আগে ফোরজি সেবা নিশ্চিত করতে হবে

0

সরকার গ্রাহকদের ফাইভজি সেবা প্রদানের জন্য পদপে নিয়েছে। দেশে প্রথমবারের মতো ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ ফাইভজি প্রযুক্তির বিভিন্ন দিক প্রদর্শন করেছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তফা জব্বার মেলা উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে জানান, মেলার বড় বিশেষত্ব হচ্ছে, দর্শকরা স্বচে ফাইভজি দেখবেন, ব্যবহার করবেন, নিজেদের হাতে নিয়ে দেখে বুঝতে পারবেন ফাইভজি কী জিনিস। ফাইভজির সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য প্রযুক্তিগুলো প্রদর্শিত হবে।তিন দিনের মেলায় এসবই হয়েছে। বলার অপো রাখে না, ডিজিটাল প্রযুক্তির নিত্যনতুন উদ্ভাবন পৃথিবীকে বদলে দিচ্ছে। প্রযুক্তির নতুন প্রজন্মের উদ্ভাবন উন্নতর সেবা নিশ্চিত করছে। মানুষের জীবনব্যবস্থা সহজ ও দ্রুতায়িত করছে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে ফোরজি থেকে ফাইভজি সেবা দেয়ার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। কারণ, আমরা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সমান তালে সামনে এগিয়ে যেতে চাই। প্রশ্ন উঠতে পারে, ফোরজি সেবা কি দেশে নিশ্চিত হয়েছে এবং মানুষ কি ফোরজি সেবা ভোগ করতে পারছে? এ প্রশ্নের উত্তর নেতিবাচক এবং হতাশাজনক। বিটিআরসি ও অপারেটরদের কাছে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটগ্রাহকদের যে বিপুল সংখ্যক অভিযোগ জমা পড়েছে এবং প্রতিনিয়ত পড়ছে, তা থেকে বুঝা যায়, অধিকাংশ গ্রাহক প্রতিশ্রুত সেবা পাচ্ছেন না। অভিযোগে প্রকাশ, ফোরজি সেবা কিনে গ্রাহকরা টুজির সেবাও পাচ্ছেন না। ইন্টারনেটে ধীর গতি, ফোনের কল ড্রপ, মিউট কলের উপদ্রব ইত্যাদিতে তারা বিরক্ত ও ুব্ধ। নি¤œসেবার কারণে মন্ত্রী-এমপিরাও ােভ প্রকাশ করছেন। বিটিআরসির জরিপেও দেখা গেছে, ফোরজি সেবায় মানসম্পন্ন যে গতিসীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে তিন অপারেটর: গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক। কোনো অপারেটরই নির্ধারিত গতিসীমার ধারে কাছে নেই। কল সেটআপেও ব্যর্থতার বৃত্তে রয়েছে তিন অপারেটর: গ্রামীণফোন, বাংলালিংক ও টেলিটক। আর কল ড্রপে বেঞ্চমার্কে নেই গ্রামীণফোন। খোদ রাজধানীতে ফোরজি সেবা থেকে বঞ্চিত গ্রাহকরা। জেলা, উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে এই সেবার অবস্থা কী, তা সহজেই অনুমেয়। বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কিছুদিন আগে জানিয়েছিলেন, ৯০ শতাংশ গ্রাহক এখনো ফোরজি সেবা গ্রহণই করেনি। তার মতে, ফাইভজির ডিভাইস দেশে পর্যাপ্ত নয়; দামও খুব বেশি। নেটওয়ার্কব্যবস্থা খুবই দুর্বল। এখন পর্যন্ত অপারেটারদের স্পেকট্রাম আছে ৩৫ মেগাহার্জ। অথচ ফাইভজিতে থাকতে হবে প্রায় ১০০ মেগাহার্জ। এই যদি অবস্থা, তবে তড়িঘড়ি করে ফাইভজি সেবা দেয়ার পদপে কেন?
যেখানে ফোরজি সেবার স্থলে টুজির সেবাও গ্রাহকরা পাচ্ছেন না, সেখানে ফাইভজি সেবা দেয়ার পদপে কতটা যুক্তিসঙ্গত, সে প্রশ্ন উঠতেই পারে। অনেকেরই জানা, মতাসীন দলের নির্বাচনী ইশতেহারে ২০২১-২৩ সালের মধ্যে ফাইভজি সেবা দেয়ার প্রতিশ্রুতি আছে। নির্বাচনী ইশতেহারে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি থাকলে তা পূরণ করার নৈতিক বাধ্যবাধকতা থাকে। এ েেত্রও তার ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়। কিন্তু এ জন্য অবশ্যই উপযুক্ত সামর্থ ও অনুকূল বাস্তবতা বিদ্যমান থাকতে হবে। সেটা কি আছে? নেই যে, সেটা তো বুঝাই যাচ্ছে। শুধু ‘প্রচারে থাকা’ কিংবা ‘কৃতিত্ব জাহির’ করার জন্য এটা করতে হবে, তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এজন্য সময় এবং ভালোভাবে প্রস্তুতি গ্রহণের সুযোগ নেয়া প্রয়োজন ছিল। নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে যায়নি। যথেষ্ট সময় রয়েছে। লোক দেখানোর জন্য চটজলটি তাই কিছু করা সমীচীন নয়। এতে জনগণের কোনো লাভ হয় না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ ফাইভজি সেবা পেয়ে উপকৃত হয়েছে। তাদের উন্নয়ন, অগ্রগতি, জীবনযাত্রার মান ও গতি বেড়েছে। আমরা যতদূর জেনেছি, ফাইভজি সেবা নেটওয়ার্কমতাকে অনেক বাড়িয়ে দেয়। এই প্রযুক্তির একটি বড় সেবা হলো, আইওটি, যেখানে যন্ত্র থেকে যন্ত্রে যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসগুলোকে গ্রাহক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। উন্নত ও বাড়তি সুবিধার জন্য এই প্রযুক্তিকে গ্রাহকদের স্বাগত জানানোর কথা। কিন্তু আমাদের দেশের গ্রহাকরা এই সেবাসুবিধা গ্রহণ ও পাওয়ার েেত্র নিঃসংশয় হতে পারছেন না। যেমনটা ফোরজির েেত্র দেখা গেছে: গ্রাহকদের অনেকেই সেটা গ্রহণ করতে পারেননি। আবার যাদের তা দেয়ার কথা, তারাও দিতে পারেনি। ফাইভজির েেত্রও যদি এরকমই হয়। তবে সেটা এক ধরনের প্রতারণার শামিল বলে গণ্য হবে। আমরা এই ধরনের প্রতারণার অভিযোগ থেকে সরকারকে মুক্ত দেখতে চাই। যে কারণে ফাইভজি চালু করার আগে ফোরজি সেবা নিশ্চিত করার দাবি জানাই। আশা করিন, যেনযেতনভাবে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষার গল্প তৈরির চেয়ে জনগণের প্রাপ্য সেবা নিশ্চিতে সরকার অধিক গুরুত্ব দেবে।