিকসহ প্রায় ১৫০ জন আহত হয়। জুমার নামাজের পর থেকে বিকাল পর্যন্ত এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভকারিরা মোদিবিরোধী শ্লোগান দিয়ে মিছিল-সমাবেশ শুরু করতে চাইলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। এ থেকেই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পুলিশ ও বিক্ষোভকারিদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় বহিরাগতরা যুক্ত হলে তা ব্যাপক সহিংস রূপ লাভ করে এবং আহত-নিহতের ঘটনা ঘটে। পুলিশ বলেছে, বিক্ষোভকারিরা আগে হামলা করলে আত্মরক্ষার্থে তারা পাল্টা গুলি চালায়। বিক্ষোভকারি নেতৃবৃন্দ বলেছেন, পুলিশ শান্তিপূর্ণ মিছিলে বিনা উস্কানিতে গুলি করেছে। আমরা মনে করি, পারস্পরিক দোষারোপ নয়, পুলিশের গুলি করা এবং বিক্ষোভকারিদের সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনার চিত্র তুলে ধরা হোক।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন আমাদের দেশ ও জাতির জন্য অত্যন্ত গৌরবের বিষয়। উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ইতোমধ্যে মালদ্বীপ ও নেপালের প্রেসিডেন্ট এবং শ্রীলঙ্কা ও ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করেছেন। প্রভাশালী দেশসহ বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধান ভিডিও বার্তায় বক্তব্য দিয়েছেন। সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যোগ দেয়ার বিষয়টি পূর্বনির্ধারিত। তবে অন্য রাষ্ট্র এবং সরকার প্রধানের ক্ষেত্রে কারো আপত্তি ও বিরোধিতা না থাকলেও নরেন্দ্র মোদির ক্ষেত্রে আপত্তি ও বিরোধিতা আগে থেকে ছিল। এ নিয়ে বিক্ষোভকারিরা মোদিবিরোধী কর্মসূচি পালন করে আসছে। এ প্রেক্ষাপটে, সরকারের তরফ থেকে নরেন্দ্র মোদির সার্বিক নিরাপত্তা জোরদারের সকল ব্যবস্থা নেয়া হয়। তার সফরের মধ্যেই অনাকাক্সিক্ষত সংঘর্ষ এবং আহত-নিহত হওয়ার মতো দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটে। বলার অপেক্ষা রাখে না, যেকোনো দেশে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের সফর সে দেশের জন্য সম্মানের বিষয়। তারা সম্মানিত মেহমান। মেহমানের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদান এবং সম্মান প্রদর্শন করা মেজবান রাষ্ট্রের অপরিহার্য দায়িত্ব ও কর্তব্য। সাধারণত এ নিয়ে সফরকারি মেহমানকে ওই দেশের মানুষও সাদর সম্ভাষণ জানায়। তবে সরকার প্রধানের সফরের বিরোধিতা যে হয় না, তা নয়। বিশ্বে এমন অনেক নজির রয়েছে। যা হোক, সরকার নরেন্দ্র মোদির নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে। সারাদেশেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী সজাগ ও সতর্ক ছিল। তার মধ্যেও বিক্ষোভে গুলির ঘটনা কিভাবে ঘটল সেটাই প্রশ্ন। আমাদের দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আগে থেকে ধরেই নেয় বিক্ষোভ কর্মসূচি মানেই সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটবে। বিক্ষোভকারিদের মধ্যেও এ প্রবণতা বিদ্যমান, মিছিল-সমাবেশ করতে গেলে ভাংচুর ও সংঘাতে লিপ্ত হতে হবে। এরূপ অনুমান ও মনোভাব সংঘাতের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। অথচ বিক্ষোভকারিদের উচিৎ শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কর্মসূচি পালন করা। অন্যদিকে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে বিঘ্নিত না হয়, তা নিশ্চিত করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব। মোদির সফরকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভকারিদের আগের কর্মসূচিগুলো শান্তিপূর্ণভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। গত শুক্রবার কর্মসূচি সহিংস হয়ে উঠার ক্ষেত্রে তৃতীয়পক্ষ হিসেবে বহিরাগতদের হামলা মূল অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে বলে পর্যবেক্ষরা মনে করছেন। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অধিক সতর্ক হওয়া বাঞ্চনীয় ছিল। সংঘাতের সূত্রপাত হলেই গুলি করতে হবে এমন মনোভাবের পরিবর্তে অন্য কোনো উপায়ে সংঘর্ষ নিবৃত করা যেত কিনা, তা নিয়ে ভাবার অবকাশ ছিল। বলা বাহুল্য, সংঘাত নিয়ন্ত্রণের সর্বশেষ ধাপ গুলি করা। তার আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীকে বিক্ষোভকারিদের মিছিল-সমাবেশে যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, তৃতীয় কোনো পক্ষ যুক্ত না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। কোনো কারণে উত্তপ্ত পরিবেশ বা সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে, এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীকে ধৈর্য ও সহনশীলতার পরাকাষ্টা দেখাতে হয়। এক্ষেত্রে যে ব্যতিক্রম হয়েছে, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। নরেন্দ্র মোদির সফর নিয়ে বিক্ষোভ দমনে পুলিশের গুলি ও বহিরাগতদের হামলা এবং তাতে আহত-নিহত হওয়ার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। এ নিয়ে সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, বিক্ষোভ দমনে পুলিশের গুলি করার মতো পরিস্থিতি এড়ানো যেত কিনা? পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ভিন্ন কৌশল অবলম্বন এবং তাদের আরও ধৈর্য ও সহনশীল অবস্থান নেয়া সম্ভব ছিল কিনা? মাদরাসা ছাত্র বলেই গুলি করা কিংবা তাদের উপর অধিক চড়াও হওয়া উচিৎ কিনা? আমরা মনে করি, উদ্ভুত ঘটনা কেন ও কি কারণে সৃষ্টি হলো, তার সঠিক ও যথোপযুক্ত তদন্ত হওয়া উচিৎ। আমরা আশা করি, নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত পরিস্থিতির উদ্ঘাটন এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, এ ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে।