ই-পাসপোর্ট চালু হোক সব অফিসে

0

সাবেক আমলের কাগুজে পাসপোর্ট থেকে এমআরপি বা মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের প্রচলন শুরু হয়েছিল ৮ বছর আগে। ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপায়ণের হাত ধরে এমআরপি থেকে এখন ই-পাসপোর্ট যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশে। আরো এক বছর আগেই ই-পাসপোর্ট চালুর পরিকল্পনা থাকলেও অবশেষে গত বুধবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ই-পাসপোর্ট প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ওইদিন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই প্রকল্পের উদ্বোধনের সময় প্রকল্প কর্মকর্তারা প্রথমেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তাঁর ই-পাসপোর্ট তুলে দেন। প্রধানমন্ত্রী ই-পাসপোর্ট প্রকল্পকে মুজিব বর্ষের উপহার এবং জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে মাইলফলক বলে উল্লেখ করেছেন। দণি এশিয়ায় বাংলাদেশই প্রথম ই-পাসপোর্ট শুরু করল। ভারত-পাকিস্তানসহ সার্কভুক্ত কোনো দেশেই এখনো ই-পাসপোর্ট শুরু হয়নি। পাসপোর্ট নিয়ে নানা ধরণের হয়রানি জালিয়াতি এবং বিদেশে প্রবাসী কর্মীদের নানা ধরনের ভোগান্তির বিষয় নতুন করে উল্লেখের প্রয়োজন নেই। জাল পাসপোর্ট, গলাকাটা পাসপোর্টে বিদেশে যাওয়ার পর পুলিশের হাতে ধরা পড়ে আটক হওয়া বা শূন্যহাতে দেশে ফেরত আসার দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা এমআরপি’ হওয়ার পর অনেকটা কমে আসলেও এমআরপিতে কিছু অনিবার্য দুর্বলতা থাকায় বিদেশে বাংলাদেশিদের পাসপোর্ট সংক্রান্ত জটিলতা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। এহেন বাস্তবতায় ই-পাসপোর্ট প্রকল্প নতুন আশার আলো সঞ্চার করেছে।
প্রায় এককোটি প্রবাসী কর্মী আমাদের রেমিটেন্স যোদ্ধা। এই রেমিটেন্স যোদ্ধারাই দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির পথে অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছেন। কিন্তু বিদেশের মাটিতে তাদের বিড়ম্বনা, অবমাননা এবং বঞ্চনার ধারাবাহিক ইতিহাস আমাদেরকে ব্যথিত ও হতাশ করে। পাসপোর্ট জালিয়াতির মাধ্যমে অবৈধ অনুপ্রবেশ বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন দেশের এয়ারপোর্টে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারিদেরকে অশেষ বিড়ম্বনা ও লজ্জাজনক অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়। ই-পাসপোর্ট সেই সব জালিয়াতি, বিড়ম্বনা ও আস্থার সংকট অনেকটাই দূর করবে বলে আশা করা যায়। সেই সাথে দেশের পাসপোর্ট অফিসগুলোতে পাসপোর্ট পেতে অস্বাভাবিক সময় পেণ, বিড়ম্বনা, দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা, অতিরিক্ত খরচ ইত্যাদি অনাকাঙ্খিত বাস্তবতা থেকেও মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। ই-পাসপোর্ট বিদেশে বাংলাদেশি পাসপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা ও নিরাপত্তা বাড়াবে এবং বিদেশ ভ্রমণে ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়াকে সহজতর করবে বলে আমরা আশা করি।
অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন প্রক্রিয়া এবং এমআরপি চালুর পাশাপাশি কিছু সময়োপযোগী পদপে গ্রহণের মধ্য দিয়ে পাসপোর্ট অফিসগুলোকে ঘিরে দালাল চক্রের তৎপরতা অনেকটাই কমে এসেছে। তবে পাসপোর্ট পেতে অনাকাঙ্খিত বিড়ম্বনা এখনো পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। সম্প্রতি একটি পত্রিকা লিখেছে, কাগজপত্র জমা দেয়ার পর ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে সউদিগামী অনেকে পাসপোর্ট পাচ্ছেন না। এখনো অতিরিক্ত খরচে দালালের মাধ্যমে জরুরি পাসপোর্ট পাওয়া অপোকৃত সহজ বলে জানাচ্ছেন ভুক্তভোগিরা। প্রথমে ঢাকার আগারগাঁও ও কেন্দ্রীয় পাসপোর্ট অফিসসহ উত্তরা, যাত্রাবাড়ি-কেরানিগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসকে ই-পাসপোর্ট সরবরাহের আওতায় আনা হয়েছে। আমরা মনে করি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশের সব পাসপোর্ট অফিস ও বিদেশের অফিসগুলোকে ই-পাসপোর্টের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সেই সাথে পাসপোর্ট অধিদফতর, ইমিগ্রেশন অফিসসহ সংশ্লিষ্ট সব দফতরের কর্মকর্তাদের ই-পাসপোর্ট যাচাই ও পর্যবেণের উপযোগী করে তুলতে হবে। এ েেত্র প্রযুক্তিগত উন্নয়নসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিণ ও দতা নিশ্চিত করতে হবে। ই-পাসপোর্ট চালুর মধ্য দিয়ে অতীতের বিড়ম্বনা, অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতি বন্ধ হবে বলে আমরা আশাবাদি।